সুরা শামসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ব্যাখ্যা
সুরা শামস পবিত্র কুরআনের ৯১ তম সুরা। মক্কি এ সুরায় রয়েছে ১৫ আয়াত। এ সুরায় পৃথিবী, আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র ও নানা যুগ বা সময় নিয়ে শপথ রয়েছে।
মানুষের প্রবৃত্তি বা সত্ত্বা তথা মনুষ্য প্রকৃতির সৃষ্টি ও তাকে তার মূল স্বভাবের দিকে তথা সত্যের দিকে পথ-প্রদর্শন, আত্মগঠন ও আত্মাকে পবিত্র করা এবং সামুদ জাতির ঘটনা নিয়ে বক্তব্য এসেছে সুরা শামসে। এ সুরার সপ্তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, শপথ নাফস্ বা প্রাণের এবং যিনি তা সৃষ্টি ও সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর।- এখানে মানুষের নাফস্ বলতে মানুষের মনুষ্য প্রকৃতি তথা আত্মা ও দেহ নিয়ে গঠিত মানবিক সত্ত্বার প্রকৃতিকে বোঝানো হয়েছে। মানুষের সত্ত্বা অনেক রহস্য ও বিস্ময়ে ভরা। পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যাকারীদের মতে সুরা শামসের এতসব শপথের উদ্দেশ্য এটা বলা যে, আত্মাকে পরিশুদ্ধকারীরাই সফল হয়।
এ সুরার প্রথম থেকে ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে: শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পেছনে আসে, শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে, শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে, শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর। মহান আল্লাহ এতসব শপথ নিয়ে মানুষকে এটা বোঝাতে চান যে তোমাদের জীবন যাপন ও সেবার জন্য যা যা দরকার তার সবই দেয়া হয়েছে। চাঁদ ও সূর্য, আলো, বাতাস, দিন ও রাত, সমতল প্রান্তর বা পৃথিবী ও আকাশ –এসবই মানুষের কাজ, প্রচেষ্টা ও বিশ্রামের জন্য জরুরি। এ ছাড়াও মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছে ভালো ও মন্দকে বোঝার মত জ্ঞান বা অনুভূতি যা দিয়ে মানুষ স্বেচ্ছায় আত্মাকে বা প্রবৃত্তিকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়। মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধিই বলে দেয় যে কোন্ কাজটা পাপ ও কোন্ কাজ খোদাভীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে পরিপক্ক তথা কোনো সুস্থ মানুষের মন ও প্রকৃতি কোনো অন্যায়, অবিচার, মিথ্যা ও অশালীনতাকে পছন্দ করে না। এ ছাড়াও নবী-রাসুল ও তাঁদের প্রতিনিধির মাধ্যমে মহান আল্লাহ যুগে যুগে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন কোন্ কোন্ কাজ বৈধ ও কোন্ কোন্ কাজ অবৈধ এবং কোন্ কোন্ উপার্জন ও খাদ্য বৈধ বা অবৈধ ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন পছন্দনীয় নয় এমন গন্ধযুক্ত কাদামাটি থেকে। কিন্তু খোদায়ি রুহ ফুঁকে দেয়া এই মানুষকেই উচিত ও অনুচিতের জ্ঞান দানের ফলে তারা খোদাভীতি ও পাপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছে। ফলে সে হতে পারে ফেরেশতার চেয়েও মহান অথবা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট! আর এ দুই-ই নির্ভর করছে মানুষের পথ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছার ওপর। যা মানুষের প্রবৃত্তি ও আত্মাকে উন্নত করে বা সুশিক্ষিত করে তা-ই সাফল্যের মাধ্যম। আর ব্যর্থতার মাধ্যম হল পাপ, খোদাদ্রোহিতা ও শির্ক বা অংশিবাদিতায় মগ্ন হওয়া। মানুষের নাফস্ হল খোদায়ি আয়নার মত। এ আয়না দেখিয়ে দেয় খোদাভীতির পথ ও বিচ্যুতির পথ, তবে শর্ত হল এ আয়না পরিস্কার রাখতে হবে। এ আয়না যখন পাপের পংকিলতা ও কালিমায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন তা অকেজো হয়ে পড়ে। আর তখন লাভ বা সাফল্য অর্জন তো দূরে থাক কেবলই ক্ষতি হতে থাকে। এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন, সে নিজেকে তথা নিজ আত্মাকে শুদ্ধ করেছে সে-ই সফল।
অতীতের খোদাদ্রোহী জাতিগুলোর পরিণতি তুলে ধরতে গিয়ে মহান আল্লাহ সুরা শামসে সামুদ জাতির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। খোদাদ্রোহিতার কারণে এ জাতির লোকদের আত্মা হয়ে পড়েছিল কলুষিত। ফলে তারা হযরত সালেহ নবীর আহ্বান উপেক্ষা করেছিল। তারা মহান আল্লাহর নবী সালেহ (আ)'র নিদর্শন হিসেবে পাথরের পাহাড় থেকে বেরিয়ে-আসা অলৌকিক মাদী উটকে দেখার পরও ঈমান আনেনি। সেই উট তাদেরকে নিয়মিত অনেক দুধ দেয়া সত্ত্বেও তারা হত্যা করেছিল ওই নিরীহ অলৌকিক পশুকে। সামুদ জাতির নেতৃস্থানীয় লোকেরা সমাজে খোদায়ী ধর্মের প্রভাব ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারছিল না তাদের বস্তুগত হীন স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে। আর তাদেরই সহযোগী হয়েছিল ওই সমাজের বেশিরভাগ মানুষ। ফলে ওই উটকে যাতে বিরক্ত না করা হয় সে বিষয়ে নানা সময়ে হযরত সালেহ'র অনেক হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সামুদ জাতির দাম্ভিক খোদাদ্রোহীরা উটটিকে হত্যা করে। এর পরিণামে তাদের ওপর নেমে আসে প্রতিশ্রুত খোদায়ী শাস্তি এবং তাতে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব বর্তমান যুগে খোদায়ী ধর্মের অলৌকিক সাফল্যের নানা নিদর্শনে ভরপুর। যেমন, প্রবল পরাক্রান্ত স্বৈরশাসক শাহ ও তার জালিম দলবলের বিলুপ্তি কিংবা তাবাস মরুতে ধুলি ঝড়ের শিকার হওয়ার কারণে ইরানে হামলা-করতে-আসা মার্কিন বিমানগুলোর বিপর্যয়। কিন্তু এসব দেখা সত্ত্বেও এ বিপ্লবকে ধ্বংস বা দুর্বল করতে এখনও দেশি-বিদেশী বহু ষড়যন্ত্র পাকানো হয়েছে ও হচ্ছে শয়তানি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে। আর তাদের পরিণতিও হবে সামুদ জাতির মতই।#
পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।