হরিয়ানায় গরু পাচারকারী সন্দেহে ব্রাহ্মণ কিশোরকে হত্যা করল গোরক্ষকেরা!
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পালওয়াল জেলার বাঘোলা গ্রামে গরু পাচারকারী সন্দেহে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ তাড়া করে ১৯ বছর বয়সী আরিয়ান মিশ্রকে গুলি করে হত্যা করে ‘গোরক্ষকেরা’।
গত ২৩ আগস্ট লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটলেও পুলিশ গতকাল (মঙ্গলবার) তা প্রকাশ করেছে। পুলিশের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় ইতোমধ্যেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বজরং দলের সদস্য কৌশিক নামে এক ব্যক্তি।
কিছুদিন আগে চরকি দাদরিতে এক মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিককে গো-মাংস রাখার সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার তিন দিনের মাথায় এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত অনিল কৌশিক (৩৮) ‘লাইভ ফর নেশন’ নামে একটি সংগঠন চালান। তারা গরু রক্ষায় নানা পরামর্শ দেয়। আরিয়ান হত্যায় জড়িত অন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা হলেন—বরুণ, সৌরভ, কৃষ্ণ ও আদেশ। তাঁদের সবার বয়সই ২০–এর কোটায়। এই পাঁচজনের সবাই ফরিদাবাদের বাসিন্দা।
আরিয়ানের বাবা সিয়া নন্দ মিশ্রা থানায় করা অভিযোগে বলেছেন, তাঁর ছেলে নিজের দুই বন্ধু হর্ষিত গুলাটি ও সাগর গুলাটির সঙ্গে গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। গাড়িতে হর্ষিত ও সাগরের মা সুজাতা গুলাটি এবং এক প্রতিবেশী কীর্তি শর্মা ছিলেন। তাঁরা যে গাড়িতে বেড়াতে বের হয়েছিলেন, সেটা একটি রেনো ডাস্টার, মালিক হর্ষিত। আরিয়ানের পরিবার হর্ষিতদের বাড়িতে ভাড়া থাকে।
যে গাড়িতে করে আরিয়ানদের তাড়া করা হয়, সেটি ছিল একটি মারুতি সুইফট। সেটি ফরিদাবাদ সেক্টর ২১ থেকে বাঘোলা পর্যন্ত আরিয়ানদের গাড়িকে তাড়া করে ও গুলি ছোড়ে।
পুলিশ বলেছে, ঘটনার সময় প্রথমে আরিয়ানের মাথার পেছনে গুলি লাগে, তাঁদের গাড়ি থেমে যায়। পেছনের গাড়ির লোকজন এগিয়ে এসে আবার গুলি করে। এবার গুলি আরিয়ানের হাতে লাগে। গুলি করার পর হামলাকারীরা বুঝতে পারে, তাঁরা এতক্ষণ ভুল গাড়ি তাড়া করেছে। এই গাড়িতে একটি পরিবার রয়েছে, সেখানে গরু পাচারকারী কেউ নেই। পরদিন ২৪ আগস্ট আরিয়ানের বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ মামলাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখতে পায়, হত্যাকাণ্ডের এক দিন আগে গত ২২ আগস্ট সারান থানায় কৌশিক গরু পাচার নিয়ে এটি অভিযোগ দায়ের (এফআইআর) করেছিলেন।
এফআইআরে কৌশিক অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘গত ২২ আগস্ট ভোররাতে কিছু লোক পিয়ালি চকের কাছে পিকআপে গরু বোঝাই করছে বলে তিনি খবর পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাননি। তাঁর বিশ্বাস, গরু পাচারকারীরা পালিয়ে গেছে। গরুগুলো জবাই করার জন্যই নেওয়া হয়েছে।’
আরিয়ান ফরিদাবাদের একটি উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি আরিয়ান ভারোত্তোলন খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ভারোত্তোলনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদকও জিতেছেন।#
পার্সটুডে/এমএআর/৩