ডিসেম্বর ২৬, ২০২০ ১২:১৭ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িত। তাদের উপর এবং নির্বাচনি ব্যবস্থার উপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা বিতর্ক, দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে  সম্প্রতি ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসিডেন্টের কাছে যে আবেদন জানিয়েছেন তা নিয়মতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিকভাবে করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে যথাযত ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশা করেন।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব ড. বদিউল আলম মজুমদার,সম্প্রতি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসিডেন্টের কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন। এই আবেদনের যৌক্তিকতা কতটা?

প্রেসিডেন্টকে দেশের বিশিষ্ট ৪২ নাগরিকের আবেদন

বদিউল আলম মজুমদার: দেখুন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের নানা অনিয়মের বিরুদেধ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসিডেন্টের কাছে সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের যে আবেদন জানিয়েছেন তার যৌক্তিকতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যাতে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বেগবান হয় এবং অব্যাহত থাকে। কিন্তু আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের উপর থেকে এবং নির্বাচনি ব্যবস্থার উপর থেকে  মানুষের আস্থা চলে গেছে। আর নির্বাচনই হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পন্থা। আর যদি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক পন্থা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দেশে অনিয়মতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা বদলের পথ প্রশস্থ হবে। আর সেটি কারও জন্যই কাম্য নয়। এটা হোক তা আমরা চাই না।

আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশন অভূতপূর্ব কতগুলো কাজ করেছে। এর আগের নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে নয়-ছয় করেছে। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নি কিংবা করতে পারে নি। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতগুলো আর্থিক দুর্নীতি/ অসাদাচরণে লিপ্ত রয়েছে।

দেখুন, কোনো প্রতিষ্ঠানই দায়বদ্ধতার উর্ধ্বে নয়। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূণ প্রতিষ্ঠান। যদি দেশে একটি স্বাধীন শক্তিশালী এবং কার্যকর নির্বাচন থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাও কার্যকর হওয়ার পথ সুগম হতে পারে।

রেডিও তেহরান:  সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানানোর পর নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, এই আবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি দাবি করেছেন যে, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনটারই ভিত্তি নেই। তার এ বক্তব্যকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ

বদিউল আলম মজুমদার: দেখুন, আমরা তো একটা উদ্দেশ্য নিয়েই প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছি। অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই অর্থে- রাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর উপরই নির্ভর করে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারার প্রাণ দিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতার জন্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু মানুষ তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। এই নির্বাচন কমিশন সেটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আর সেজন্যেই আমরা চিঠি দিয়েছি প্রেসিডেন্টকে যাতে এই নির্বাচন কমিশন তাদের অপকর্মগুলো অব্যাহত না রাখতে পারে। আমরা সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে আবদেন করেছি।

রেডিও তেহরান: শাহাদাত হোসেন চৌধুরী দাবি করেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট চেষ্টা করছে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য। তার এ দাবিকে কিভাবে দেখবেন আপনি?

বদিউল আলম মজুমদার: আমাদের নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমস্যা হচ্ছে যেসব ব্যক্তি এইসব সাংবিধানিক পদে নিযুক্ত হয়েছেন তাদের দুর্বলতা রয়েছে। তাদের দুর্নীতি, দুর্বলতা, তাদের পক্ষপাতদুষ্টতা এবং তাদের অপকর্মের জন্যই এই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন কার্যকর নয়। শুধুতাই নয়-তারা দেশের এবং জনগণের অপূরণীয় ক্ষতি করছে।

রেডিও তেহরান:  বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বড় রকমের হোঁচট খেয়েছে এবং এর জন্য নির্বাচন কমিশনের দায় দায়িত্ব রয়েছে বলে এর আগে বিভিন্ন মহল থেকে বক্তব্য দেয়া হয়েছে? আপনারও কি তাই মনে হয়?

নির্বাচন কমিশন

বদিউল আলম মজুমদার: অবশ্যই; আমারও তাই মনে হয়। এই নির্বাচন কমিশন চরম জালিয়াতির নির্বাচন কমিশন। যেমন ধরুন-গত যে জাতীয় নির্বাচন হলো সেই নির্বাচনে ২১৩ টা কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। বিএনপির মতো দল ১১০০/১২০০ কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগও দুই কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছে। এগুলো তো সম্পূর্ণ বানোয়াট তথ্য। বানোয়াট নির্বাচনি ফলাফল। ফলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা তারা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে।

রেডিও তেহরান: প্রেসিডেন্টের কাছে বিশিষ্টজনেরা যে আবেদন জানিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ কি হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

বদিউল আলম মজুমদার: দেখুন, আমি আগেও বলেছি যে, সম্পূর্ণ সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছি। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং সবার অভিভাবক। আমি নিশ্চিত এই গুরুতর অভিযোগগুলো উনি অগ্রাহ্য করবেন না। এসব অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যথাযত গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে বিহীত ব্যবস্থা নেবেন।

রেডিও তেহরান: তো ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অভিযোগ গঠনের জন্য ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রেসিডেন্টের কাছে যে আবেদন জানিয়েছেন সে সম্পর্কে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি

বদিউল আলম মজুমদার: আপনাকেও ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৬

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
  •