ইসরাইলকে বয়কট করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
(last modified Tue, 22 Oct 2024 07:01:58 GMT )
অক্টোবর ২২, ২০২৪ ১৩:০১ Asia/Dhaka
  • ইসরাইলকে বয়কট করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
    ইসরাইলকে বয়কট করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে

পার্সটুডে – শুধু যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রগুলোসহ তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে তাই নয় একইসাথে ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার সামরিক ও অস্ত্র সহযোগিতার ওপরও সীমাবদ্ধতা জোরদার হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইহুদিবাদী ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুসারে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে: এই নিষেধাজ্ঞাগুলোতে কেবল অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাই যথেষ্ট হবে না একইসাথে এমন কিছু পণ্য আছে যা এই অস্ত্রগুলোর উৎত্পাদনে ব্যবহৃত হয় সেগুলোও নিষিদ্ধ করা উচিত।

দশকের পর দশক ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস আল-আকসা তুফান অভিযান চালায়। এরপর গাজার নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইল সেখানে ব্যাপক গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ এবং দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দখলদার ইসরাইলকে বয়কট করার প্রবণতা জোরদার হচ্ছে এবং বিশ্বের বহু দেশ ও প্রতিষ্ঠান ইসরাইলের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে, ইসরাইলের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশ এ আহ্বান উপেক্ষা করেছে। অবশ্য ইউরোপের অনেক দেশের জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং বিক্ষোভ-সমাবেশের পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ ও গাজার জনগণের প্রতি সাহায্যের দাবি জানিয়েছে।

খাদ্য অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মিশেল ফাখরি,গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে বলেছিলেন, আমাদের এখন যা প্রয়োজন তা হল ইসরাইলের উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা, রাজনৈতিক চাপ কোনো কাজে না আসায় এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধে তেলআবিব আন্তর্জাতিক সমাজের দাবি উপেক্ষা করায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

তাই বলা যায়, শুধু যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রগুলোসহ তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে তাই নয় একইসাথে ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার সামরিক ও অস্ত্র সহযোগিতার ওপরও সীমাবদ্ধতা জোরদার হচ্ছে।

এমনকি কিছু ইউরোপীয় দেশ ইসরাইলি অস্ত্র কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে।

দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে, ফ্রান্স ইসরাইলি কোম্পানিগুলোকে সেদেশের নৌ-অস্ত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যাইহোক, ইসরাইলের কিছু ইউরোপীয় মিত্র বিশেষ করে জার্মানি এবং ব্রিটেন ইসরাইলের প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে এবং এমনকি গাজায় ব্যাপক গণহত্যা চালানো সত্ত্বেও তারা  ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে গত ১০ অক্টোবর জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্টের সভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকের বক্তৃতা ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়।

ওই বৈঠকে, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন যে হামাস বেসামরিক লোকজন এবং স্কুলগুলোতে লুকিয়ে আছে। তিনি আরো দাবি করেন, আত্মরক্ষা মানে আগ্রাসন নয় বরং তার অর্থ সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা।

গত ১৫ অক্টোবর ফিলিস্তিন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ,গাজায় ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্রের ওপর ইসরাইলের বোমা হামলার প্রতি ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা করে একটি অপরাধী দেশকে সমর্থন করার আইনি পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন৷

এছাড়াও, ব্রিটেনের ১০০ টিরও বেশি মুসলিম শ্রমিক সংগঠন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে একটি চিঠি পাঠিয়ে,অবিলম্বে ইসরাইলের কাছে সামরিক অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানায়। কিন্তু, লন্ডন কর্তৃপক্ষ এখনও ইসরাইলকে অস্ত্র সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের আল-আকসা তুফান অভিযানের পর গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরাইলকে বয়কট করার প্রবণতা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বর্তমানে, গাজা যুদ্ধের এক বছর পর ইসরাইলের উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জোরদার হয়েছে। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জনমনে ইসরাইল বিরোধী অবস্থান তেল আবিবের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে এবং তারা এটা বুঝতে পারছে ইসরাইল ক্রমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ