ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩ ১৮:৩১ Asia/Dhaka
  • অসমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়, ২ হাজারের বেশি গ্রেফতার

ভারতের অসমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের অংশ হিসেবে দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) বিকেল পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পুলিশি অভিযানে ২০৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫১ জন কাজী, মাওলানা এবং পুরোহিতও রয়েছেন।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির সিনিয়র নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, শুক্রবার সকাল থেকে বাল্যবিবাহ করা স্বামীদের গ্রেফতার অভিযানে নামবে পুলিশ।

এদিকে, বাল্যবিবাহের অভিযোগে বাপক হারে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেক থানায় পুলিশকর্মীদের পা জড়িয়ে ধরে স্বামীদের মুক্তি চেয়েছেন অসহায় স্ত্রীরা বলেছেন, স্বামী জেলে থাকলে তাদের সংসার চলবে কী করে? কিছু মহিলা আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন।  

মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি

এ প্রসঙ্গে আজ (শনিবার) ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘গর্ভবতী মহিলারা থানায় এসে ধর্না দিচ্ছেন, এসব বিয়ে বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে হয়েছে। সরকার যেটা বলছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, কিন্তু আমার মতে বিষয়টা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তাদের একটা আর্থিক জরিমানা করে এই লোকগুলোকে তাদের সংসারে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে এই কাজটা না হয় এবং সচেতনতাও বাড়ে। এই পরিবারগুলো, যারা অসহায় হয়েছে যেসমস্ত মহিলা, মহিলার অধিকার নিয়ে আমরা সব সময়ে সরব হয়ে থাকি, তাদের অধিকার নিয়ে আমরা কথা বলি। এজন্য মহিলাদের অধিকারগুলো যাতে খর্ব না হয়, তাদের সংসার যাতে বিপন্ন না হয়ে যায়, সেইজন্য এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন আছে। স্বামীদের যদি যাবজ্জীবন কারাবাসে রাখা হয় তাহলে তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেন মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমী।

এসিকে, বিজেপিশাসিত অসম সরকারের পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অল ইণ্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি। ওয়াইসি আজ ওই ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, গত ৬ বছর ধরে   অসমে বিজেপির সরকার রয়েছে। এটা আপনাদের ব্যর্থতা। আপনারা তখন কী করছিলেন? এই ধরনের গ্রেফতার করে আপনারা অন্য সমস্যা তৈরি করছেন। যেসব মেয়ে বিয়ে করেছে তাদের আপনারা কী করবেন? কে তাদের দেখভাল করবে? সেটা যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেন।

ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি

ওয়াইসি অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ছেলেদেরকে জেলে পাঠালে মেয়েদের দেখভাল কে করবে? আপনি সেখানে স্কুল খুলছেন না কেন? অসমে  আপনি ক’টি স্কুল খুলেছেন? স্কুল খুলুন, কে বাধা দিচ্ছে? অসমের বিজেপি সরকার মুসলমানদের বিরোধী। তারা উচ্চ অসমে ভূমিহীনদের জমি দিয়েছেন, কিন্তু নিম্ন অসমে এমনটা করেনি।  

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা গত ২৮ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে এমন হাজার হাজার পুরুষকে (স্বামী) গ্রেফতার করা হবে কারণ ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক করা অপরাধ, এমনকী সে আইনত বিবাহিত স্বামী হলেও। অনেকের (যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে করে) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।’ এর পরেই এবার রাজ্যজুড়ে ব্যাপক পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। 

অসমের এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি বলেছেন,  সরকার এবার গ্রেফতার করছে। এতে জানা যাবে ৯০ শতাংশ ছেলে-মেয়ে মুসলমান হবে। তারা একতরফা গ্রেফতার করবে। আমরা এটা জানি। তাদের  দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম বিরোধী। বিজেপি আছে, আরএসএস আছে, তাই তাদের ওপর চাপ থাকবে। এভাবে গ্রেফতার করা উচিত নয়।

মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি

মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি আরও বলেন, ‘রাজ্য সরকারের উচিত ছিল গোটা অসমে কমপক্ষে ৩০/৪০ দিন প্রচার  চালানো। মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জানাতে হবে এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষকে সতর্ক করুন। এর পর আপনি ব্যবস্থা নেবেন। যারা আগে বিয়ে করেছে তাদের নিয়ে কী করবেন? এভাবে ধরতে থাকলে লাখ লাখ মানুষ গ্রেফতার হবে। এটা একটা ভুল কাজ। কোনো সতর্কতা নেই, কোনো প্রচারণা নেই। তারা  মুসলমানদের হয়রানি করতে চায় ’ বলেও মন্তব্য করেন মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি।  

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা দিলীপ সইকিয়া বলেছেন, ‘বদরুদ্দিন আজমল  সম্পূর্ণভাবে একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ, তার দলের কাজ শুধুমাত্র সরকারের প্রতিটি উদ্যোগে ধর্মীয় রঙ খোঁজা। তারা সবসময় একটি ধর্মীয় কোণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এই কঠোর পদক্ষেপের সঙ্গে কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটব্যাংকের স্বার্থে তারা সব কিছু করবে’ বলেও মন্তব্য করেন বিজেপি নেতা দিলীপ সইকিয়া।# 

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএমআর/৪    

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ