ডিসেম্বর ২২, ২০১৯ ২০:০৩ Asia/Dhaka

সুরা 'আত্‌ তি'ন' পবিত্র কুরআনের ৯৫ তম সুরা। মক্কি এ সুরায় রয়েছে ৮ আয়াত। তি'ন শব্দের অর্থ ডুমুর।

এই সূরার মধ্যে আল্লাহ মানুষের পরিচিতির কথা, মানুষের পাপের কারণে নিকৃষ্টতর অবস্থা, পরকাল ও বিচার-দিবস, ঈমানদারদের সীমাহীন সওয়াব ও প্রতিদান এবং আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক হওয়া বা পরিপূর্ণ সার্বভৌমত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এবারে শোনা যাক এই সুরার অর্থ: অসীম দয়াময় ও অনন্ত করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। (১) শপথ তীন(২) ও জয়তুনের (২) এবং শপথ সিনাই পর্বতের (৩) আর শপথ এ নিরাপদ নগরীর (৪) নিঃসন্দেহে আমরা মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি, (৫) অতঃপর আমরা তাকে হীনদের মধ্যে হীনতম অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছি। (৬) তারা ছাড়া যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে; তাদের জন্য তো অশেষ প্রতিদান রয়েছে। (৭) সুতরাং হে মানুষ! এ সব প্রমাণের পরও কি তোমাকে কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতে প্রবৃত্ত করল? (৮) আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?

মহানবী (সা) যখন প্রথমবারের মত জন্মভূমি মক্কায় একত্ববাদ ও ইসলামের বিধান প্রচার শুরু করেন তখন স্থানীয় জনগণ মিথ্যা ধর্ম ও নিজস্ব প্রবৃত্তি বা খেয়ালীপনার প্রভাবে মহানবীর (সা) দাওয়াতকে অস্বীকার করে। এ অবস্থায় সুরা আত্‌তিন নাজিল হয়। এ সুরায় খোদায়ি ধর্মের বিরোধিতাকারীদের তিরস্কার করা হয়েছে এই ইঙ্গিত দিয়ে যে তারা মানবীয় প্রকৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। 

হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত যে,  এই সুরায় উল্লেখিত ‘তি'ন’অর্থ মসজিদে নববী ও ‘জায়তুন' অর্থ বায়তুল মোকাদ্দাস।  ডুমুর ও জায়তুন বা অলিভ ফলের শপথ নেয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিন বা আনজির তথা ডুমুর ও জায়তুন অত্যন্ত উপকারী, খাদ্যগুণ ও ভিটামিন-সমৃদ্ধ এবং রোগ-নিরোধক ফল। ডুমুর বেহেশতি ফলের সঙ্গে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জায়তুন গাছকে কুরআনে পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ডুমুর ও জায়তুন খুব বেশি হত যথাক্রমে হযরত নুহ নবীর (আ) রেসালাত প্রচারের অঞ্চল ও হযরত ইব্রাহিম নবীর (আ) রেসালাত লাভের অঞ্চলে। হযরত ইব্রাহিম রেসালাত পেয়েছিলেন বায়তুল মুকাদ্দাস অঞ্চলে। তাঁদের এ দুই অঞ্চলই পার্বত্য অঞ্চল ও বেশিরভাগ খোদায়ী র্ধ্ম-উদ্ভবের সুতিকাগার ও  নবী-রাসুলের অঞ্চল হিসেবে খ্যাত।

তি'ন ও জায়তুনের পর মহান আল্লাহ সুরা আততি'নে সিনাইয় পাহাড়ের শপথ নিয়েছেন। হযরত মুসা (আ) এখানেই রেসালাত পান। এরপর আল্লাহ নিরাপদ শহরের শপথ নিয়েছেন। এই নিরাপদ শহর বলতে পবিত্র মক্কা শহরকে বোঝানো হয়েছে যেখানে রেসালাত পেয়েছেন সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা)।  এইসব শপথের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি তাঁর ধর্মকে সব যুগ ও স্থানের মানুষের কাছে তুলে ধরছেন এবং ইসলাম ধর্মই হচ্ছে খোদায়ী ধর্মের পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ ও সর্বশেষ স্তর।

এরপর আল্লাহ সুরা আততি'নে বলছেন, সৃষ্টিকূলের মধ্যে মানুষকেই দেয়া হয়েছে সবচেয়ে সুন্দর, নিখুঁত এবং সবচেয়ে উপযুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ আকার-আকৃতি, ব্যবস্থা ও কাঠামো। দৈহিক দিক ছাড়াও আত্মিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং তার মধ্যে রয়েছে সব ধরনের প্রতিভা।  মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন, বিবেক-বুদ্ধি, সম্মান ও পরিপূর্ণতাকামী বৈশিষ্ট্য। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে শক্তিশালী করতে ও সঠিক পথে চালাতেই পাঠানো হয়েছে নবী-রাসুলদেরকে।

খোদায়ী ধর্ম মানুষের প্রকৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ এবং মানুষের পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য এমন ধর্মই জরুরি। কিন্তু অনেক মানুষই প্রবৃত্তি ও খেয়ালীপনার অনুসারী হয়ে বিচ্যুত ধর্মগুলোর অনুসরণ করে।

কিন্তু এ সুরায় স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে আল্লাহর ধর্মের পথ ছাড়া অন্য যে পথই অনুসরণ করা হবে তা মানুষের জন্য হবে  চরম অসম্মানজনক ও সর্বনিকৃষ্ট অস্তিত্বের স্তর। অন্যদিকে অনেক মানুষ সব প্রতিভা ও বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত নেয়ামতগুলোকে সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করেন এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে ও নানা ধরনের সৎ কাজের মাধ্যমে সৌভাগ্য অর্জন করেন। ফলে তারা ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর অশেষ পুরস্কারের অধিকারী হন। তারা এমন পুরস্কার পান যে তা চিরস্থায়ী ও ত্রুটিমুক্ত।  

সুরা আততিনের শেষাংশে বলা হচ্ছে যে মানুষের গঠন ও এ বিশ্বের গঠন থেকে স্পষ্ট যে দুনিয়ার অল্প ক' দিনের জীবনই অস্তিত্বের জগত সৃষ্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে না। বরং পার্থিব জীবন এক বিস্তৃত ও পরিপূর্ণ জীবন আর জগতের ভূমিকা মাত্র। শুকনো গাছ যেমন বসন্তে আবারও সবুজ হয়ে ওঠে তেমনি মৃত্যুর পর মানুষ আবারও জীবিত হবে। মহান আল্লাহ সব বিষয়ের জ্ঞান রাখেন ও সবার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন এবং তিনিই সবচেয়ে বড় কৌশলী ও প্রজ্ঞার অধিকারী বিচারক। আল্লাহর বিধানই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, স্থায়ী ও মজবুত বিধান। তাই একমাত্র আল্লাহর ধর্ম ও বিধান মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন সুরা আততিনে:  

আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?

বন্ধুরা, সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি আসমানি সুরার আজকের আলোচনা। কথা হবে আবারও আগামী আসরে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ