ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১৯:৩৪ Asia/Dhaka

সুরা আল আলাক্ব ৯৬ তম সুরা। পবিত্র কুরআনের অন্য সব আয়াত ও সুরার আগে সর্বপ্রথম নাজিল হয়েছিল সুরা আল- আলাক্বের প্রথম পাঁচ আয়াত।

১৯ আয়াতের মক্কি এ সুরায় মহান আল্লাহ নিজেকে সব বস্তুর স্রষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন। কুরআন তিলাওয়াত করতে মহানবীর (সা) প্রতি নির্দেশ,  জমাট-বাধা রক্ত হতে মানুষের সৃষ্টি হওয়া,  আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের শিক্ষাপ্রাপ্ত হওয়া, জ্ঞান ও কলমের গুরুত্ব,  ধনবান অবস্থায় মানুষের অহংকারি ও অবাধ্য হয়ে যাওয়া, আবু জাহলের শয়তানী, সিজদার আদেশ ও আল্লাহর নৈকট্য ইত্যাদির কথাও এসেছে এ সুরায়। আল্লাহর অনুগ্রহের সুবাদে মানুষের পরিপূর্ণতা অর্জন,  মানুষের সুপথ-প্রদর্শন বা হেদায়াতের পথে ও সৎ কাজের পথে বাধা দেয়ার পরিণাম তথা  যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তির কথাও এসেছে সুরা আল আলাক্বে।   

দূররুল মানসূরসহ কয়েকটি সূত্রে রাসূল (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ঘটনা প্রসঙ্গে এক অদ্ভুত বর্ণনায় বলা হয়েছে: “একদিন মহানবী (সা.) হেরা গুহায় নিজ ইবাদাতের স্থলে বসেছিলেন। এমন সময় হযরত জিবরীল (আ.) তাঁর কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আর আপনিই আল্লাহর রাসূল। তাই পড়ুন। তিনি বললেন, ‘কি পড়ব? আমি তো (আজ পর্যন্ত) কিছু পড়িনি।’ তখন হযরত জিবরীল (আ.) তাঁকে নিজ বক্ষে এত জোরে জাপটে ধরলেন যে, তিনি কোনক্রমেই নিজেকে বন্ধনমুক্ত করতে পারলেন না। এরপর জিবরীল (আ.) আবার তাঁকে বললেন, ‘পড়ুন।' তিনি একই উত্তর দিলেন। তাই, হযরত জিবরীল দু’তিনবার এমনই করলেন। তারপর রাসূল (সা.) এ আয়াতগুলো পাঠ করলেন। এরপর মহানবীর (সা) ওপর এমনই ভীতি ছেয়ে গেল যে, তিনি বাড়ি ফিরে হযরত খাদীজাকে বললেন, ‘আমাকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’এ অবস্থায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আর ঘুম থেকে উঠে বললেন, ‘আমার ওপর কি উন্মাদনা প্রভাব বিস্তার করল?’ জবাবে খাদীজা বললেন, ‘না, এটা হতেই পারে না। আপনার মধ্যে অতিশয় সুন্দর গুণ রয়েছে। বরং আপনি আমার সাথে পিতৃতুল্য ওয়ারাকাহ বিন নওফেলের কাছে আসুন। তিনি একজন উচ্চমানের ‘রাহিব’বা সংসারত্যাগী উপাসক।

ওই বর্ণনায় এসেছে,  মহানবী (সা) ওয়ারাকাহর কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকাহ বললেন, ‘আপনাকে অভিনন্দন! আল্লাহ আপনাকে রাসূল বানিয়েছেন। আর ওই ব্যক্তি সেই ফেরেশতা যিনি অতীতের নবীদের কাছেও আসতেন। আপনি ভয় করবেন না; বরং সে যা বলে তা করুন। অদূর ভবিষ্যতে আপনার প্রতি যুদ্ধের আজ্ঞা হবে। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে আপনার সঙ্গ দেব।”

 এ বর্ণনাটি অত্যন্ত অযৌক্তিক দাবি ও নানা ত্রুটিতে ভরপুর। কারণ প্রথমত এ বর্ণনাটি পড়লেই যে কোন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগবে তবে কি জীবরিল (আ.) লিখিত কোন ফলকে ওহী এনেছিলেন যে, রাসূল (সা.) বলবেন, ‘আমি তো (আজ পর্যন্ত) কিছু পড়িনি।’  যদি বিষয়টি এমন হয় যে, জীবরিল (আ.) লিখিত কোন ফলকে ওহী আনতেন তবে তো কোরআন সংকলনেরই কোন দরকার ছিল না। আর যদি এমন হয় যে, জীবরিল (আ.) আলোচ্য আয়াতগুলি পাঠ করেছেন তবে নিঃসন্দেহে একজন আরব হিসেবে রাসূল (সা.)-এর জন্য তা শুনে নিয়ে পুনরাবৃত্তি করা কঠিন কোন বিষয় ছিল না। তাই এর জন্য তাকে বুকে চেপে ধরা ও এতটা চাপ প্রয়োগের দরকার ছিল না যে, তিনি নিজেকে বন্ধনমুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।

 দ্বিতীয়ত এ বর্ণনায় রাসূল (সা.) নিজে উন্মাদ হয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন!! এবং এ সন্দেহ দূর করতে এক খৃষ্টানের শরণাপন্ন হয়েছেন! ওহীর বিষয় কি এমন ঠুনকো যে তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে? ওহী হল ইলহাম, কাশফ এসবেরও ঊর্দ্ধের বিষয় যাতে ফেরেশতা বা স্বয়ং আল্লাহ বান্দার হৃদয়ের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেন যেমনটি সূরা শূরা ও সূরা জিনের শেষ আয়াতগুলিতে ইশারা করা হয়েছে। তাই কোন নবীই ওহীর বিষয়ে সন্দেহ করতে পারেন না।

ওহি সন্দেহাতীত বিষয় বলেই মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ রাসূলকে ঘোষণা করতে বলেছেন, ‘বল আমি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি।’(আনআম:৫৭) এবং ‘বল, এটাই আমার পথ, আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান করি নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে এবং যে আমার অনুসরণ করে সেও।’প্রশ্ন হল ওয়ারাকাহ ইবনে নওফেলের মত ব্যক্তির কথায় কি ওহি ও নবুওয়াতের বিষয়ে নিশ্চিত ও সুদৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হওয়া সম্ভব যেক্ষেত্রে নবী ছাড়া কারও পক্ষেই ওহীর মর্মার্থ ও প্রকৃতি অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

আসলে ওয়ারাকাহ ইবনে নওফেলের মত কোন ব্যক্তির অস্তিত্বই ছিল না। এটা রাসূলের (সা.) এর নবুওয়াতের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির জন্য বনি উমাইয়ার পক্ষ থেকে বানোয়াটভাবে তৈরী করা হয়েছে। একারণেই রাসূলের বিয়ের ঘটনা ও এ ঘটনা ছাড়া কাল্পনিক এ ব্যক্তির অস্তিত্ব ইতিহাসের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, মহানবী (সা) ছোটবেলা থেকেই জানতেন যে তিনি শেষ নবী ও রাসুল। তাঁর দাদা ও চাচাসহ অনেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও তা জানতেন নানা অলৌকিক নিদর্শনের সুবাদে। যেমন, মহানবীর (সা) মাথার ওপর মেঘ ছায়া দিত সেই শৈশবেই। তিনি কৈশরে যখন চাচার সঙ্গে সিরিয়া সফরে যান তখন একজন খ্রিস্টান সন্ন্যাসীও ইঞ্জিলের ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে চাচা আবু তালিবকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, আপনার ভাতিজার নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। উনি শেষ নবী ও রাসুল।  তাই ৪০ বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় প্রথম ওহি নাজিল হওয়ার সময়ও মহানবী (সা) নিজের নবুওত ও রেসালত লাভের বিষয়ে অচেতন ছিলেন এমন ধারণা বা বর্ণনা মোটেও যৌক্তিক হতে পারে না।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ