বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আতঙ্কজনক হারে বৃদ্ধি, বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির মাঝে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা আতঙ্কজনক হারে বেড়ে চলছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদ, গ্রেফতার কোনো কিছুতেই থামছে না এ ভয়াবহতা। এরকম পরিস্থিতিতে দেশের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নাগরিক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে ধর্ষণ থামবে না। আজ (শুক্রবার) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের প্রতিবাদ
ওদিকে, বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ‘নিউইয়র্কের ক্ষুব্ধ সচেতন প্রবাসীরা’ এই ব্যানারে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ধর্ষণের বিচার না হওয়ায় বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। তাই ধর্ষণের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যেন কেউ ধর্ষণ করার সাহস না পায়। প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ না করতে পারলেও যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্বেগ
দেশে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ সংস্থার তথ্যে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে ৩৪০ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ ১২৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া তিন শিশুসহ ১০৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ১০ শিশুসহ ২০ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ছয় শিশুসহ ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে নয়জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে চারজন। এর মধ্যে শিশু দুজন। চার শিশুসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে সাতজন।
নয় মাসে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫ জন নারী: ৬২৭টি শিশু
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন হতভাগা নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আসক আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
আসক আরো জানায়, গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী।
এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন।
এছাড়া এ সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার গত ৯ মাসের পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে ১০৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।
সমাজ বিশ্লেষকগণ মনে করেন, সমাজ থেকে ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধগুলো প্রতিরোধের দায় শুধু পরিবারের নয়। এজন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহলকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
নারী নেত্রী ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়া, সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্ববোধের অভাব এবং অসৎ সঙ্গের কারণে ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা মনে করেন, বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও অপব্যবহারের কারণে ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধগুলো বেড়ে গেছে। দেশে পর্নোগ্রাফি-সংক্রান্ত আইন তৈরি হলেও কোড অব কন্ডাক্ট, ইন্টারনেট কারা ব্যবহার করবে এবং এর নজরদারির বিষয়গুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।
বর্তমানে সমাজে যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে সংকট আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।