মার্চ ০৪, ২০২৩ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তি সংকট নিয়ে সমালোচনা অনেক দিনেরই। কারণ অনেকেই চান না স্টেশনের কাউন্টারে ভিড় ঠেলে ট্রেনের টিকিট কাটতে। কিংবা নানা ব্যস্ততায় সময়ও হয়ে ওঠে না অনেকের। তাই অনলাইনে টিকিট কাটা দিন দিন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি চালু রয়েছে।

যাত্রীরা বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। সেখানেও ভোগান্তির খবর প্রায়ই আসে গণমাধ্যমে। একসময়ে শুরু হয় ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রনির একক অবস্থান আন্দোলন। আলোচনার ঝড় তুলে সারা দেশে। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও সংকট সমাধান হয়নি তেমনটি।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে এবং অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা করা এবং ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিট ব্যবস্থাকে আপগ্রেড করতে নতুন এই নিয়ম শুরু হয়েছে চলতি পয়লা মার্চ থেকে।শুরুর পর থেকে দেশের বিভিন্ন ট্রেন স্টেশনে যাত্রীরা এ নিয়ে দিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলেছেন নতুন সিস্টেম অনেকে বুঝতে সমস্যায় পড়ছেন আবার কেউবা বলছেন টিকিট প্রাপ্তির জন্য সুবিধা হয়েছে তাদের।  

বাংলাদেশের রেলওয়েতে এখনও মান্ধাতার আমলের কাউন্টার-ভিত্তিক টিকেট কাটার প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে নতুন সিস্টেম নিয়ে অনেকে সুফল আশা করছেন। বলছেন সময় গেলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে রেলওয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। অনেক যাত্রীরা জানালেন, জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিজের টিকিট নিজেই কিনতে হবে,এটা তাদের জানা ছিল না। এখানে আসার পর ঘুরে গিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে  তারপর টিকিট কেটেছেন তারা। কিছুটা ভোগান্তি হলেও নতুন নিয়ম ভালো লেগেছে তাদের।

তবে নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় বিভিন্ন রেলস্টেশনের যাত্রীদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন বুথের কথা থাকলেও সেটি বসানো হয়নি অনেক রেল স্টেশনে। তবে তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে যাত্রীদের বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে দেখা গেছে। যদিও সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম বন্ধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবাই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।নতুন এই নিয়ম শুরুতে কিছুটা ঝামেলা মনে হলেও পরবর্তী সময় এটি যাত্রীদের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।

নতুন পদ্ধতিতে টিকিট কাটা দুইভাবে করা যায়। বিআর (স্পেস দিয়ে) জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ লিখে এসএমএস করতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে। স্মার্টফোন বা ডেস্কটপে রেল সেবা অ্যাপ এবং রেলওয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও একই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধন একবার করলেই পরে যে কোনো সময় টিকিট কাটা যাবে। এরপর টিকিট কেনা যায় অনলাইনেও, আবার কাউন্টারেও। নিবন্ধন করলেও কাউন্টারে টিকিট নেয়ার সময় অথবা অনলাইনে কেনা টিকিট প্রিন্ট করার সময় সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ফটোকপি নিয়ে যেতে হয়। ট্রেনে যাত্রার সময়ও পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকতে হবে। রেলকর্মীরা পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিট মিলিয়ে দেখবেন। যদি না মেলে তাহলে গুণতে হবে জরিমানা। যারা টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠবেন, তাদের টিকিট কাটার জন্য রশিদের বদলে থাকবে পস মেশিন। তখনও দেখাতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র।

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা বাবা অথবা মায়ের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিট কাটতে পারবে। এক্ষেত্রে টিকেটের উপরে লেখা নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাই করতে ভ্রমণের সময় বাধ্যতামূলকভাবে ওই শিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি সঙ্গে রাখতে হবে।

তবে এই বয়সীরা জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকেই টিকিট কাটতে পারবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ও পাসপোর্টের ছবি আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে। ভ্রমণকালে সব ধরনের যাত্রীকে অবশ্যই নিজের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি বা অথবা পাসপোর্ট/ছবি সংবলিত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। নিবন্ধিত এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভ্রমণকালে কেবল টিকিট কাটা ব্যক্তির পরিচয়পত্র থাকলেই চলবে। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের উপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।#

পার্সটুডে/ বাদশাহ রহমান/ বাবুল আখতার/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ