আমেরিকার সঙ্গে কেন আলোচনা করে না ইরান?
(last modified Sat, 11 Jan 2025 08:15:15 GMT )
জানুয়ারি ১১, ২০২৫ ১৪:১৫ Asia/Dhaka
  • আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
    আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী

আমেরিকার সঙ্গে কেন আলোচনা করে না ইরান- এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেছেন, কেউ কেউ বলে যে, আপনি আমেরিকার সাথে আলোচনা করতে রাজি নন, যোগাযোগ করতেও রাজি নন, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো যারা কিনা আমেরিকার মতো তাদের সাথে কেন সম্পর্ক রেখেছেন? তাদের যেমন দূতাবাস আছে আমেরিকারও থাকুক। না! পার্থক্য আছে। পার্থক্য হলো আমেরিকা এই দেশটাকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু তার কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। তাই ইরান ও বিপ্লবের প্রতি তার ক্ষোভ ও বিদ্বেষ অনেক গভীরে

হ্যাঁ, এটা ঠিক সেই ইউরোপীয় দেশও ইরানি জনগণের প্রিয় বন্ধু নয়। আমরা এটা জানি। কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আমেরিকা ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ, বিশাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হারিয়েছে। এরপর গত চল্লিশ বছরের বেশি সময়ে ইরানকে আবার ইসলামী বিপ্লবের হাত থেকে বের করে আনতে বিপুল খরচ করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতি আমেরিকার ক্ষোভ অন্য কোনো দেশের প্রতি ক্ষোভ থেকে আলাদা। এটা খুবই ভিন্নতর।

আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আমরা কেন পার্থক্য করি তার কারণ এটা। আমেরিকা ইরানে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ব্যর্থতা পূরণের চেষ্টা করছে। যেকোনো উপায়ে তারা শত্রুতা করছে।

সর্বোচ্চ নেতা বলেন, সার্বিকভাবে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদ সব দেশের কর্মকর্তাদের কাছে একটা দাবি করে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কাছেও তারা এটাই চায়। তাহলো কোনো দেশের কর্মকর্তারা যখন বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করেন, পরিকল্পনা করেন  তখন যেন মার্কিন স্বার্থ বিবেচনায় রাখেন, আমেরিকার কথা যেন তারা বিবেচনায় রাখেন। এটা তাদের (আমেরিকার) দাবি ও প্রত্যাশা।  আমি বলি এটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

আমাদের দেশের যেকোনো আমলের কর্মকর্তারা যদি আমেরিকার এই অন্যায় দাবিকে গুরুত্ব দেন তাহলে তারা এর মাধ্যমে গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থাকে হুমকিগ্রস্ত করলেন। কেন? কারণ মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে যাতে তাদের স্বার্থে কাজ করি, মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নয়।

ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রহ.)'র প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে অত্যাচারী পাহলভি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোমের জনগণের ১৯৭৮ সালের ১৯ দেই (৯ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে গত বুধবার কোম প্রদেশের হাজার হাজার মানুষ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সাথে দেখা করেছেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, ১৯৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট (জিমি) কার্টারের তেহরান সফর করেন, অযৌক্তিকভাবে মোহাম্মাদ রেজা শাহের প্রশংসা করেন এবং তৎকালীন ইরানকে স্থিতিশীলতার দ্বীপ হিসেবে অভিহিত করেন। কার্টার সে সময় যে ইরানকে তাদের জন্য উপযুক্ত বলে বর্ণনা করেছিলেন তা ছিল পররাষ্ট্র নীতির দিক থেকে আমেরিকার পরিপূর্ণ আজ্ঞাবহ, মার্কিন স্বার্থ নিশ্চিতকারী। অভ্যন্তরীণ দিক থেকে সব ধরণের বিরোধী দল ও সংগঠনকে দমন করা হচ্ছিল, কোনো ধরণের ভিন্ন মতকে সহ্য করা হচ্ছিল না।

আমেরিকার পছন্দের তৎকালীন ইরান অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে কেমন ছিল তা তুলে ধরতে গিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন- অর্থনৈতিকভাবে তেল বিক্রি থেকে এর প্রচুর আয় ছিল, তবে এই আয় ছিল পুরোপুরি শ্রেণীভিত্তিক; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে পেছনে পড়ে ছিল এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটি দুর্নীতি ও অশ্লীলতার সংস্কৃতি চালু ছিল। পাশ্চাত্যের অশ্লীলতা দিনদিনই ইরানে ছড়িয়ে পড়ছিল।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ১৯৭৮ সালের ৯ জানুয়ারি কোমের জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ‘মার্কিনীদের কাঙ্খিত ইরান’ তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়, কিন্তু আমেরিকা এখনও সেই ইরানের স্বপ্ন দেখে, কার্টার কবরে চলে গেছে, কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অন্যান্য মার্কিনীও কবরে চলে যাবে কিন্তু তাদের এই স্বপ্নও পূরণ হবে না।#

পার্সটুডে/এসএ/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন