বাংলাদেশে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি: করোনায় আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছে
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i90358
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ আর এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
এপ্রিল ১৯, ২০২১ ১৮:০১ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধের) মেয়াদ আর এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে  গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের সর্বাত্মক  লকডাউন চলছে । আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকার কথা ছিল।

এদিকে,  কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি  গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) এক  সভায় সংক্রমণরোধে আরও এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপের সুপারিশ করে । সে প্রেক্ষিতে  লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন বহাল থাকবে। 

ওদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সারাদেশে আরও এক সপ্তাহ ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে ‘জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে।’

সোমবার (১৯ এপ্রিল) নিজ সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্য লকডাউন শিথিল হতে পারে। তিনি সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত ও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

সরকার পরিবহন শ্রমিকসহ বেকার শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি দলীয়ভাবে ভাসমান মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশে দশগুণ করোনা সংক্রমণ বেড়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ইতোমধ্যে গত দেড় মাসে দেশে দশগুণ করোনা সংক্রমণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, করোনা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। গত দেড় মাসে এক লাখ ৬০ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যা এর আগের দেড় মাসে ছিল মাত্র ১৫ হাজার জন।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ২২২ আইসিইউসহ মোট ১ হাজার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশই করোনা মহামারির কারণে থমকে গেছে।

কোরোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশের সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নত অনেক দেশে করোনা রোগীদের তাবুতে রাখতে হয়েছে। আমাদের এখানে সেটা এখনও করতে হয়নি। আমরা কোভিড মোকাবিলা করতে পেরেছি। তবে আমাদেরকে বুঝতে হবে কোভিড চলে যায়নি। যুব সমাজ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তারা তাদের পরিবারের বয়ষ্কদের আক্রান্ত করছে। যুবকদের মৃত্যু কম হলেও বয়ষ্করা মারা যাচ্ছেন। ফলে আমি বলবো যে আপনারা অকারণে বাইরে যাবেন না।

আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছে:

এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)জানিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি তীব্রতা নিয়ে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যেও মহামারির প্রভাব পড়ছে বলেও আইইডিসিআর  প্রতিবেদনে বলা হয়।

গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, এই সময় আক্রান্তদের ৪৪ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৩৩ শতাংশ রোগী প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে, ১৭ শতাংশ বাড়িতে এবং ছয় শতাংশ অন্যান্য উপায়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

করোনায় মৃত্যুর প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যারা মারা গেছেন, তাদের ৫২ শতাংশই উপসর্গ শুরুর পাঁচদিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৬ শতাংশ পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং ১২ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬ শতাংশ রোগীর। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনা রোগী খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করছেন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।