আন্তর্জাতিক নারী দিবস: কেমন আছে বাংলাদেশের নারীরা?
(last modified Sun, 08 Mar 2020 09:21:05 GMT )
মার্চ ০৮, ২০২০ ১৫:২১ Asia/Dhaka
  • দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন জাহেদা বেগম
    দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন জাহেদা বেগম

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের অধিকার সচেতন করার এ দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ঘটা করে পালন করছে নানা নারীবাদী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ।

নব্বই দশকের পর থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের অভ্যুদয়ের ফলে নারীদের মধ্যে একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির কারণে সমাজে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হতে শুরু করে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্র নারীদের অধিক সংখ্যায় আগমনের ফলে উচ্চ শিক্ষা শেষে নানামুখী পেশায় তারা এগিয়ে যেতে থাকে।  

সরকারি ও বেসরকারি নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের আরও কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীর সমতা অর্জন হয়ে যায়। বর্তমানে প্রাথমিকে ছাত্রীদের হার প্রায় ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে প্রায় ৫৪ শতাংশ। শিক্ষার এই দুই স্তরে নারী ও পুরুষের সমতার দিক দিয়ে ভর্তির বিষয়টি শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য’ প্রতিবেদন বলছে, সারা বিশ্বেই শীর্ষ অবস্থানে আছে।

সরকারের শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে- কলেজ পর্যায়ে এখন নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৪৮ শতাংশের বেশি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ৩৬ শতাংশের ওপরে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরে র‍্যালি

অনুরূপভাবে, মাদ্রাসার প্রাথমিকস্তর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রীর হার সমান। দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত ছাত্রীদের হার ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, চিকিৎসা, আইনসহ পেশাগত শিক্ষায় নারীরা এবার প্রথমবারের মতো পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছেন। পেশাগত শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের হার এখন ৫৪ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি সরকারি হাইস্কুল শিক্ষিকা নুরুন্নাহার মেরী জানালেন তার আত্মবিশ্বাসের কথা। তিনি রেডিও তেহরানকে বলেন, এখনো নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, উন্নত দেশেও এ বৈষম্য শতকরা ১০০ ভাগ দূর করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের নারীদের নানামুখী উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনের পাশাপাশি এখনো অনেক নারীই জানেন না আন্তর্জাতিক নারী দিবস কী জিনিস এমনকি এরকম কোন নামও শোনেন নি। রাজধানী ঢাকা শহরের একজন গৃহপরিচারিকা অকপটে এমন  অজ্ঞতার কথা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাইহানা বললেন, নারীরা যদি তাদের দায়িত্ব সচেতন হন তবে তাদের অধিকার আপনাআপনিই এসে যাবে। 

নারী অধিকার প্রসঙ্গে বরিশালের একজন ইউনিয়ন মহিলা নেত্রী রেডিও তেহরানকে বলেন, তারা এখন সমাজে যথেষ্ট অধিকার ভোগ করছেন। নারীরা যেভাবে শিক্ষা, চাকরি-বাকরি ও উপার্জনের পথে সাহসের সাথে এগিয়ে আসছেন তাতে তারা আরো স্বাবলম্বী হতে সক্ষম হবে। আর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পরিবারে এবং সমাজে  তাদের অধিকার আরো নির্বিঘ্ন হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেছেন, নারীদের অধিকার রক্ষা ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং ইতিবাচক কর্মসূচি বজায় থাকার কারণে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে শিক্ষার সব স্তরে নারীদের এগিয়ে নেওয়াসহ গুণগত শিক্ষার জন্য এই খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে।

এত কিছু অগ্রগতি অর্জন সত্ত্বেও আলোর নিচে অন্ধকারের মতো বর্তমান সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও বেশি করে সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা।# 

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ