'হিন্দি চাপিয়ে দিয়ে আরেকটি ভাষা যুদ্ধ শুরু করবেন না': এমকে স্ট্যালিন
ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ভাষা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে নিশানা করে হিন্দি চাপিয়ে দিয়ে আরেকটি ভাষা যুদ্ধ শুরু না করার জন্য সতর্ক করেছেন।
‘ডিএমকে’ সভাপতি এমকে স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রচেষ্টা ত্যাগ করতে হবে এবং দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সরকারী ভাষা সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পেশ করা সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, প্রতিবেদনটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বৃহৎ অ-হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠী তাদের নিজের দেশেই ‘দ্বিতীয় শ্রেণি’র হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি সম্ভবত তামিলনাড়ুতে আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া ভারতের অখণ্ডতার বিরোধী। অতীতে হিন্দি বিরোধী আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিক বিজেপি সরকার।
গতকাল (সোমবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় এমকে স্টালিন বলেছেন, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ভারতের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করার, হিন্দিকে চাপানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকারী ভাষা সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের ১১ তম সংখ্যায় যে প্রস্তাবগুলো করা হয়েছে তা ভারতের আত্মার উপর সরাসরি আক্রমণ।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, 'এক জাতি, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক খাদ্য এবং এক সংস্কৃতি' বাস্তবায়নের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টা ভারতের ঐক্যকে প্রভাবিত করবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ রয়েছে যা ভারতীয় ইউনিয়নের অখণ্ডতাকে বিপন্ন করতে চলেছে।’
মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি হিন্দিকে ভারতের সাধারণ ভাষা করার সুপারিশ করার দরকার কোথায়? ভারতের চরিত্র ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ এবং তাই সমস্ত ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়া উচিত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সমস্ত ভাষাকে সরকারী ভাষা করার চেষ্টা করা। এ ছাড়া আমি সতর্ক করছি যে, উপরোক্ত নীতির পরিপন্থী এমন কোনো পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয়। হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিয়ে আরেকটি ভাষা যুদ্ধ শুরু করা উচিত নয়।’
গণমাধ্যমে প্রকাশ, সংসদীয় কমিটি তাদের রিপোর্টে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম), অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস), কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজির পরিবর্তে ‘হিন্দি’কে মাধ্যম করার সুপারিশ করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন বলেছেন, সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তামিলসহ ২২টি ভাষা রয়েছে, যাদের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু সংসদীয় কমিটি সারা ভারতে ‘হিন্দি’কে একটি সাধারণ ভাষা করার সুপারিশ করেছে বলে মন্তব্য করেন এমকে স্ট্যালিন।
গত এপ্রিলে হিন্দির পক্ষে সাফাই দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ইংরেজির পরিবর্তে সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দিকেই আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার কথা ভাবছে সরকার। সেই কারণে তার পরামর্শ, দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবে, তখন ইংরেজির পরিবর্তে উচিত হিন্দিতে কথা বলা। তার দাবি- একমাত্র হিন্দি ভাষার ক্ষমতা রয়েছে দেশকে এক সুতোয় বেঁধে রাখার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারি কাজে সরকারি ভাষা ব্যবহারে জোর দিয়েছেন। এবং ওই সিদ্ধান্ত সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের ১০ জনের মধ্যে ৬ জনের মাতৃভাষা হিন্দি নয়। বিরোধীদের মতে, এটি হল সঙ্ঘ পরিবারের ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান’ নীতির অংশ, অতীতে যার প্রতিফলন দেখা গেছে জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও। যেখানে হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি।
ওই ইস্যুতে এরআগে ডিএমকে সাংসদ কানিমোজি বলেছিলেন, ‘এতে হিতে বিপরীত হবে। হিন্দির মাধ্যমে ঐক্য বাড়াতে গিয়ে অনৈক্যই সৃষ্টি হবে। বিভাজন তৈরি হবে দেশের এক প্রান্তের সঙ্গে আর এক প্রান্তের।’কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে- অতীতে ভাষা নিয়ে অনেক রক্ত ঝরেছে। সেজন্য এ নিয়ে ফের দ্বন্দ্ব হোক তা মোটেই কাম্য নয়।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।