বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা: জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
ক্রমবর্ধমানহারে নারীর প্রতি হিংস্রতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশ। দেশব্যাপী প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, নারী সংগঠন, ছাত্র, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক সমাজ সর্বস্তরের মানুষ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন অন্তত: তিনজন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন বলছে, গত জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর এ নয় মাসে দেশে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি।
সম্প্রতি সংঘটিত এ রকম কয়েকটি বর্বরতার প্রেক্ষিতে কয়েকদিন ধরেই দেশব্যাপী প্রতিবাদ চলছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এনজিও সংগঠন। শাহবাগের গণ-অবস্থান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান।
এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে, শাহবাগে আয়োজিত শিক্ষার্থীদের কালো পতাকা মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় ধস্তাধস্তিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আজ বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সরকার সমর্থক বাংলাদেশ মহিলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
ওদিকে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে দফায় দফায় মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় বক্তারা, একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র জনতার আয়োজনে হয় মানববন্ধন। এছাড়াও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী, যশোর, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ।
এ অবস্থায় প্রতিবাদী মানুষের সাথে সুর মিলিয়ে র্যাপ সংগীত নিয়ে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন শিল্পীরা। এরকম একটি প্রতিবাদী গানের সুরকার ও গায়ক দীন ইসলাম শারুখ বলেছেন, ‘দেশে চলমান ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ এই গানটি তৈরি করেছি। যে নরপশুরা ধর্ষণ করছে তারা যেমন অপরাধী, তেমনি সে অপরাধ সহ্য করে আমরাও অপরাধী হচ্ছি। তাই প্রতিবাদ করা উচিত। সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলি, তাহলে ধর্ষণব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করা যাবে।’
দেশব্যাপী এমন প্রতিবাদের মুখে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতিবাদের প্রয়োজন নেই, সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। ধর্ষণকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করলে, সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভার আগে ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান ।ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। তবে, সরকার কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। অপরাধী যতো বড় নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন স্বতপ্রণোদিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নিচ্ছে সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নোয়াখালী ও সিলেটে যা ঘটেছে তা বর্বরতার চূড়ান্ত উদাহরণ, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব আমরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন আছে বলেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, কিন্তু নিপীড়করা মানুষ না, এরা অমানুষ, এ জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।তবে দেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিবস্ত্র করার পর ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা ভয়ঙ্কর এবং কুরুচিপূর্ণ ঘটনা।‘ এমন বিভৎসতা স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। এর পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তদন্ত করে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
ওদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গতরাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।