কলকাতায় 'রাহমাতুল্লিল আলামীন' কনফারেন্সে বিভিন্ন ধর্ম-মতের স্কলারদের মিলনমেলা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর শেক্সপিয়র সরণির 'ভারতীয় ভাষা পরিষদ হল'-এ ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ নিয়ে “রাহমাতুল্লিল আলামীন" কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিভিন্ন মতভেদ ও মাসলাকের পার্থক্যের বাইরে নবী (সা.)-এর আদর্শ কেন সবার জন্য জরুরি ও বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতিতে মুসলিমদের করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্টরা। তাকরিব-ই-মাজাহিব কাউন্সিল, হালকুয়া-এ-কাদেরীয়া এবং নূরুল ইসলাম অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে এ দিনের আলোচনাসভা করেন বিশিষ্টজনেরা। তাকবির-ই মাজাহিব কাউন্সিল, হালকুয়া-ই কাদেরীয়া এবং নুরুল ইসলাম একাডেমির যৌথ উদ্যোগে এ দিনের আলোচনাসভা হয়।
সভায় উপস্থিত থেকে ইসলাম, নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং দুনিয়ার বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেন সংখ্যা কমিশনের চেয়ারম্যান ও পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, মাওলানা তাফাজ্জল হুসাইন, যোগী প্রতীক মজুমদার, শিখনেতা সরণ সিং, খ্রিস্টান ফাদার পৃথ্বীরাজ নায়েক, বৌদ্ধ ধর্মগুরু ভেন বৃদ্ধরক্ষিতা, শিয়া মাওলানা সৈয়দ সফিক আল-হুসাইনি, ড. রিজওয়ানুস সালাম খান, পীর রেশাদাত আলি আল-কাদেরী, মাওলানা সাব্বির আলি ওয়ার্সি, সত্যের পথে পত্রিকার সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ হাসান হায়দার কাজমী, মাওলানা আমিনুল আম্বিয়া, ড. মইনুদ্দিন চিশতী প্রমুখ।
কনফারেন্সে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ইসলাম ও নবী (সা.)কে মানতে হলে প্রথমে আমাদের সৎ হতে হবে। না হলে আমরা প্রকৃত মানুষ হতে পারব না।
তিনি বলেন, ইসলাম একটা বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। কুরআনে আছে পৃথিবীর বাইরেও অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা চলছে।
অন্য প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ইসলাম ধর্মে মানবতা, পরিবেশ ও সাম্যের কথা আছে। যেগুলো একজনকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। যেকোনও অবস্থায় আল্লাহর কাছে জীবনকে সঁপে দিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, নবী সা.-এর আদর্শ মেনে চলতে হবে। সবার প্রতি ইনসাফ করতে হবে। তাহলে পৃথিবীতে সাম্য ও শাস্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে ইমরান বলেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর নির্যাতন চলছে। বিগত ১ বছরে ৪২ হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে, অথচ মুসলিম-বিশ্ব নীরব হয়ে আছে। এমন অবস্থায় শিয়া প্রধান ইরান যেভাবে গাজার মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসা করেন ইমরান।।
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব কথায় কথায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকারের কথা বলে। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রশ্নে সবাই চুপ থাকছে। এটাতে পশ্চিমাদের আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সম্মিলিতভাবে একে-অপরের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারবেন। সবাই যাতে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান এবং মেলামেশার মাধ্যমে সুন্দর দেশ এবং রাজ্য গড়ে তুলতে পারেন, সেই আহ্বানও জানান ইমরান।
অধ্যাপক সৈয়দ হাসান হায়দার কাজমী নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ মানার প্রতি সবাইকে আহ্বান জানান। নিজেদের মধ্যে বিভেদ-বিচ্ছেদ না করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন মাওলানা আমিনুল আম্বিয়া।
পীর রেশাদাত আলি আল-কাদেরী বলেন, আমাদের নবী এবং কুরআনের উপর আমল করতে হবে। নিজেদের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের আদর্শ হবেন মুহাম্মদ সা.। একইভাবে ঐক্যের বার্তা দেন মাইমুর রহমান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আত্মস্থ করার প্রতিও তিনি জোর দেন।
অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান ফাদার পৃথ্বীরাজ নায়েক মানুষে মানুষে যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। ইসলাম যেভাবে শান্তির বার্তা দিয়েছে, সে বার্তা ধারণ করে আগামীতে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলেন সে কথাও বলেন তিনি। ড. মইনুদ্দিন চিশতী নবী (সা.)-এর জীবনের নানান দিক তুলে ধরেন। যোগী প্রতীক মজুমদার মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের আদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন। কিভাবে নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি তুলে ধরে ধৈর্য ও ত্যাগে দীক্ষিত হওয়ার কথা বলেন। অন্যান্যরাও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ প্রচার ও মেনে চলার কথা বলেন।
উল্লেখ্য, একই মঞ্চে শিয়া, সুন্নি, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান, সুফি, ওয়ার্সি, কাদরী ও শিখ স্কলারগণ নিজ নিজ ভাষায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আলোকিত পথ সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪-পরগণা, মেদিনীপুর, নদিয়া ও কলকাতার শিশু-নারীসহ অসংখ্য মানুষ শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৭