জানুয়ারি ২১, ২০২০ ১৯:২৮ Asia/Dhaka

সুরা ক্বারিয়াহ পবিত্র কুরআনের ১০১তম সুরা। মক্কি এ সুরায় রয়েছে ১১ আয়াত। ক্বারিয়া শব্দের অর্থ চূর্ণবিচূর্ণকারী।

এখানে এ শব্দের মাধ্যমে কিয়ামতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন পৃথিবী ও সব গ্রহ-উপগ্রহসহ বিশ্বের সব কিছুকে চূর্ণ-বিচূর্ণ বা লন্ডভণ্ড করে দেবে। এই সূরায় মহান আল্লাহ পরকাল ও এর সূচনা তথা কিয়ামতের অবস্থা এবং পুণ্যবান ও পাপাচারীর পরিণাম ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন।

এবারে এই সুরার বাক্যগুলোর অর্থ শোনা যাক:  অসীম দয়াময় ও অনন্ত করুণাময় আল্লাহর নামে 

(১) চূর্ণ-বিচূর্ণকারী মহাপ্রলয়, (২) চূর্ণ-বিচূর্ণকারী মহাপ্রলয় কি? (৩) কি তোমাকে চূর্ণ-বিচূর্ণকারী মহাপ্রলয় সম্বন্ধে অবহিত করল? (৪) সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত হবে;(৫) এবং পাহাড়গুলো তুলার পেঁজার মত উড়তে থাকবে; (৬) সেদিন যার নেকি বা কল্যাণের পাল্লা ভারী হবে (৭) সে মনঃপুত ভোগ-বিলাসে থাকবে, (৮) কিন্তু যার পাল্লা হালকা হবে (৯) তার স্থান হবে ‘হাবিয়া।’ (১০) আর তুমি জান হাবিয়া কী? (১১) তা উত্তপ্ত অগ্নি।

পবিত্র কুরআনের অন্য অনেক সুরার মতই সুরা ক্বারিয়াহ্‌তেও পরকালে মানুষ যে দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুই শ্রেণী হল বিশ্বাসী বা সৎকর্মশীল এবং অবিশ্বাসী ও পাপী। যারা ঈমানদার ও সৎ কাজ করবে এবং যাদের সৎ কাজের পাল্লা মন্দ কাজের চেয়ে ভারি হবে তারা বেহেশতে যাবে। বেহেশত হচ্ছে অপার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির স্থান। অন্যদিকে যারা অবিশ্বাসী ও যাদের মন্দ কাজ হবে সৎ কাজের চেয়ে বেশি তারা যাবে দোযখ বা নরকে। হাবিয়া হচ্ছে অন্যতম দোযখ বা নরক। দুনিয়ার আগুনের তুলনায় অকল্পনীয় মাত্রায় বেশি প্রজ্জ্বলিত ও উত্তপ্ত আগুনের অসহনীয় দহন সহ্য করতে হবে দোযখের অধিবাসীদের। সুরা কারিয়াহ্‌-'র চার নম্বর বাক্যে বলা হয়েছে:  সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত হবে। এখানে মানুষকে পতঙ্গের সঙ্গে তুলনা করার বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। পতঙ্গরা সাধারণত পাগলের মত আগুন বা আলোর মধ্যে এসে পড়ে এবং পুড়ে যায়। পাপী মানুষেরাও ঠিক একইভাবে নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করছে। কিয়ামতের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে মানুষ হতবাক ও বিচলিত হয়ে দিশাহারা হয়ে পড়বে।  

সুরা কারিয়াহ্‌-'র ৫ নম্বর বাক্যে বলা হয়েছে: 'এবং সেদিন পাহাড়গুলো তুলার পেঁজার মত উড়তে থাকবে।' পুনরুত্থান বা কিয়ামত দিবসের প্রাক্কালে পাহাড়-পর্বতগুলো প্রবল ভূকম্পন ও আলোড়নের মাধ্যমে ধুলো-বালির মত ছিন্ন-ভিন্ন হবে এবং ধূনিত রঙ্গীন পশম বা তুলার মত হয়ে উড়তে থাকবে। শেষ পর্যন্ত এসবই পুরোপুরি ধ্বংস বা বিলীন হয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন মৃত সব মানুষ আবার জীবিত হবে। যাদের ঈমান ও সৎ কাজের পাল্লা ভারী হবে তারা অপার সুখ ও সমৃদ্ধির চিরস্থায়ী আলয় তথা বেহেশতের অধিবাসী হবে। মিজান বা পাল্লা শব্দের ব্যবহারও এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। মানুষের জন্য দেয়া হয়েছে আদর্শ। নবী-রাসুল ও তাঁদের অনুসারী নেতৃবৃন্দ বা ইমামরা হলেন মানুষের জীবন-যাপনের আদর্শ। মানুষের জন্য কুরআনের বিধানের দৃষ্টান্ত বা আদর্শও হলেন এই মহাপুরুষেরা। মহান আল্লাহর বিধান পুরোপুরি সুবিচারপূর্ণ। তাই পরকালে মানুষের বিচারও হবে পুরোপুরি ন্যায়বিচার-ভিত্তিক। যেমন, জন্মসূত্রে ধনী ও দরিদ্র ব্যক্তি এবং জন্মান্ধ ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী মানুষের বিচার হবে তাদের অবস্থার অনুপাতে। তাই এটা স্পষ্ট এ সুরায় পাল্লার যে পরিমাপের কথা বলা হয়েছে তার অন্যতম অর্থ মহান আল্লাহর ন্যায়বিচার। 

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ)ও এ সুরায় উল্লেখিত পাল্লার পরিমাপ বলতে মহান আল্লাহর ন্যায়বিচারের কথাই উল্লেখ করেছেন। মানুষের সব সৎ কাজের মূল্য এক সমান নয়। অনেকেই খুব সামান্য সৎ কাজ করেই দেখবেন যে তাদের সৎকাজের পাল্লা পরকালে বা বিচার-দিবসে অনেক ভারি হয়েছে। সুরা ক্বারিয়াহ্‌'র ৬ ও ৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: সেদিন যার নেকি বা কল্যাণের পাল্লা ভারী হবে '(৭) সে মনঃপুত ভোগ-বিলাসে থাকবে,- এর অর্থ বেহেশতের অপার সুখে বেহেশতবাসীরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট থাকবে।' বেহেশতের বৈশিষ্ট্যই হল এমন। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে মানুষ যতই প্রাচুর্য, নিরাপত্তা ও সুখের অধিকারী হোক না কেন তা নানা অসুখ বা অসন্তুষ্টি থেকে মুক্ত নয়। নিরেট ও পরিপূর্ণ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কেবল পরকালের জীবনেই ভোগ করা সম্ভব। অন্যদিকে নরকের শাস্তিও অকল্পনীয় মাত্রায় কঠিন ও অসহনীয়। যাদের সৎকর্ম ও বিশ্বাসের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে নরক বা দোযখের অধিবাসী। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরকালীন সাফল্য অর্জনের সৌভাগ্য দান করুন। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ