এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ১৯:০১ Asia/Dhaka
  • ৪০ বছরে দশ কোটি মানুষ হত্যার জন্য ব্রিটেনের উচিত ভারতের জনগণকে ক্ষতিপূরণ দেয়া
    ৪০ বছরে দশ কোটি মানুষ হত্যার জন্য ব্রিটেনের উচিত ভারতের জনগণকে ক্ষতিপূরণ দেয়া

১৮৮০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে, ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাওবাদী চীন এবং উত্তর কোরিয়ায় দুর্ভিক্ষে নিহত মানুষের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি লোক নিহত হয়েছিল ভারতে।

ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইসিটিএ-ইউএবি) অধ্যাপক জেইসন হেইকেল এবং সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ডিলান সুলিভানের গবেষণা অনুসারে, ১৮৮০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে অন্তত দশ কোটি ভারতীয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতে নিহত হয়েছিল।

১৫৯৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৬ শতক থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের সূচনা হয়।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিটি দক্ষিণ এশিয়ার উর্বর অঞ্চলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তারপর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কার্যক্রম এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র অঞ্চলের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয় একটি পরিবারের ছবি

ভারতে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার তিন শতাব্দী পর এই দেশটির উপর ইংল্যান্ডের গভীর প্রভাবের কারণে ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ভারত ও ব্রিটেনের রানী হিসাবে ভিক্টোরিয়াকে রাজ মুকুট পরানো হয়েছিল। এই যুগটিকে ব্রিটিশ কর্তৃক ভারতীয় জনগণের সম্পদ লুটপাটের যুগ বলে মনে করা হয় যা অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের রাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তি হয়ে ওঠেছিল।

অর্থনৈতিক বিষয়ক ইতিহাসবিদ রবার্ট সি অ্যালেনের মতে, ব্রিটিশ শাসিত ভারতে চরম দারিদ্র্য ১৮১০ সালে ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এসে তা ৫০ শতাংশে পৌঁছেছিল।

এই সময়কালে ভারতীয় শ্রমিকদের মজুরি অনেক কমে যায় যা ১৯ শতকে প্রায় শূন্যে পৌঁছেছিল, ফলে তখন দেশের মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা এতটাই বিস্তৃত ছিল যে এই দেশে গড় আয়ু কমে ২১ বছর নয় মাসে এসে ঠেকেছিল।

কিছু ব্রিটিশ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে বলা হয়, এই দেশের শাসন ব্যবস্থায় উপনিবেশবাদী আচরণ এখনও বিদ্যমান।

ব্রিটিশ ট্রেড রিসার্চ সেন্টার 'ইউ গভ' (YouGov)-এর জরিপ অনুসারে, ৩২ শতাংশ ব্রিটিশ জনগণ এখনও দেশের ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস নিয়ে গর্বিত।

দুই বছরের গবেষণার ফল 'আক্রান্তের শিকার দেশগুলো' নামক বইতে 'স্টুয়ার্ট লেইকক' বলেছেন, বিশ্বে ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র  ২২টি দেশে ব্রিটেন আক্রমণ করেনি।

যে হামলার জন্য ব্রিটেন এখন পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়নি।

ইতিহাস যেমন পরিবর্তন করা যায় না তেমনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অপরাধও মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু সেইক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা বঞ্চনার শিকার উত্তরাধিকারীদেরকে সাহায্য করা যেতে পারে।

যেমনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার কর্তৃক হত্যাকণ্ডের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, জার্মানিও গত ১৯ শতকের শুরুর দিকে নামিবিয়াকে তার অতীত অপরাধী কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছিল।

(এই নিবন্ধটি আল জাজিরা ইংরেজি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে।)

পার্সটুডে/জেওয়ান হোসেন/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ