অক্টোবর ০১, ২০১৮ ১৯:৪৭ Asia/Dhaka

ভার্চুয়াল জগত: সম্ভাবনা ও শঙ্কা শীর্ষক ধারাবাহিকের আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা গত কয়েকটি আসরে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছি।

এর ভালো-মন্দ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছি। তরুণ-তরুণীদের মাঝে ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরণ ও প্রবণতা নিয়ে কথা বলেছি। আজ আমরা শিক্ষা ও গবেষণায় ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের প্রভাব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।   

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অপর প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান আগের চেয়ে অনেক সহজ করে দিয়েছেএর ফলে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।  এক দেশের ছাত্র-শিক্ষকরা ভার্চুয়াল জগতের কল্যাণে সহজেই অপর দেশের ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছেন এবং শিক্ষা ও গবেষণায় সহযোগিতা করতে পারছেন। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগের পাশাপাশি  উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সরাসরি উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যও আগে যে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতো ইন্টারনেটের কল্যাণে তা অনেকটাই সহজ হয়েছে। ভিন্ন দেশেরখ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এখন ইন্টারনেট। বিশ্বের যে কোন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য চোখের নিমিষে সংগ্রহ করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজে জড়িত শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য যে কোন তথ্য নিজ দেশে খুঁজে না পেলে, সে তথ্য ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের লাইব্রেরি বা ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে খুঁজে বের করছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবই নির্ভর হলে হয় না। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও জ্ঞান-
বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের বই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া কখনো কোন পাঠ্যবই হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে তা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়। প্রায় সব দেশই তাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইগুলোকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপলোড করছে এবং শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনমতো তা ডাউনলোড করে নিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে এ কারণে ঘরে বসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে পারছে। এ জন্য বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। এছাড়া দেশের ভেতরে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আবেদনসহ যাবতীয় কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায়বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলও ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের আরেকটি বিস্তৃত অবদান হল ই-ল্যার্নিংয়ের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে অবস্থান না করেও শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলি সরাসরি দেখাসহ তাতে অংশগ্রহণ করা যায়। শুধু ক্লাসের শিক্ষক-ছাত্রদের দেখা বা তাদের কথা শোনা নয়, একইসঙ্গে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও শিক্ষককে প্রশ্ন করার সুযোগও রয়েছে অনলাইন ক্লাসে। ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করলেও কপিরাইটকে দুর্বল করে দিয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে অহরহই কপিরাইট লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। কপিরাইট বলতে সাধারণত কপি করার অধিকারকে বোঝায়। নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য কারো ইনটেকলেচুয়াল প্রোপার্টি যেমন নিবন্ধ, বই, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, চিত্রকলা ইত্যাদি কপি করার অধিকার শুধুমাত্র তার নিজের। তবে এই অধিকার সে হস্তান্তর করতে পারে। কপিরাইট লঙ্ঘন বলতে বোঝানো হয়, অনুমতি ছাড়া অন্যের ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি পুনরুৎপাদন, অভিযোজন, প্রকাশ, বিক্রয়, ভাড়া, আমদানি অথবা এমন কিছু করা যাতে প্রোপার্টির প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়।  

বর্তমানে ইন্টারনেটে গান,চলচ্চিত্র,বই ইত্যাদি ফ্রি ডাউনলোডের ফলে ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টির প্রকৃত স্বত্বাধিকারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান যুগে সৃজনশীলতার পেছনে অর্থনৈতিক বিষয়াদিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।   তবে ইন্টারনেটে কপিরাইট মেনে না চলাই যেন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ বিষয়ে আইন প্রনয়ণ করা হলেও তা খুব একটা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।  একজন উদ্ভাবক, একজন লেখক বা একজন নির্মাতা তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যখন কিছু তৈরি করেন তখন সেই উদ্ভাবন,বই বা নাটক-সিনেমার প্রতি তার দাবি ও অধিকারকে সম্মান জানানো সবারই দায়িত্ব। মেধা ও শ্রমের জন্য মর্যাদার পাশাপাশি আর্থিক সুবিধাও সে প্রত্যাশা করতেই পারে। যারা তার উদ্ভাবন, লেখা ও নির্মাণ সামগ্রী থেকে লাভবান হবেন তারা সেটার প্রতিদান দেবেন এটাই কাম্য। ভার্চুয়াল জগতেও এ বিষয়টির দিকে সবারই খেয়াল রাখতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন