জানুয়ারি ০৯, ২০২০ ১৬:৫৭ Asia/Dhaka

সুরা আল যিল্‌যাল পবিত্র কুরআনের ৯৯ তম সুরা। মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে ৮ আয়াত।

যিল্‌যাল সরাটি বিষবস্তু হচ্ছে মূলত কিয়ামতের অবস্থা ও ভয়াবহতা এবং মানুষের পাপ ও পুণ্যের প্রতিফল অনিবার্য হওয়া। ভূমিকম্প হবে কিয়ামতের নিদর্শন এবং কিয়ামত বা বিচার দিবসে মানুষের দুই দলে তথা সৎ ও পাপীতে বিভক্ত হওয়ার কথা এসেছে এ সুরায়। পৃথিবী যে সেদিন মানুষের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে সুরা যিল্‌যালে। মহান আল্লাহ এ সুরায় বলছেন, (শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু)  (১) যখন পৃথিবী অতি প্রবলভাবে আপন কম্পনে প্রকম্পিত হবে, (২) এবং পৃথিবী যখন তার ভেতরের ভার বের করে দেবে; (৩) এবং মানুষ বলবে(২), ‘এর কী হল?’ (৪) সেদিন সে তথা পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, (৫) কারণ, তোমার প্রতিপালক তাকে প্রত্যাদেশ করবেন; (৬) সেদিন মানুষ সমাধি হতে দলে দলে বের হবে যাতে আপন কৃতকর্ম দেখতে পারে; (৭) সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে (৮) এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তাও সে দেখবে।

সুরা যিল্‌যালে আল্লাহ কিয়ামতের অবস্থা ও ভয়াবহতার পাশাপাশি এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, কারও অণু পরিমাণ নেকী ও বদী তথা পুণ্য ও পাপ থাকলে সে তার প্রতিদান ও প্রতিফল অবশ্যই পাবে। কিয়ামতের সময় প্রবলতম ভূমিকম্প হবে। ফলে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে এবং হয়ে পড়বে ভীত-সন্ত্রস্ত। পৃথিবী তার গর্ভে থাকা খনিজ পদার্থ ও গলিত পদার্থসহ সব কিছু উগড়ে বের করে দেবে। এ ছাড়াও হাজার হাজার বছর ধরে যেসব মানুষ কবরে শায়িত রয়েছে বা যাদের লাশ মিশে গেছে মাটির সঙ্গে তারা আবারও পরিপূর্ণ দেহ নিয়ে জেগে উঠবে। অন্য কথায় শত সহস্র কোটি মৃত মানুষের সবাই আবারও জীবন্ত হবে।  মানুষ এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে এর কারণ জানতে চাইবে ও বলবে: পৃথিবী বা ভূভাগের এ কী হল যে এমন অভূতপূর্বভাবে তার ভেতরের সব কিছু উগ্‌রে দিয়েছে?  সুরা যিল্‌যালের বক্তব্য অনুযায়ী সেদিন ভূভাগ তার সব খবর তুলে ধরবে ; পৃথিবীতে ভালো ও মন্দ যা কিছু ঘটেছে তার সবই সেদিন প্রকাশ করে দেবে। সেদিন পৃথিবী হবে মানুষের তৎপরতাগুলোর অন্যতম প্রধান সাক্ষী। মহানবীর (সা) হাদিস অনুযায়ী প্রত্যেক নারী ও পুরুষে ভূভাগে কবে কি করেছিল তা হুবহু বর্ণনা করবে জমিন।

কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর বিচার যে হবে পরিপূর্ণ নিখুঁত ও অত্যন্ত সূক্ষ্ম ন্যায়বিচার তা সুরা যিল্‌যালসহ কুরআনের অন্য অনেক সুরায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয় উল্লেখের উদ্দেশ্য হল মানুষ যেন মৃত্যুর আগেই যথেষ্ট সৎ কাজ করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়।

কারও অণু পরিমাণ নেকী ও বদী তথা পুণ্য ও পাপ থাকলে তা বিচার দিবসে দেখানো হবে। এর মাধ্যমে এ হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে যে আমরা যেন ছোট ছোট পাপকে তুচ্ছ মনে না করি। ইসলামী নীতি শাস্ত্রে বলা হয় ক্ষুদ্র পাপকে ক্ষুদ্র মনে করাও বড় গোনাহ তথা কবিরা গোনাহ। ছোট ছোট পাপ করতে করতেই একদিন মানুষ বড় পাপী হয়ে ওঠে। ছোট ছোট পাপের যোগফল খুব বড়। একটি পিপড়ার মুখ থেকে অন্যায়ভাবে একটি ক্ষুদ্র শস্যকণা কেড়ে নেয়া কিংবা কারো বাঁশের ঘরের বেড়া থেকে দাঁত পরিস্কারের জন্য সামান্য খিলাল সংগ্রহ করাও অপছন্দনীয় পাপ। বিশাল দুধের ভাণ্ডার সামান্য এক ফোটা মল বা মূত্রের কারণেই নাপাক হয়ে পড়ে।

মহান আল্লাহর নিখুঁত ও পুংখানুপুঙ্খ বা সূক্ষ্ম বিচারের বিষয়ে সুরা লুকমানের ১৬ নম্বর আয়াতে বক্তব্য রয়েছে। মহাজ্ঞানী লুকমান তথা লুকমান হাকিম তার পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বলছেন:

'হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর- গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও কিয়ামতে বা বিচার দিবসে উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর নিখুঁত খবর রাখেন।–এই আয়াতের প্রতি বিশ্বাস রেখে সব মুসলমানের উচিত সব সময় সত্যের পথে থাকা এবং বিন্দুমাত্র পাপ ও বিচ্যুতিও এড়িয়ে চলা।

কোনো কোনো হাদিস এবং তাফসীরকারকদের ব্যাখ্যায় বলা হয় যে, সেদিন সে তথা পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে বলে যে বক্তব্য এসেছে সুরা যিল্‌যালে, তাতে বিবৃত মানুষ হলেন হযরত আলী (আ.)। মহানবীর (সা) পর তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং কিয়ামতের দিন শাফায়তাকরী।  হযরত আলীর সামনে যখন এ আয়াত পাঠ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমিই সেই মানুষ যার কাছে যমীন তার বৃত্তান্ত তুলে ধরবে।’হযরত আলীর অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা ফুটে উঠেছে এসব বর্ণনায়।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ