আগস্ট ১৮, ২০২৩ ১৫:১২ Asia/Dhaka
  • হরিয়ানায় মুসলিমদের বয়কটের ডাক: উদ্বেগ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি নারী আইনজীবীদের ফোরামের

ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিশাসিত হরিয়ানার নূহতে সহিংসতার পর মুসলিমদের বয়কটের ভিডিও ইস্যু সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে।

দিল্লি হাইকোর্টের নারী আইনজীবীদের ফোরাম ওই ইস্যুতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি পাঠিয়েছে। যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমদের বয়কটের ভিডিও এবং অন্যান্য উপকরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ১০১ জন নারী  আইনজীবীর সই করা তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের পুরনো মামলার সিদ্ধান্তও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ভিডিও নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ৩টি দাবি জানিয়েছেন। যেটিতে হরিয়ানা সরকারের কাছে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য প্রদানকারীদের থামাতে পদক্ষেপ নেওয়া, বক্তব্যের ভিডিও নিষিদ্ধ করার এবং এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে।

মহিলা আইনজীবীরা বলেছেন, হরিয়ানার মিছিলের ঘৃণ্য ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও আদেশ অমান্য করা হচ্ছে। অবিলম্বে তাদের ট্র্যাক করে নিষিদ্ধ করা উচিত। এসব বক্তব্য ঘৃণা ছড়াচ্ছে এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। তাদের কাছ থেকে সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে। এই লোকেরা অস্ত্র নিয়ে সাম্প্রদায়িক স্লোগানও দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও এসব ভিডিও নিয়ে কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এগুলো বন্ধ না হলে বিদ্বেষ ও সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

আইনজীবীরা আরও বলেছেন, এই ধরনের ভিডিও রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের  ব্যর্থতা। বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সময় অথবা পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। নারী আইনজীবীরা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের আদেশের উদ্ধৃতিও দিয়েছেন, যেখানে নূহতে ধ্বংস প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, সরকার নূহের একটি ‘বিশেষ সম্প্রদায়কে টার্গেট’ করছে। মনে হচ্ছে সরকার ‘বুলডোজার’ দিয়ে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। এ বিষয়ে ডিজিপি ও স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছ থেকে জবাব তলব করে হাইকোর্ট।    

১) নূহ সহিংসতার পর হিসারে উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের মিছিলের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দোকানদারদের খোলাখুলি সতর্ক করা হয়েছে বহিরাগত মুসলমানদের কাজে না রাখার জন্য। কেউ রাখলে তাকে দু’দিনের মধ্যে বের করে দিতে হবে। এটা না করলে তাদের গাদ্দার বলা হবে। এ ঘটনায় অবশ্য পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

২) হরিয়ানার জিন্দ, কাইথাল, সিরসা, মহেন্দ্রগড়, রেওয়াড়ি, ঝজ্জর এবং আরও কয়েকটি জেলার প্রায় ৫০টি পঞ্চায়েত একই ধরনের চিঠি লিখেছিল। যেখানে মুসলিম ফেরিওয়ালাদের গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। প্রশাসনিক চাপে পরে এসব চিঠি প্রত্যাহার করা হয়।

৩) হরিয়ানার পানিপথের নওহরা গ্রামে মুসলিম বয়কটের ব্যানার লাগানো হয়। এতে বলা হয় গ্রামে মুসলিমদের ঢোকা নিষিদ্ধ। যদি কোনও মুসলিম ব্যবসায়ী গ্রামে ঢোকে তার কোনও ক্ষতি হলে সে নিজেই দায়ী থাকবে। শুধু তাই নয়, গ্রামে বসবাসকারী কিছু মুসলিম পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিশ্বহিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নূহতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময়ে গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সহিংসতার জেরে মসজিদের একজন ইমাম সাহেব, ২ জন হোমগার্ডসহ ৬ জন নিহত হন। নূহতে সহিংসতার পরে, পুলিশ এ পর্যন্ত ৬০ টি এফআইআর নথিভুক্ত করাসহ ২৪২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার নামে নূহতে অনেক মুসলিমের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, হরিয়ানার নূহ সহিংসতায় অন্যতম অভিযুক্ত বিট্টু বজরঙ্গীর কাছ থেকে ৮টি তলোয়ার উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার রিমান্ড শেষে তাকে নূহ আদালতে পেশ করা হয় এবং তাকে ফরিদাবাদের নিমকা জেলে পাঠানো হয়। #  

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।   

ট্যাগ