ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২০ ২০:১৯ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের একশ চারতম সুরা তথা সুরা হুমাযাহ্ নাজিল হয়েছিল মক্কায়। এ সুরায় রয়েছে ৯ আয়াত।

সুরা হুমাযায় অন্যদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণকারী বা পরচর্চাকারী ও মুমিনের গিবতকারী, দরিদ্রদের নিন্দুক বা বিদ্রুপকারীদের ও একের কথা গুপ্তচর হিসাবে অন্যের কাছে তুলে ধরার বা চোগলখুরির  এবং ধন-সম্পদ-পূজারী বা সম্পদ জমাকারীদের নিন্দা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এই সুরায় এই শ্রেণীর লোকদের জন্য নির্ধারিত দোযখ বা জাহান্নামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে। এই শ্রেণীর লোকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি এবং তাদেরকে অপমানজনকভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর জাহান্নামের আগুন সবকিছুর আগে তাদের হৃদয়ের ওপর চেপে বসবে এবং তাদের প্রাণ ও আত্মাকে পুড়তে থাকবে।

কোনো কোনো মুফাসসির মনে করেন সুরা হুমাযাহ্ নাজিল হয়েছে ওলিদ বিন মুগাইরা সম্পর্কে। এই লোকটি মহানবী (সা) সম্পর্কে তাঁর অনুপস্থিতিতে অপপ্রচার চালাত এবং তাঁর সামনে ও পেছনে উপহাস আর বিদ্র্রুপাত্মক অঙ্গভঙ্গি করত। আবার কেউ কেউ মনে করেন এই সুরা নাজিল হয়েছিল কঠোর ইসলাম-বিদ্বেষী কুখ্যাত মুশরিক আখনাস বিন শারিক্ব, উমাইয়্যাহ বিন খালা ও আ'স বিন ওয়ায়েল সম্পর্কে।  তবে এটা স্পষ্ট সব যুগের নিন্দুক, বিদ্রুপকারী, গিবতকারী ও  চোগলখোর শ্রেণীর সব মানুষের জন্যেও প্রযোজ্য সুরা হুমাযার বক্তব্য। এবারে এই সুরার অর্থ বা বঙ্গানুবাদ শোনা যাক। অসীম দয়াময় ও অনন্ত করুণাময় আল্লাহর নামে: (১)ধ্বংস ও দুর্ভোগ প্রত্যেক বিদ্রুপকারী ও নিন্দাকারীর জন্য; (২) যে সম্পদ সঞ্চয় করে এবং তার খুবই হিসাব রাখে; (৩) তার ধারণা ছিল যে, তার সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে; () কখনও না, তাকে অবশ্যই হুতামায় নিক্ষিপ্ত করা হবে; () তুমি কি জান হুতামা কী? (৬) এ আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন, (৭) যা হৃদয় অবধি পৌঁছে যাবে; () এ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে (৯) দীর্ঘায়িত স্তম্ভের সাথে।

হুমাযাহ্ শব্দটি এসেছে ভাঙ্গা শব্দটি থেকে। গিবতকারী ও ছিদ্রান্বেষণকারীরা অন্যদের ব্যক্তিত্বকে ভেঙ্গে চুরমার করে বলে এই শ্রেণীর লোকদের হুমাযাহ্‌ বলা হয়। লুমাযাহ শব্দের অর্থও একই ধরনের। সুরা হুমাযাহ্‌'র প্রথমেই বলা হয়েছে: ধ্বংস ও দুর্ভোগ প্রত্যেক বিদ্রুপকারী ও নিন্দাকারীর জন্য!--  গিবত ও চোগলখুরির ফলে মানুষের মধ্যে হিংসা ও প্রতিহিংসা এবং শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ে। যারা নানা ধরনের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে অন্যকে বিদ্রুপ ও উপহাস করে এবং অপবাদ দেয় তাদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে এই সুরায়। সুরা হুমাযার বক্তব্য অনুযায়ী যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে তাদের মধ্যে জেগে-ওঠে নানা ধরনের মন্দ স্বভাব। যেমন, অন্যদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। তাই ব্যাপক সম্পদের অধিকারী হয়ে কেউ যেন অহঙ্কার ও গর্বের ফাঁদে না পড়ে। ছিদ্রান্বেষণও এমন এক জঘন্য স্বভাব যে কুরআন মজিদ নানাভাবে এই অসৎ কাজকে নিষিদ্ধ করে বক্তব্য রেখেছে ও ছিদ্রান্বেষীকে তিরস্কার করেছে। সম্পদের পূজারীরা ভাবে যে সম্পদ থাকলেই তারা অমর হয়ে যাবে এবং কখনও অসুখ হলেও টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ থাকবে চিরকাল!

মানুষের মন্দ ও ভালো চিন্তা আর কাজ তার নিজের ওপর ও অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে। ছিদ্রান্বেষণও হচ্ছে এমনই এক রোগ যে তা ছিদ্রান্বেষী ও অন্যদের ওপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলে। ছিদ্রান্বেষীকে খুবই মন্দ পরিণতির শিকার হতে হবে। এ ধরনের মানুষ কলঙ্কিত হয়। মুমিনের সম্মান মহান আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের সম্মানকে হিংসুক ও দুর্মুখ লোকদের মাধ্যমে বিপদাপন্ন হতে দেন না।  ফলে পরকালের কঠোর শাস্তি ছাড়াও দুনিয়ার জীবনেই ছিদ্রান্বেষীদের কলঙ্কিত করেন মহান আল্লাহ। হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ) মহানবী (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন: মু'মিনদের দোষ-ত্রুটির সন্ধান করো না। কারণ যে তার ভাইয়ের দোষত্রুটির সন্ধান করে মহান আল্লাহও তার দোষ-ত্রুটি খোঁজেন ও সেসব অন্যদের কাছে প্রকাশ করে তাকে কলঙ্কিত করেন যদিও সে ঘরের ভেতরেই থাকে।

পবিত্র কুরআনে মানুষের দোষ-ত্রুটি ও সেসব সংশোধন এবং নির্মূলের উপায় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। কোন্ কোন্ স্বভাব, প্রথা ও আচার-আচরণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও দোষণীয় তা উল্লেখ করা হয়েছে এই মহাগ্রন্থে। পবিত্র কুরআন গিবত বা পরচর্চা, অশালীন কথা বলা বা গালি দেয়া, উপহাস করা, মিথ্যা কথা বলা, অসহিষ্ণুতা, কার্পন্য ও অজ্ঞতার মত নানা মন্দ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে এইসব মানসিক রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে এবং এসব স্বভাবকে নির্মূল করতে বলেছে। অবশ্য নবী-রাসুল ও মাসুম ব্যক্তিবর্গ ছাড়া কোনো মানুষই ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্ত নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল মানুষের উচিত নিজের বদ স্বভাব ও ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো শনাক্ত করা এবং সেগুলো দূর করার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া।  

এখানেই শেষ করছি সুরা হুমাযার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আজকের এই আলোচনা।# 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ