এমসি ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: কাদের বললেন কাউকে ছাড় নয়, ফখরুল জানালেন নিন্দা
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ধর্ষণের মতো অপরাধ সবচেয়ে বেশি ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন,সব রকম অপরাধের সাথে জড়িত সরকারের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা।
আজ রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া সিলেট এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি’র ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে আজ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
ওদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,এমসি কলেজের এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন,অপকর্মের জন্য নিজের দলের কর্মীদেরও শাস্তি দিতে এতটুকুও কুণ্ঠিত নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেটা বারবার প্রমাণ হয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছে নিজ দলের সমর্থক বা নেতারাও অপরাধী হলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে কোথাও কোনো বাধা দেয়নি।
উল্লেখ্য,গত শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেট কারযোগে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার এক দম্পতি। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ-ছয়জন যুবক তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে ১৯ বছর বয়সী তরুণী গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন তারা। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে শাহপরান থানা পুলিশ।
গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ আজ রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে ওই রাতে কী ঘটেছিলে তার বর্ণনা দেন।আজ দুপুরে পুলিশ ওই গৃহবধূকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আদালতে নিয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি আদালতে তার জবানববন্দি দেন।
এ ঘটনায় ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করে ভিকটিমের স্বামী। আসামীরা সকলেই ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য।
এদিকে আজ রোববার সকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে সুনামগঞ্জের ছাতক সীমান্ত এলাকা থেকে এবং অপর একজন আসামি অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে ঘটনার পরই অভিযুক্তদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ। পুলিশ অভিযুক্ত সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান,চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুইটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে।
ওদিকে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদে বলেছেন,এ ঘটনায় জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ করবেন।
তবে,অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্র ও স্থানীয় নাগরিকদের অভিযোগ করোনা পরিস্থিতে কলেজ এবং ছাত্রাবাস বন্ধ থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের এসব কর্মীদের ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে দিয়ে তিনিও অপরাধী। এদিকে সিলেট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রখমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা হলে আজ তারা বিবৃতি দিয়ে অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি এবং একই সাথে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাসের সুপারের অপসারণ দাবি করেছে।
তাছাড়া, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় সিলেটে পুলিশ কমিশনার কার্যালয় অভিযুখে পদযাত্রা করেছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে, রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছে।
এরপর বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ নেতারা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে এসব অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানায়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুরর রশীদ/২৭