মে ০৫, ২০১৯ ১৮:৪৪ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের ৭২ তম সুরা তথা সুরা জিন মক্কায় নাজিল হয়েছিল। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ২৮।

জিন নামক অদৃশ্য এক বিশেষ সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে এ সুরায়। জিনদের একটি দল বিশ্বনবী (সা)’র প্রতি তাঁর যুগেই ঈমান এনেছিল। জিনদের মধ্যে কাফিরও রয়েছে। সুরা জিনের ২৮টি আয়াতের মধ্যে ১৯ আয়াতেই বক্তব্য রয়েছে জিন সম্পর্কে। এইসব আয়াত জিন সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা বা কুসংস্কার দূর করে। একত্ববাদ বা তাওহিদ,পরকাল এবং অদৃশ্যের জ্ঞান সম্পর্কেও বক্তব্য রয়েছে এ সুরায়।

 

সুরা জিনের বক্তব্যের আলোকে জানা যায় জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছিল মানুষ সৃষ্টিরও আগে এবং তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। জিনদের রয়েছে কথা বলার, শোনার ও যুক্তি তুলে ধরার তথা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি। অন্য কথায় তাদের রয়েছে বিবেক,অনুভূতি,জ্ঞান ও উপলব্ধির শক্তি। মানুষের মতই তারা  ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে পারে নানা বিষয়ে। মানুষের মত তাদেরও রয়েছে পথ ও মত বেছে নেয়ার স্বাধীনতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের গুরুভার থেকে তারাও মুক্ত নয়।  তাই জিনদের মধ্যেও রয়েছে মুমিন বা বিশ্বাসী ও কাফির বা পথভ্রষ্ট শ্রেণী। অর্থাৎ চিন্তা ও বিশ্বাসের দিক থেকে নানা মাজহাব বা গ্রুপ ও ফের্কার অনুসরণ তাদের মধ্যেও দেখা যায়।

 

পবিত্র কুরআন মানুষের মত জিনদের জন্যও সুপথ-প্রাপ্তির আসমানি তথা খোদায়ি গাইড। পবিত্র কুরআন ছাড়াও অতীতের আসমানি কিতাবগুলোও নাজিল হয়েছিল মানুষ ও জিন উভয়ের উদ্দেশে। তবে কুরআন ছাড়া অন্য সব ধর্ম-গ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে। জিনরা মানুষের অনেক কাজে বা তাদের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে সক্ষম। পবিত্র কুরআনের আয়াত থেকে বোঝা যায় মানুষ জিনের চেয়েও উচ্চ পর্যায়ের সৃষ্টি। কারণ মহান আল্লাহর সব নবী-রাসুল মনোনীত হয়েছেন মানুষের মধ্য থেকে এবং জিনরা ইসলামের মহানবীর (সা) প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্য করেছেন যদিও মহানবী (সা) জিন সম্প্রদায়ভুক্ত নন বরং মানুষ।

জিন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল বা অযৌক্তিক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণা দেখা যায়। যেমন, জিনদের আকার-আকৃতি খুবই অদ্ভুত ও ভয়ংকর বা তারা খুবই হিংস্র হয়ে থাকে ইত্যাদি। আসলে কুরআনে জিন সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছে তার বাইরে জিনদের প্রকৃতি ও জীবন-যাপনের ধরণ সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না।  মানুষ জিনসহ অদৃশ্য নানা অস্তিত্ব যেমন, মানুষের আত্মার প্রকৃতি ও রহস্যও জানে না। মানুষ এমনকি নানা ধরনের রং ও শব্দ বা ধ্বনিরও অনেক কিছুই দেখতে ও শুনতে পায় না।

সুরা জিনের শানে নজুল বা এ সুরা অবতীর্ণ হওয়ার পটভূমি সম্পর্কে বলা হয় ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে,রাসূল (সা.) রিসালাতের মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার পর জিন সম্প্রদায়ের ঊর্ধজগতে গমন বন্ধ হয়ে যায়। উর্ধ্ব-আকাশে তারা যেত নানা গোপন তথ্য সংগ্রহের বা গোপন সংবাদ শ্রবণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু উর্ধ্ব-আকাশে যেতে না পারায় তারা মনে করল যে,কোন অভিনব ঘটনা ঘটেছে। এর রহস্য অনুসন্ধান করতে একদল জিন বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যারা মক্কায় এসেছিল তারা ওকায নামক বাজারে মহানবীকে (সা) সাহাবীদের সাথে ফজরের নামায পড়তে দেখল। যখন তারা মহানবী (সা)কে কুরআন পাঠ করতে শুনল তখন মন্তব্য করল, ‘এ সেই ঘটনা যার জন্য আমাদের আকাশে যাওয়া হতে নিবৃত্ত করা হয়েছে।’ এরপর তারা জিন গোত্রের কাছে গিয়ে সব ঘটনা বিস্তারিত তুলে ধরে।

 

কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে, মহানবী একদিন মক্কার অদূরে তায়েফের ওকায বাজারে এসেছিলেন জনগণকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে।  এই বাজারে বহু লোকের সমাগম হত। কিন্তু কোনো মানুষই মহানবীর দাওয়াতে সাড়া দেয়নি। ফেরার পথে বিশ্বনবী (সা) একটি স্থানে আসেন। ওই স্থানটিকে বলা হত 'জিনের প্রান্তর' । মহানবী সেখানে রাতে থেকে যান এবং রাতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হন। একদল জিন কুরআনের আয়াত শুনে ঈমান আনে এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য জিনদের কাছে ফিরে যায়। সুরা জিনের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,  

'হে রাসূল! তুমি বল, আমাকে প্রত্যাদেশ বা ওহি করা হয়েছে যে,জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত শুনেছে এবং বলেছে,‘নিশ্চয়ই আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি।'

 

-জিনরা কুরআনের আয়াতকে বিস্ময়কর কথা বলে মন্তব্য করেছিল। কারণ কুরআনের ভাষা ও তা তিলাওয়াতের সুর এবং এর বিষয়বস্তু বিস্ময়কর বা অভিনব যার প্রভাব ও আকর্ষণ অসাধারণ। জিনরা আরও বলেছিল :

'কুরআন সত্যপথ  দেখায়;তাই আমরা এতে ঈমান এনেছি,এবং আমরা কখনও আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরিক করব না। (৩) এবং আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা সুউচ্চ,তিনি কাউকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেননি,আর তাঁর কোন সন্তানও নেই। (৪) আমাদের অতীত প্রজন্মের নির্বোধেরা আল্লাহ সম্পর্কে অসঙ্গত উক্তি করত। (৫) অথচ আমরা ধারণা করতাম মানুষ এবং জিন আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারে না বা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপের সাহস তাদের নেই।'

 

-অর্থাৎ ওই জিনরা  মহানবীর কুরআন তিলাওয়াত শুনে এটা বুঝতে পেরেছে যে আল্লাহর শরিক, স্ত্রী বা সন্তান থাকার ধারণা যারা করত তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত এবং এখন তারা সত্য পথ পেয়ে তাতে বিশ্বাসী হয়েছে।#

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ৫