অক্টোবর ১৫, ২০১৮ ২০:৪৬ Asia/Dhaka

যে কোনো ব্যক্তি চাইলেই ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু এই জগতে নিরাপদ থাকতে প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য কিছু সাধারণ জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ জরুরি।

কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে,কীভাবে ব্যবহার করলে নিরাপদ থাকা যাবে,অন্যকে নিরাপদ থাকতে কীভাবে উৎসাহিত করা যাবে-সবারই এসব  বিষয়ে কৌশল জানা থাকা দরকার। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোতে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের বড় একটা অংশই এখনও প্রযুক্তি সম্পর্কে ততোটা জ্ঞান রাখেন না। ফলে বিভিন্ন সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যক্তি বিশেষকে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টির কারণে শাস্তির মুখেও পড়তে হচ্ছে।

ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিজ্ঞান কম থাকায় সাধারণ ব্যবহারকারীদেরকে বিপদে ফেলছে সুযোগসন্ধানীরা। বিশেষকরে ফেইসবুকের মতো সামাজি যোাগাযোগ মাধ্যমকে কেন্দ্র করে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্ম হচ্ছে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার মতো ঘটনা অহরহই ঘটছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব। অনলাইনে কী করা উচিত,আর কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে একদমই সচেতন নন অনেকেই। মানুষ সচেতন নয় বলেতো আর ইন্টারনেটের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ ভার্চুয়াল জগত ছাড়া বাস্তব জগত এখন কল্পনা করা কঠিন। ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে তা মানব সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কখনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না।

বর্তমানে অনেকেই ইন্টারনেটে যেসব কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার একটি বড় কারণ হচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন এবং মানুষের অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞতা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার। এটি প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি মর্যাদার সঙ্গে জড়িত। গোপনীয়তার অধিকারকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের আইনেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক আইনতো রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী,গোপনীয়তার অধিকার হলো অবিচ্ছেদ্য এবং সর্বজনীন একটি মানবাধিকার,যা মানুষ তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সহজাতভাবে অর্জন করে। তাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার মানুষের জীবন ধারণের অধিকারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। একজন ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই অন্য কারো ছবি ও ভিডিও কোথাও ব্যবহার করতে পারে না। এটা অন্যায়। একজন ব্যক্তি তার ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে রাজি নাও থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।

অনেকেই অনুমতি না নিয়ে অন্যের ছবি তোলেন অথবা ভিডিও করেন। এটাও ঠিক নয়। নিয়ম হলো কারো চিত্র ধারণ করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি নিয়ে নেয়া এবং ছবিটি কী কাজে ব্যবহৃত হবে তা তাকে বুঝিয়ে বলা। তবে প্রতারণার মাধ্যমে বা ভুল বুঝিয়ে কারো সম্মতি নিলেও আইনগতভাবে সে সম্মতির কোন দাম নেই। কোন জায়গায় সিসিটিভি কার্যকর থাকলে সেখানে অবশ্যই দৃশ্যমান স্থানে এবং স্পষ্ট ভাষায় লিখিত নোটিশের মাধ্যমে আগন্তুকদের এ বিষয়ে সতর্ক করা উচিত। এর ব্যতিক্রম হলে সিসিটিভি  স্থাপনকারীর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। যেসব স্থানে স্বাভাবিকভাবেই গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা যেমন টয়লেট,গোসলখানা,পোশাক পরিবর্তনের স্থান,হোটেল বা বিশ্রামাগারের শয়নকক্ষ,চিকিৎসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে যেখানে গোপনীয়তা বজায় রাখা আবশ্যক,সেখানে কোন অবস্থাতেই এ ধরনের কোন গোপন ক্যামেরা চালানো যাবেনা,প্রকাশ করাতো দূরের কথা।

তবে ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগত যেহেতু কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখা মেনে চলে না তাই এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ নিয়ে জটিলতার শেষ নেই। এ কারণে এসব ক্ষেত্রে যারা অপরাধ করছে তারা অনেক ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে আইনের বিষয়টি ছাড়াও কিছু বিশ্বাসের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা জরুরি।ডাক্তার-রোগী,আইনজীবী-মক্কেল,ছাত্র-শিক্ষক,ব্যাংক-গ্রাহক ইত্যাদি আস্থার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গোপন বিষয়াবলী অবশ্যই রক্ষা করতে হবে এবং তা কোনক্রমেই অনুমতি ব্যতীত কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা। এমনকি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবেও ব্যবহার কারা যাবেনা।

শুধু সাধারণ মানুষ নন অনেক শিক্ষিত মানুষও অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কী ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য কোন পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে প্রকাশ করা যেতে পারে তা অনেক সাংবাদিকও জানেন না।  অনেকে জানেন না, কোন তথ্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আইনের আওতায় পড়ে এবং তা লঙ্ঘন করলে কী ধরণের ঝামেলা হতে পারে। অনেক সময় অনেকেই জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ও ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করে দিচ্ছেন যা আইনের দিক থেকে এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এসব বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৫

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন