বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা
ভারতে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্যানের নাম 'মুঘল গার্ডেন' বদলে হল ‘অমৃত উদ্যান’
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি ভবন 'মুঘল গার্ডেন'-এর নাম পরিবর্তন করে ‘অমৃত উদ্যান’ রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উপ প্রেসসচিব নবিকা গুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করা হচ্ছে। তার সঙ্গে মিলিয়েই দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি ভবনের বাগানকে 'অমৃত উদ্যান' নাম দিয়েছেন।
এদিকে, মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিরোধীরা সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে। সর্বভারতীয় মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন ‘মিম’-এর মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, মুঘল গার্ডেন ও টিপু সুলতান গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করলে দেশের উন্নয়ন হবে? বেকারত্বের অবসান হবে? পেট্রোল-ডিজেলের দাম কী কমবে?
সরকারকে অভিযুক্ত করে ওয়ারিস পাঠান আরও বলেন, ‘বিজেপি আসল বিষয় থেকে মনোযোগ সরাতে ‘নামকরণের রাজনীতি’ করছে।’
ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের মালাদে একইভাবে টিপু সুলতান গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করেছে বিজেপি। ‘মিম’ নেতা ওয়ারিস পাঠান সম্প্রতি টিপু সুলতানকে মহান বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং টিপু সুলতান গার্ডেনের নাম পরিবর্তনের জন্য মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন।
মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রশিদ আলভি বলেন, ‘এটা বিজেপি সরকারের অভ্যাস, এরা শহর ও রাস্তার নাম পরিবর্তন করে দেয়। এবার উদ্যানের নামও পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি এর নিন্দা করছি। অন্য কারো তৈরি করা কোনও কিছুর নাম পরিবর্তন করার অধিকার তাদের নেই। এটাকে উন্নয়ন বলা যায় না। সরকার এখন বিবেকহীন মানুষের হাতে চলে এসেছে।’
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি আরও বলেন, ‘আপনারা গার্ডেন তৈরি করে তার নাম দিন।’
মৌলভি সাজিদ রশিদ মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছেন। মৌলভী সাজিদ রশিদ মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তনকে হিন্দুদের খুশি করার সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন। সাজিদ রশিদ বলেন, ‘হিন্দুদের খুশি করার জন্য মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে অনেক সড়ক, স্টেশন এমনকি শহরের নাম পরিবর্তন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেগুলোর পুরনো নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল মুঘল আমল। উত্তর প্রদেশের ‘মুঘলসরাই স্টেশন’-এর নাম পরিবর্তন করে হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায়। দিল্লির রাজপথের নাম হয়েছে ‘কর্তব্যপথ’। ইলাহাবাদের নাম হয়েছে ‘প্রয়াগরাজ’। এ সব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সমালোচনার মুখে পডলেও এবার ফের মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করা হল।
এ প্রসঙ্গে আজ (রোববার) সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় মোদী সরকার নাম বদলের চমক এনে আচ্ছে দিনের (সুদিন) স্বাদ মেটাতে চাচ্ছে। এর আগে রেল স্টেশনের নাম, শহরের নাম, জেলার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্যান মুঘল গার্ডেনের নাম পরিবর্তন করে তাকে ‘অমৃত উদ্যান’ করা হয়েছে। এর পর হয়ত খাবারের নামও বদলে ‘মোগলাই পরোটা’র নাম হয়ত বলবে ‘মোদী পরোটা’ রাখতে হবে। এ সব অত্যন্ত হাস্যকর বিষয়। ভারতবর্ষের মত একটা বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তাদের এ ধরণের কার্যকলাপ বিদেশিদের কাছে এবং শিক্ষিত গুণীজনদের কাছে হাসির খোরাক ছাড়া অন্য কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেজন্য সরকারকে বলব যে মানুষের উপকারে আসবে, গরীব মানুষের উপকার হবে, বেকারত্ব দূর হবে, নতুন প্রজন্ম আধুনিক এবং উন্নত মানের শিক্ষা পাবে- এই ভাবনাই হোক মোদী সরকারের। এই যে কুমতলব, হিন্দুত্বের নামে বিষয়গুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে, এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হোক’ বলেও মন্তব্য করেন সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/২৯