করোনাকালে নারী নির্যাতনের তালিকায় ১৬তম অবস্থানে বাংলাদেশ: ডব্লিউএইচও
(last modified Thu, 11 Mar 2021 08:38:52 GMT )
মার্চ ১১, ২০২১ ১৪:৩৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৫০ শতাংশই জীবনে কখনো না কখনো স্বামী বা সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর করোনা মহামারির মধ্যে গত এক বছরে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারীর শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের তালিকায় ১৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)  প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় নারী নির্যাতনের যে চিত্র উঠে এসেছিল, তার চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়নি। ঘনিষ্ঠ নয়, এমন ব্যক্তিদের হাতেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন নারী। অল্প বয়স থেকেই তাঁদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তাদের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন জীবদ্দশায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ৬ শতাংশ নারী তাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন। সম্মানের কথা ভেবে বেশির ভাগই চুপ থাকেন। তাই নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেই ধারণা করা হয়।

নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটে চলেছে। এতে কোটি কোটি নারী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে নির্যাতন আরও বেড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে আলাদাভাবে করোনা মহামারির মধ্যে গত এক বছরে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারীর শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায়ও ১৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনাকালে নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে, ৩৬ শতাংশ। এর পরে দ্বিতীয় আফগানিস্তান (৩৫ শতাংশ) এবং তৃতীয় পাপুয়া নিউগিনি (৩১ শতাংশ)।

আবুল হোসেন

করোনাকালে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ হিসাবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সহিংসতার পরিমাপ করে। স্ত্রী–সন্তানকে ধমক দেওয়াকে তারা নির্যাতন বলে বিবেচনা করে। আমাদের সামাজিক কাঠামোয় যা প্রযোজ্য নয়।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন, করোনাকালে দীর্ঘ সময় ঘরে আটকে থাকা, আয় রোজগার কমে যাওয়াসহ নানা দুশ্চিন্তা থেকে পুরুষের সহিংস হয়ে ওঠার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে স্ত্রী বা সন্তানকে নির্যাতন করে।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের উচ্চ হারের জন্য পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত। তিনি রেডিও তেহরানকে জানান, নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে সমাজ রাষ্ট্র ও পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীদের  যতদিন পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধিন সম্পত্তি মনে করা হবে ততদিন এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না।  

অধ্যাপক তানিয়া হক

এ প্রসঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশে পুরুষতন্ত্র এমন পর্যায়ে যে নারীরাও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এর ফলে সামাজিকভাবে নারীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থেকেও ওই পুরুষ নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে শুরু করেন। পুরুষকে উঁচু করে তোলার ভাবনা তাঁকে বিভিন্ন অপকর্মেও উৎসাহিত করে।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, সামাজিক-পারিবারিক সমতা, সম–অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে তবেই নারী সুরক্ষিত হবে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ