ইরানি পণ্য সামগ্রী: ভেষজ উদ্ভিদ
ভেষজ উদ্ভিদ প্রকৃতির দান। মানব রোগ-ব্যাধির চিকিৎসায় সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই ভেষজ উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং এখন আছে।
বিচিত্র ঔষধি উদ্ভিদের জন্য ইরান অন্যতম একটি প্রধান কেন্দ্র। আদিকালের মানুষেরা ঔষধি উদ্ভিদের গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে শরীর ও আত্মার প্রশান্তির জন্য, মানুষের দু:খ, ব্যথা-বেদনা দূর করার জন্য সেগুলোকে ব্যবহার করতো। তাদের সেই অভিজ্ঞতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হয় এবং ভেষজ গুণ ও তার ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানাশোনার পরিধি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়। যাই হোক, ভেষজ উদ্ভিদ এবং তার বিচিত্র ঔষধি গুণাবলি নিয়ে আমরা আজকের আসরে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।
ঔষধি বা ভেষজ উদ্ভিদের গুণাগুণ মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর সুমহান লক্ষ্যে এ বিষয় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান নামে জ্ঞানের একটি শাখারই জন্ম হয়েছে। যুগে যুগে এই উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছে। এই ভেষজ বিজ্ঞান চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সভ্যতা ও ভূখণ্ডের মানুষের চেষ্টা প্রচেষ্টা এবং অভিজ্ঞতার ফলেই গড়ে উঠেছে ওই উদ্ভিদ বিজ্ঞান। অবশ্য উদ্ভিদের ধরণ, পরিমাণ এবং তারতম্য ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে। একেক এলাকার উদ্ভিদের ধরণ একেক রকমের। তবে বেশিরভাগ দেশই কমবেশি স্রষ্টার এই মহান উপহারে সমৃদ্ধ।
ভেষজ উদ্ভিদ এমন উদ্ভিদকে বলা হয় যেসব উদ্ভিদের একটা অংশ কিংবা কখনো কখনো পুরোটাই পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে রোগ নিরাময়ের জন্য অথবা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কাজে লাগানো হয়। ভেষজ উদ্ভিদের লেনদেন যদি বেড়ে যায় তাহলে সেই উদ্ভিদ বাণিজ্যিক মর্যাদা লাভ করে এবং সেটি হয়ে পড়ে একটি বাণিজ্যিক পণ্য। যেমন বিচিত্র তেলবীজ, চিনি তৈরির উদ্ভিদ কিংবা ফাইবার সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ইত্যাদি। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন অনেক গ্রন্থে তখনকার দিনে ব্যবহৃত বহু ভেষজের নাম ছবিসহ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ডিমিত্রিয়া মেডিকায় শুলফা এবং জিরা গাছের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এই দুই ভেষজের ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে দেভ সেকুরিদুসের বইটিতে। আমরা এ নিয়ে আরও কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো খানিক পরেই মিউজিক বিরতি শেষে। সঙ্গেই থাকুন।

ভেষজ উদ্ভিদগুলোকে কাঁচা একেবারে তরতাজা যেমন ব্যবহার করা যায় বা খাওয়া যায়, তেমনি শুকিয়ে কিংবা ভেষজ থেকে নির্যাস নিয়ে ওই তরলও খাওয়া যায়। এসেন্সিয়াল অয়েল নামে একটি পরিভাষা আছে। এই তেল ভেষজের সেলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে। বাতাসের স্পর্শে এই তেল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এ কারণে এসেন্স গ্রহণ কিংবা এসেন্সিয়াল অয়েল তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়, বেশ কঠিন ও জটিল। এই জটিল প্রক্রিয়ায় তৈরি করা ভেষজ ঔষধটি সব ধরনের চিকিৎসা ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। এলোপ্যাথিকের বাইরে ইউনানি চিকিৎসায় তো বটেই পশু চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয় এই ঔষধ। ভেষজ এসব ঔষধ আজকাল তৈরি করা এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার ব্যাপক উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ঔষধে এখন বিচিত্র ঘ্রাণও ব্যবহার করা হয়। ভেষজ এখন খাদ্য সামগ্রীতেও ব্যবহার করা হয়। প্রসাধনী সামগ্রি তৈরিতেও এখন ভেষজের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এমনকি অ্যারোমাথেরাপিতেও ভেষজ ঔষধের ব্যবহার এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষিকাজের প্রয়োজনেও এখন বিচিত্র ভেষজ ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে। পোকামাকড় দমনেও ব্যবহৃত হচ্ছে এসব। বিগত প্রায় অর্ধ শতাব্দি ধরে যদিও রাসায়নিক ঔষধ ব্যবহারের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে তবে ওইসব ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে গণসচেতনতার কারণে এই ভেষজ ঔষধের দিক আবারও ঝুঁকতে শুরু করেছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ। রাসায়নিক ঔষধের ক্ষতিকর দিক ছাড়াও এই ঔষধ তৈরির খরচ অনেক বেশি হওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষের পক্ষে তা কেনাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোসহ উন্নয়নশীল দেশেরও শতকরা আশি ভাগ মানুষ এই ভেষজ ঔষধই ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বজুড়ে শতকরা প্রায় পঁচাত্তর হাজার ঔষধি উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে এবং পাঁচ হাজার প্রকারের ভেষজ ঔষধ তৈরি হয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্ব বাজারে সেগুলো প্রবেশ করেছে।
ভেষজ ঔষধের বাজারে প্রবেশের কথা বলছিলাম। এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ১৯৯৬ সালেই বিশ্ব বাজারে ছয় হাজার কোটি ডলারের ভেষজ ঔষধ লেনদেন হয়েছে। ২০১০ সালে এই পরিমাণ আরও বেড়ে পৌঁছেছে দশ হাজার কোটি ডলারে। বিশ্ব ব্যাংকের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ২০৫০ সালে ভেষজ ঔষধ বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন চাচ্ছে এই বৃহৎ বাজারে নিজেদের অংশ বা কৌটা নিশ্চিত করতে। বলা হয়ে থাকে যে বিশ্বে এখন ৫০টিরও বেশি দেশ ভেষজ ঔষধ তৈরির কাজে সক্রিয় রয়েছে। এই তালিকার মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৫তম।
যাই হোক শ্রেতাবন্ধুরা! আমাদের হাতে আজ আর সময় নেই। পরিসমাপ্তি টানার আগে ছোট্ট একটি তথ্য জানিয়ে দিচ্ছি। তা হলো সম্প্রতি ভেষজ ঔষধ নিয়ে সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এই সহযোগিতার অংশ হিসেবে ইরানের তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সাইন্স অনুমোদিত হেকমাত পাজোহান কোম্পানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভিরোমেদ কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ভিরোমেদ বায়োটেকনোলজি কোম্পানি হিসেবে কাজ করছে। এ সমঝোতা স্মারক অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের ভেষজ ওষুধের উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিয়ে কাজ করবে।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।