ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১ ১৭:০৮ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন আল-জাজিরা-বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন-দৈনিক প্রথম আলো
  • অর্থের জন্য বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা যাচ্ছে না- পররাষ্ট্রমন্ত্রী-দৈনিক ইত্তেফাক
  • এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ভেঙে হলে ঢুকলেন শিক্ষার্থীরা-দৈনিক যুগান্তর
  • সব হল খুলে দাও-সরব শিক্ষার্থীরা- সমকাল
  • দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সংকট উত্তরণে বিএনপিকে নেতৃত্ব নিতে হবে-মানবজমিন
  • প্রযুক্তিতে বাংলার বিশ্বায়ণ-অনিয়ম-অবহেলার চক্করে চার বছর-কালের কণ্ঠ

ভারতের শিরোনাম:

  • ধমকানি,চমকানি জেলের ভয় দেখাবেন না, মমতার তোপ কি নোটিসের দিকে?-আনন্দবাজার পত্রিকা 
  • আস্থা ভোটে হার, পুদুচেরিতে সংখ্যাগষ্ঠিতা হারাল কংগ্রেস সরকার, ইস্তফা মুখ্যমন্ত্রীর-সংবাদ প্রতিদিন
  • ব্লাকমেল করে ৬৬ জন মাহিলাকে ধর্ষণ, পুলিশের জালে ডেলিভারি বয়-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১.শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তো অনেকটা স্বাভাবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাটা কি এখন খুব ঝুঁকিপূর্ণ?

২.ট্রাম্পের শেষ দুই মাসের শাসনামলে ১০টি মহড়া চালিয়েছে ইরান। এই সব মহড়ার কি গুরুত্ব ছিলো?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ মে ক্লাস শুরু, হল খুলবে ১৭ মে- প্রথম আলো

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, আগামী ১৭ মে থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে থেকে। দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনের শিক্ষামন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। দুপুর দুইটায় এই ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পরিস্থিতি আছে কি না তা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন।  করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে প্রায় এক বছর ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে।

আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যেই আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আজ সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। মন্ত্রিসভার বৈঠকটি ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন-আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন আল-জাজিরা-প্রথম আলো

আল-জাজিরা

অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্র প্রচারের পর বাংলাদেশে যে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং যেভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে আল–জাজিরা উদ্বিগ্ন। তথ্যচিত্রের প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেছেন।

২১ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলার অনলাইন সংস্করণে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তথ্যচিত্রের প্রযোজক উইলিয়াম থোর্নের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার মাসুদ হাসান খান।

উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের তথ্যচিত্র প্রথম প্রচারের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। 

বিবিসির প্রতিবেদনের প্রথম অংশ: আল–জাজিরা কেন উদ্বিগ্ন

প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন জানিয়েছেন, যাঁদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া তাঁদের উদ্বিগ্ন করছে। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে যারা কন্ট্রিবিউট করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অবশ্যই গুরুতর। এখানে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা সত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে এটা (আইনগত পদক্ষেপ) একটি মারাত্মক চেষ্টা। 

১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয় ঢাকার একটি আদালতে এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের ওপর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। 

মামলার আবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী বাংলাদেশি জুলকারনাইন খান সামি এবং আল–জাজিরার ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান সম্পাদক মোস্তেফা স্যোয়াগ।

উইলিয়াম থোর্ন বলেন, স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার ছাড়াও যাঁদের কাঁধে বিষয়টি চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তাঁদের পরিবারের বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ‘অনুসন্ধানে যেসব তথ্য-প্রমাণ হাজির করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর জবাব খুঁজে বের করতে না পেরে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে।’

আল–জাজিরার প্রায় এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে মূলত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তাঁর তিন ভাইয়ের কার্যক্রম দেখানো হয়েছে। জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই ২০০৪ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

মামলা থেকে অব্যাহতি ২০১৯ সালে

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর ১৫ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে জানায়, আনিস ও হারিছ আহমেদ দুজনই যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। আর ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আনিস ও হারিছকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল।

১৬ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যখন তাঁর ভাইদের সঙ্গে দেখা করেন, তার আগেই তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। 

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আল–জাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

ভাইদের পলাতক বলা হলো কেন

আল–জাজিরার প্রতিবেদন প্রচারের পর আত্মপক্ষ সমর্থন করে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, তিনি যখন তাঁর ভাইদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তার আগেই সরকার তাঁর ভাইদের সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও পরে তা নিশ্চিত করে বলেছেন, যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়াতেই তাঁদের সাজা মওকুফ করা হয়েছিল।

তাহলে আল–জাজিরার প্রতিবেদনে তাঁদের পলাতক বলা হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন বলেন, ‘আপনি সময়গুলো দেখুন। আপনি দেখুন ২০১৪-১৫ সাল। আমাদের হাতে স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যে জেনারেল আজিজ হারিছ আহমেদের জন্য সার্ভিং বিজিবি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ভুয়া পাসপোর্ট পেতে সহায়তা করেছেন।’

থোর্ন বলেন, ‘পুলিশের ওয়েবসাইটেও তাঁর (আজিজ আহমেদ) ভাই তখন মোস্ট ওয়ান্টেড, যে সময় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতির কথা বলা হচ্ছে, ঘটনা তারও চার বছর আগের। জেনারেল আজিজ তাঁর ভাইদের ভুয়া পাসপোর্ট পাওয়া ও ইউরোপে যেতে সহায়তা করেছেন। বিশ্বজুড়ে যে সম্পদ তাঁরা করেছেন, কোনোভাবে যেটি সম্ভব হয়েছে, কারণ তাঁদের ভাই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।’

ইসরায়েল নিয়ে বিতর্ক

আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নজরদারি করার প্রযুক্তি ইসরায়েল থেকে আমদানি করেছে।

তবে এ অভিযোগ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছে।

সেনাবাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের জন্য নজরদারি যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়টি জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব শুরুর আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

তাহলে প্রতিবেদনে আজিজ আহমেদের নাম জড়ানো হলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে থোর্ন বলেন, ‘হয়তো ক্রয়প্রক্রিয়া আগে শুরু হয়েছে, কিন্তু প্রতিবেদনে আমরা শুধু বলেছি ২০১৮ সালে জেনারেল আজিজ দায়িত্ব নেওয়ার পর চুক্তিপত্রে সই হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হলো জাতিসংঘ মিশনের জন্য এমন বিতর্কিত স্পাইওয়্যার কখনোই ব্যবহার করবে না। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদেরও তা ব্যবহার করতে দেবে না। শান্তিরক্ষা মিশনে এ ধরনের বিতর্কিত প্রযুক্তির ব্যবহার স্ট্যান্ডার্ড ইস্যু না। এ নিয়ে জাতিসংঘ যেমন প্রশ্ন তুলেছে, আমরাও তুলেছি।’

‘অর্থের জন্য বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা যাচ্ছে না’-ইত্তেফাক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, নিজস্ব অর্থায়নের শর্তের কারণে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া থমকে আছে। রবিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টাকার জন্য এই প্রক্রিয়া আটকে আছে। আমরা টাকার দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারিনি। তিনি বলেন, প্রাথমিক আলোচনায় প্রতি বছর ৬০ কোটি ডলার (৫ হাজার কোটি টাকা) দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ড. মোমেন বলেন, ভাষা ব্যবহারকারীর দিক থেকে বাংলা পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই। প্রথম পাঁচটি দাপ্তরিক ভাষা হয়েছিল জাতিসংঘ যখন সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে একটি নতুন ভাষা হয়েছে সেটি আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো এর খরচ বহন করেছে। জাতিসংঘ সবসময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে।

তিনি বলেন, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষার জন্যও প্রস্তাব করা হয়েছিল। একই কারণে সেগুলোও দাপ্তরিক ভাষা হয়নি। জাতিসংঘে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য পাওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন একটা বাংলা রেডিও পেয়েছি, প্রত্যেক সপ্তাহে অনুষ্ঠান করে। এশিয়ার ওপর ইউএনডিপির যে রিপোর্টটা হয়, সেটা তারা ইংরেজির সঙ্গে বাংলাও করে, তাদের খরচে।

ঢাকায় বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কূটনীতিকরা। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, একাডেমির রেক্টর মাসুদ মাহমুদ খন্দকার বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিভিন্ন ভাষাভাষী বিদেশি কূটনীতিকদের জরুরি প্রয়োজনীয় কিছু বাংলা বাক্য শেখানো হয়।

প্রযুক্তিতে বাংলার বিশ্বায়ন অনিয়ম-অবহেলার চক্করে চার বছর-কালের কণ্ঠ

হাত লাগাতে হবে না, কথা বলে টাইপ করা যাবে। লিখিত পাঠ কম্পিউটার পড়ে শোনাবে। মুদ্রিত বই-দলিল দ্রুত সফটকপিতে রূপান্তরিত হবে। অন্য ভাষায় বাংলা শব্দ বা পাঠের সঠিক যান্ত্রিক অনুবাদ পাওয়া যাবে। সার্চ ইঞ্জিনে বাংলায় কোনো বিষয় খুঁজতে কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা যাবে। বাংলা ভাষার বিশাল মৌখিক ও লিখিত নমুনা (করপাস) গড়ে উঠবে। এমন অনেক স্বপ্নের কথা শুনিয়ে ১৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও তা স্বপ্নই রয়ে গেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে নেওয়া প্রকল্পে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প গ্রহণের পর এক দফা সময় বাড়লেও বাস্তবায়নের চিত্র হতাশাজনক। আরেক দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করা হচ্ছে। তাই ২০২৩ সালের আগে আলোর মুখ দেখছে না ১৬টি ডিজিটাল টুল, সফটওয়্যার ও রিসোর্স।

ভাষাশহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার বিশ্বায়নে এমন দীর্ঘসূত্রতা মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য এসেছে উচ্চপর্যায় থেকে।

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় ভাষার বিশ্বায়ন হচ্ছে। যেসব ভাষা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না সেগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও ব্যবহারযোগ্যতা বাড়াতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামের প্রকল্পটি শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে প্রথম দফার সংশোধন অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি তখন। পরে আবার সংশোধন করে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়ন সন্তোষজনক না হওয়ায় আরেক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার আবেদন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার একটি প্রধান শর্ত বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিবান্ধব করা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগ হলে দেশের প্রশাসনিকব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও যোগাযোগ কাঠামোতে নতুন পরিবর্তন সূচিত হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা লাভ করা ও উৎকর্ষে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃস্থানীয় ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, বাংলা ভাষার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে (ওয়েব, মোবাইল, কম্পিউটার) ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন সফটওয়্যার, টুল ও রিসোর্স উন্নয়ন করা, যাতে বাংলা ভাষা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলা ভাষার জন্য ১৬টি সফটওয়্যার, টুল ও রিসোর্স উন্নয়ন করার কথা ছিল। এটি বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবহারকারীরা বিনা মূল্যে ৪০টি সুবিধা পেত। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, করপোরেট খাত, গণমাধ্যম, গবেষক, আইওটি এবং রোবটিকস উপকৃত হতো।

কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নয়, কিন্তু ইন্টারনেটে যুক্ত, সাধারণভাবে এমন যন্ত্র ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) পণ্য হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে রোবটিক্স হলো প্রযুক্তির একটি শাখা, যেটি রোবট ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে।

এই প্রকল্পের অধীন প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে—বাংলা করপাস উন্নয়ন, বাংলা থেকে পৃথিবীর প্রধান ১০টি ভাষায় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক অনুবাদক উন্নয়ন, বাংলা টাইপ করা ও হাতের লেখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্তকরণ ও কম্পোজ, কথা থেকে লেখা এবং লেখা থেকে কথায় রূপান্তর, জাতীয় বাংলা কি-বোর্ডের উন্নয়ন, বাংলা ফন্ট রূপান্তর ইঞ্জিন, বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সংশোধক উন্নয়ন, স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার উন্নয়ন, বাংলা অনুভূতি বিশ্লেষণের সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষার জন্য কি-বোর্ড উন্নয়ন।

এ প্রকল্পটি শুরুর আগেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টিম ইঞ্জিনের কাছ থেকে বাংলা অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন বা ওসিআর কেনা হয়েছিল। তারা এই সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করে ২০১৪ সালে। কিন্তু সোর্সকোড না থাকায় তা ব্যবহার করা যায়নি।

প্রকল্পটির প্রথম দিকে ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন মোস্তাফা জব্বার। পরে তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ আলাদা করা হয়।

প্রকল্পটি শুরুর সময় মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য কম্পিউটিং জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণে কাজ শুরু করা। প্রাণের বাংলা ভাষা নিয়ে কোনো অবহেলা করতে দেব না।’

প্রকল্পটির সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৯ সালের মে মাস থেকে আইসিটি বিভাগ আমার অধীনে নেই। এমনকি আমি যে বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ছিলাম সেখানেও বর্তমানে নেই। এ কারণে এর সর্বশেষ অবস্থা আমার জানা নেই। আমি যখন ২০১৮ সালে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিই, তখন প্রকল্পটিতে কেবল পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ করার পর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল। বুয়েটকে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) এই প্রকল্পের স্পেসিফিকেশন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।’

মন্ত্রী বলেন, টিম ইঞ্জিন নামে একটি কম্পানি ‘পুঁথি’ নামের একটি ওসিআর তৈরি করেছিল। পরবর্তীকালে আইসিটি বিভাগ কিনে নিয়ে সেটিকে ব্যবহারযোগ্য ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তারা টিম ইঞ্জিন সফটওয়্যারের সোর্সকোর্ড দেয়নি। যার ফলে ওসিআরকে আবার শূন্য থেকে শুরু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে রিভ সিস্টেমকে ওসিআর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ওসিআর আইসিটি বিভাগের সফটওয়্যার কোয়ালিটি ল্যাবে দিয়ে দেখা গেল এটা পুরোটাই পাইরেসি করা। অর্থাৎ অন্যদের সোর্সকোড নিয়ে এটি বানানো হয়েছিল। পরে চুক্তি বাতিল করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানকে অন্য যে সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা বহাল আছে।

তবে ১৪ কোটি তিন লাখ ৩৭ হাজার টাকার কয়েকটি কাজ করছে দেশীয় সফটওয়্যার কম্পানি রিভ সিস্টেমস। এর মধ্যে ‘স্পেলিং অ্যান্ড গ্রামার এরোর চেকার’-এর জন্য বরাদ্দ পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অভ্র, নিকষ বাংলা (সরকারি অর্থায়নে তৈরি), অঙ্কুর, মজিলা অ্যাড অন, শুদ্ধ শব্দ, সৃষ্টি, গুগলসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অফলাইন ও অনলাইনে বিনা মূল্যে ‘বাংলা স্পেলিং চেকার’ সেবা দিচ্ছে। সেখানে প্রায় একই জিনিস তৈরি করার জন্য ওই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। পরে দেখা গেল রিভ সিস্টেমের সফটওয়্যার অন্যদের সোর্সকোড নিয়ে তৈরি।

বিজয় কি-বোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক এই তথ্য-প্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলতে পারি, বাংলা ভাষার ডিজিটাইজেশনে দীর্ঘসূত্রতা আমাদের ক্ষতি করছে। আমরা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার জন্য আবেদন করেও হতে পারছি না। কারণ আমাদের মেশিন ট্রান্সলেশনসহ কারিগরি সক্ষমতা নেই। চার বছরে এই টুলগুলো উন্নয়ন করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের এই ব্যর্থতা কাম্য ছিল না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। জটিল কাজ, তাই সময় লাগছে। এটি এখন শেষের দিকে। আশা করছি, এটি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।’

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করীম গত শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মার্চে শুরু হয়েছিল। এর অগ্রগতি মাপা কঠিন। যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বুয়েটে। বাস্তব অগ্রগতি হয়তো ৪০ শতাংশের মতো হবে। একটি কম্পোনেন্ট শেষ হয়েছে, আরো ছয়টির কাজ চলছে। এই ছয়টির মধ্যে তিনটির ডেমো রিলিজ হবে মাসখানেকের মধ্যে, বাকিগুলো আসবে জুন-জুলাই মাস নাগাদ। আর অবশিষ্ট টুলগুলো হতে ২০২৩ সালের জুন-জুলাই পর্যন্ত লাগতে পারে।’

অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘টিম ইঞ্জিনকে সোর্সকোড দিতে হবে, সেভাবেই চুক্তি হয়েছিল। টিম ইঞ্জিনের সঙ্গে চারটি কম্পানির কনসোর্টিয়ামে যারা আছে তারা কাজ করছে। অন্যদিকে রিভ সিস্টেমের একটি কাজ বাতিল হয়েছে। কারণ তারা ওপেন সোর্সের কোডকে তাদের কোড হিসেবে জমা দিয়েছিল।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ও প্রকল্পটির বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য সৈয়দ আলমাস কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে অনেক আগে। এখানে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এই প্রকল্পে যারা কাজ করেছিল, তাদের কিছু সমস্যা হয়েছিল। কারো কারো কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। একটা সময় নির্ধারণ করে এটাকে দ্রুত শেষ করা উচিত। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ চাচ্ছি, সেখানে অনলাইনে মাতৃভাষার ব্যবহার বাড়াতে না পারলে এটি সফল হবে না।’

বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রকল্পের পরামর্শক মো. মামুন অর রশীদ গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আমরা তা বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। বাংলা ভাষায় এমন কাজের নমুনা নেই, তাই সময় লাগছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ নানা কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রি-টেন্ডার হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যারের কাজ দিয়েছিলাম রিভ সিস্টেমকে। তারা যে কোড দিতে চাচ্ছে তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। তাই আমরা এটি বাতিল করেছি। আমরা মাসখানেকের মধ্যে রি-টেন্ডার (পুনঃ দরপত্র) দিতে পারব।’

এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি:

আস্থা ভোটে হার, পুডুচেরিতে পড়ে গেল কংগ্রেস সরকার -দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারলেন না ভি নারায়ণস্বামী। নিজেদের পক্ষে মাত্র ১২ টি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। দরকার ছিল ১৪ টি। এরপরই স্পিকার ঘোষণা করেন, পুডুচেরি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন নারায়ণস্বামী। ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন রাজ্যপালের কাছে।

৩৩ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেসের ৬ জন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছিলেন। আর গত বছরের জুলাইতে এক ডিএমকে বিধায়ক ইস্তফা দেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল শাসক দল। আস্থা ভোট অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। 

এদিন আস্থা ভোটের আগে বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। সেখানেই বিজেপি তথা কেন্দ্রের কড়া সমালোচনাও করেন তিনি। যে যে বিধায়ক দল ছেড়েছেন, তাঁদেরও কটাক্ষ করেন। নারায়ণস্বামী বলেন, ‘বিধায়কদের সবসময় দলের প্রতি অনুগত থাকা উচিত। যে যে বিধায়করা ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁরা কখনওই জনগণের মুখোমুখি হতে পারবেন না। কারণ মানুষ তাঁদের সুবিধাবাদী বলবে।’ এরপরই আস্থা ভোটের আয়োজন হয়। একাধিক বিধায়কের ইস্তফার পর পুডুচেরির বিধানসভার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৬। এর মধ্যেই এদিনের ভোটাভুটিতে কংগ্রেস–ডিএমকে জোট পায় ১২ টি ভোট। বিপক্ষ পেয়েছে ১৪ টি ভোট। এরপরই স্পিকার ভি নারায়ণস্বামীর আস্থা ভোটে কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিধানসভা মুলতবিও করে দেন। 

সামনেই পুডুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে বড়সড় ধাক্কা খেল কংগ্রেস। এবার পুডুচেরিতে জারি হবে রাষ্ট্রপতি শাসন।

বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ, ফিরহাদ হাকিমের মেয়েকে তলব করল ইডি-সংবাদ প্রতিদিন

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনে অসঙ্গতির অভিযোগ এনে পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ (ববি) হাকিমের বড় মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে নোটিস দিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তলব করেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে নোটিসের বিষয় ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এবং এখনও পর্যন্ত কিছু শুনতে পাইনি।’’

সম্প্রতি প্রিয়দর্শিনীকে নোটিস দিয়ে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, মেয়ে এখনও কোনও ইডি-নোটিস পায়নি, মানহানির মামলা করব, বললেন ফিরহাদ হাকিম

কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি তাঁর মেয়েতে। মিথ্যে প্রচার করলে মানহানির মামলা করবেন। হুঁশিয়ারি তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিমের। কয়লা কাণ্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই) নোটিস ধরানোর পর থেকেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। তার মধ্যেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনে অসঙ্গতি এবং বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে ফিরহাদের বড় মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) নোটিস ধরানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত তেমন কোনও নোটিস তাঁদের হাতে এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ।

ব্লাকমেল করে ৬৬ জন মহিলাকে ধর্ষণ, পুলিশের জালে ডেলিভারি বয়-আজকাল

ধর্ষণ

সিরিয়াল কিলার দেখা যায় কিন্তু এই যুবক সিরিয়াল ধর্ষক!এমনই অভিযোগ বিশাল বর্মার বিরুদ্ধে। এখনো পর্যন্ত ৬৬ জন মহিলাকে ভয় দেখিয়ে ব্ল্যালমেল করে ধর্ষণ করেছে বিশাল। বিশাল ও তার বন্ধু সুমন মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফিডব্যাকের নামে ব্ল্যাকমেল করে একাধিক ধর্ষন,পুলিশের জালে মূল অভিযুক্ত সহ দুই।

ব্যান্ডেল কেওটা ত্রিকোন পার্কের বাসিন্দা বিশাল বর্মা। ফ্লিপকার্টের ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করে। সামগ্রী ডেলিভারি দিতে গিয়ে ফিডব্যাক দেওয়ার অছিলায় মহিলাদের ফোন নম্বর নেয়। হাই,  হ্যালো,  গুড মর্নিং মেসেজ পাঠিয়ে আলাপ জমায়। বন্ধুত্ব তৈরী করে। ভিডিও কল করে ছবি তুলে রাখে। সেই ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে।বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মূলত তার শিকার হয় গৃহবধুরা।

সম্প্রতি চুঁচু্ড়ার গৃহবধুর সঙ্গে একই ধরনের কাজ করে অভিযুক্ত। ওই গৃহবধু পুলিশকে জানায়,তার বাড়িতে ফ্লিপকার্টের সামগ্রী দিতে গিয়ে মোবাইল নম্বর চায়। বলে ফিড ব্যাক দেবেন কেমন তাদের সার্ভিস। তার মোবাইলে মেসেজ পাঠাতে পাঠাতে কয়েকদিনেই বন্ধুত্ব জমায় বিশাল। এরপর শুরু হয় ভিডিও কল, একদিন যুবকের বাড়িতে গেলে গৃহবধুকে ধর্ষষ করে বিশাল।বন্দুক ঠেকিয়ে গায়ের গয়না চাইলে মহিলা দিতে অস্বীকার করে।  বিশাল জানায় সে তার বন্ধুকে ডেকে এনে তাকে দিয়েও ধর্ষণ করাবে।এরপর মোবাইল থেকে বেছকিছু ছবি দেখায় মহিলাকে। যেখানে দেখা যায় আরো অনেক মহিলার সঙ্গে একই কাজে লিপ্ত সে। বিশাল জানায় এই গৃহবধু তার ৬৬ তম শিকার।

গৃহবধূ সেখান থেকে বেরিয়ে চুঁচু্ড়া থানার পুলিশকে গোটা ঘটনা জানালে চুঁচু্ড়া থানার একটি দল শনিবার রাতে ত্রিকোন পার্কে হানা দেয়। বিশাল বর্মার বাড়িতে ঢুকলে দেখা যায় সে অন্য এক মহিলার সঙ্গে লিপ্ত ছিল।পুলিশ ওই মহিলাকে জেরা করে জানতে পারে তাকেও একইভাবে ভয় দেখিয়ে কুকীর্তি করছিলো বিশাল। বিশালের মোবাইল ও তার কাছে থাকা বেশ কিছু মেরোরি কার্ডে অসংখ্য ছবি পায় পুলিশ, যেখানে অভিযুক্তের কুকীর্তি ধরা পড়ে ।

সেখানেই একটি ভিডিওতে পুলিশ দেখতে পায় হাতে বন্দুক নিয়ে বিশাল এক মহিলার মাথায় ঠেকিয়ে তার পায়ের কাছে হাতজোর করে আছে মহিলা।এরকম বেশকিছু ছবি পায় পুলিশ।যদিও পুলিশি জেরায় বিশাল জানায় সেটা আসল বন্দুক না,আর যাদের ছবি আছে তারা কলগার্ল।ছবি দেখেই বিশালের বন্ধু সুমন মন্ডলের কথা জানতে পারে তদন্তকারীরা।পেশায় রঙ মিস্ত্রী সুমনেরও বাড়ি কেওটাতেই।তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। দুজনকেই আজ চুঁচু্ড়া আদালতে পেশ করে দশ দিনের হেফাজতের আবেদন জানায় পুলিশ। সুমন চার মাস আগে বিবাহ করেছে তার স্ত্রী গর্ভবতী।স্বামীর গ্রেফতারের খবর পেয়ে শ্বাশুরিকে নিয়ে থানায় যান স্ত্রী ।সুমননের মা জানিয়েছেন তারা এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তার ছেলে বিশালের পাল্লায় পড়ে এই কাজ করেছে, ছেলে যে দোষ করেছে তার জন্য শাস্তীর দাবিও করেন তিনি। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
 

ট্যাগ