ওয়াশিংটনে গৃহহীনদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের: সমাধান নাকি সমস্যার বিস্তার?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151112
পার্সটুডে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি'র 'নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধ' মোকাবেলায় ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন এবং স্থানীয় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে ফেডারেল সরকারের হাতে নিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন শহর থেকে গৃহহীনদের উচ্ছেদ করে রাজধানী থেকে দূরে স্থানান্তর করবেন।
(last modified 2025-08-12T12:11:32+00:00 )
আগস্ট ১২, ২০২৫ ১৫:২২ Asia/Dhaka
  • ওয়াশিংটনে ৩,৮০০ মানুষ গৃহহীন
    ওয়াশিংটনে ৩,৮০০ মানুষ গৃহহীন

পার্সটুডে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসি'র 'নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধ' মোকাবেলায় ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন এবং স্থানীয় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে ফেডারেল সরকারের হাতে নিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ওয়াশিংটন শহর থেকে গৃহহীনদের উচ্ছেদ করে রাজধানী থেকে দূরে স্থানান্তর করবেন।

'হোম রুল অ্যাক্ট'-এর ভিত্তিতে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় কর্মকর্তা, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটি কি ওয়াশিংটনের নাগরিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে?  

ট্রাম্প এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হিসেবে 'অরাজকতার হাত থেকে রাজধানীকে মুক্ত করা' এবং 'ওয়াশিংটনের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা' উল্লেখ করেছেন। তিনি ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে ওয়াশিংটনকে 'অপরাধ, বর্বরতা ও নোংরায় ভরা শহর' বলে বর্ণনা করেছেন এবং গৃহহীনদের এই সমস্যার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এই মন্তব্য এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন মার্কিন রাজধানী হিসেবে ওয়াশিংটন প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে। এর সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা ফেডারেল সরকারের অগ্রাধিকারে থাকে। স্থানীয় পুলিশের উপর ফেডারেল নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন ও স্থানীয় ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের বিপরীতে নিজের অবস্থান মজবুত করার উপায়ও হতে পারে—বিশেষ করে এমন এক শহরে, যা দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটদের প্রভাবাধীন।

তবে বাস্তবতা হলো, ওয়াশিংটন ডিসি নানা নগর সমস্যার মুখোমুখি। 'সামাজিক অংশীদারিত্ব' সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭ লাখ জনসংখ্যার এই শহরে প্রায় ৩,৮০০ মানুষ গৃহহীন। তারা সাধারণত জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র বা রাস্তায় বাস করে, যা শহরের দৃশ্যত ও সামাজিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।

যদিও ২০২৪ সালে ওয়াশিংটনে সহিংস অপরাধের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে, ২০২৩ সালে সহিংস অপরাধের ব্যাপক বৃদ্ধি শহরটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিপজ্জনক শহরে পরিণত করেছিল। এই ইতিহাস, পাশাপাশি শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় গৃহহীনদের উপস্থিতি, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের জন্য একটি অজুহাত তৈরি করেছে।

গৃহহীনতা ও অপরাধ ছাড়াও, ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক অসমতা, সাশ্রয়ী আবাসনের অভাব এবং ফেডারেল সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো সমস্যার সম্মুখীন। একটি ফেডারেল জেলা হিসেবে, এটি সরাসরি কংগ্রেসের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং এর সীমিত স্বায়ত্তশাসন ফেডারেল সিদ্ধান্ত, যেমন ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি করে।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে, ট্রাম্পের প্রোগ্রামের সাফল্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। একদিকে, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন এবং পুলিশের ফেডারেলাইজেশন অস্থায়ীভাবে শৃঙ্খলা বাড়াতে পারে। ডিসির ন্যাশনাল গার্ড সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনস্থ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই, যা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ করে।

তবে, গৃহহীনদের উচ্ছেদ এবং অন্যত্র স্থানান্তর করা আইনি ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। 'ওয়াশিংটন লিগ্যাল ক্লিনিক ফর দ্য হোমলেস'-এর মতো মানবাধিকার সংগঠন এই পদক্ষেপকে অবৈধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে এবং সম্ভবত এটির বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হবে। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট মেয়র মুরিয়েল বাউসার ও অন্যান্য স্থানীয় কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে এটিকে 'অতিরঞ্জিত ও অপ্রয়োজনীয়' বলে উল্লেখ করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধের হার কমে যাওয়া দেখায় যে 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে অপরাধ'-এর দাবি অতিরঞ্জিত হতে পারে। এছাড়াও, সাশ্রয়ী আবাসন বা সামাজিক সেবার মতো স্থায়ী সমাধান ছাড়াই গৃহহীনদের জোরপূর্বক স্থানান্তর অন্যান্য এলাকায় সমস্যা বাড়াতে পারে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে রাজধানীতে একটি “নিরাপত্তার চেহারা” দিতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্য ও আবাসন সংকটের মতো মূল সমস্যার সমাধান ছাড়া এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব টেকসই হবে না। রাজনৈতিক ও আইনি দ্বন্দ্ব এবং নাগরিক সমাজের প্রতিরোধ এই পরিকল্পনাকে বড় বাধার মুখে ফেলতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১২