আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায় মিয়ানমার: অভিযোগ বাংলাদেশের
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিয়ে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায় মিয়ানমার। তবে তাদের এই উসকানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সীমান্তে মিয়ানমারের হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে অবহিত করতে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব। আজকের ব্রিফিংয়ে রাশিয়া ও ভারত তাদের প্রতিনিধি পাঠালেও চীনের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোকে গত সোমবার ব্রিফিং করে সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরেছিল সরকার।
এর আগে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে মিয়ানমার। তাদের দাবি, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ‘আন্তরিক সম্পর্ক’ নষ্ট করতে আরাকান আর্মি ও রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরসা উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য দায়ী। গতকাল সোমবার সকালে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মিয়ানমার একটি ব্যাখ্যা দেয়। পরে রাতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পেজে এই বৈঠকের তথ্য প্রকাশ করেছে।
মিয়ানমার সীমান্তের উৎকণ্ঠা কিছুতেই কাটছে না।
এদিকে মঙ্গলবারও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে চলছে গোলাগুলি। সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত থেমে থেমে উখিয়ার আনজুমান পাড়া সীমান্তের ওপারে একের পর ভারী বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে। ভয়ে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ‘আজকেও সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। মাঝে মধ্যে মর্টারশেলের শব্দে এপারের স্থলভূমি কেঁপে উঠে। মনে হচ্ছে মর্টারশেল এখানে পড়ছে। এমন অবস্থায় সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে।’
এ ছাড়া, আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়ার বিপরীতে নাফনদীর ওপারে থেমে থেমে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
সীমান্তের দুটি পয়েন্টে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী।
মিয়ানমার থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা এবং বাংলাদেশে বেসামরিক জনগণ হতাহত ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রত্যাশা করছে তারা।
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি
এদিকে, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গারা। শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের কাছে চিঠিটি পাঠান। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ২০১৭ সালে সামরিক জান্তা আট লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে। আমরা চিঠিতে জাতিসংঘকে জানিয়েছি, সামরিক জান্তা বাহিনী যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর আরও বড় আক্রমণ করতে পারে।
বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের নিন্দা ও উদ্বেগ
বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে সীমান্তে মিয়ানমারের উস্কানীমূলক তৎপরতার নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বারংবার সতর্ক করার পরেও দেশটির উস্কানিমূলক তৎপরতা বন্ধ না হওয়াটা চরম উদ্বেগজনক। খুব দ্রুত এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিলম্ব করা হলে সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদে মিয়ানমারের উস্কানিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে হবে।
একই সাথে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার দাবী জানান তারা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্ব-সম্মানে প্রত্যাবর্তনের মূল ইস্যুর দৃষ্টি ভিন্নখাতে ফেরানোর অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার সরকার সশস্ত্র ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই মিয়ানমার সরকারও বাংলাদেশের সীমান্তে গোলাগুলির ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। সীমান্তে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও এ সংঘর্ষের জের বাংলাদেশে এসে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। মানুষ হতাহত হচ্ছে। সীমান্তবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মিয়ানমারের ঔদ্ধত্য দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর বেপরোয়া তৎপরতা ও নিক্ষিপ্ত মর্টার সেলের আঘাতে বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/২০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।