‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে দেশের নাম স্থায়ীভাবে ‘ভারত’ করার প্রস্তুতি?
(last modified Tue, 05 Sep 2023 12:31:02 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৩ ১৮:৩১ Asia/Dhaka
  • কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ
    কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ

ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে 'প্রেসিন্ডেন্ট অফ ভারত' লেখা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে,রাষ্ট্রপতি ভবনে ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জি-২০’র নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে 'প্রেসিন্ডেন্ট অফ ভারত' লেখা হয়েছে, যেখানে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখা উচিত ছিল।

দেশের সংবিধানে অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’ এবং 'ভারত' উভয়ের উল্লেখ রয়েছে। সাধারণত ইংরেজিতে 'ইন্ডিয়া' লেখা হয়। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে এবার দেশের নাম 'ভারত' লেখার তোড়জোড় চলছে বলে খবর।

আজ (মঙ্গলবার) কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় ওই ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, 'খবর তাহলে সত্যি। ৯ সেপ্টেম্বর আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে  রাষ্ট্রপতি ভবন। তাতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে। সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা রয়েছে, ‘ভারত অর্থাৎ ইন্ডিয়া, রাজ্যের সমষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে।’ কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের উপরই আঘাত হানা হচ্ছে।’   

কংগ্রেসের এ ধরণের সমালোচনার পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয়েছে, সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কী দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ থেকে সব ভাষাতেই ‘ভারত’ করার প্রস্তাব আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার? আগামী ১৮/২২ সেপ্টেম্বর সংসদে পাঁচ দিন ব্যাপী বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে এই প্রস্তাব তোলা হতে পারে বলে খবর।

বিশেষ অধিবেশন ঠিক কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছে। অনেকেরই দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকেরই দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই জি-২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নয়া জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র পক্ষ থেকে ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ইংরেজিতে 'ভারত' লেখার সমর্থনে প্রচার শুরু হয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, 'ভারতীয় প্রজাতন্ত্র- আমাদের সভ্যতা দৃঢ় পদক্ষেপে অমৃতকালের দিকে এগোচ্ছে দেখে আনন্দ হচ্ছে, গর্ববোধ করছি।’    

আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডা এমপি ‘জি-২০ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে  ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লিখে নয়া বিতর্ক শুরু করেছে বিজেপি। বিজেপি কীভাবে ‘ইন্ডিয়া’কে শেষ করতে পারে? দেশ কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এটি ১৩৫ কোটি ভারতীয়দের। আমাদের জাতীয় পরিচয় বিজেপির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যা তারা তার ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারে।’  

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ('ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স')‘ইন্ডিয়া’ নামের জোট গঠনের পর তারা দেশের নাম পরিবর্তন  করছে। যদি আগামীকাল ইন্ডিয়া জোট একটি সভা করে এবং তার নাম পরিবর্তন করে ‘ভারত’ রাখে,  তাহলে তারা কী ভারতের নামও পরিবর্তন করবে এবং তারা কী ভারতের নাম পরিবর্তন করে বিজেপি রাখবে?   

 কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বিজেপিকে টার্গেট করে বলেছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া'র মতো নাম দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্কিল ইন্ডিয়া', 'খেলো ইন্ডিয়া' ইত্যাদি। তারা (বিজেপি) 'ইন্ডিয়া' শব্দটিকে ভয় পায়। সংবিধানের ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে 'ইন্ডিয়া, এটাই ভারত'। এই নাম (ইন্ডিয়া) কীভাবে মুছে ফেলা যাবে?’  

 কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, ‘আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে যে এটা  'ইন্ডিয়ার সংবিধান'। ইন্ডিয়া শব্দটিকে গোটা বিশ্ব চিনেছে। আমি মনে করি না এটা পরিবর্তন করার দরকার আছে।’    

অন্যদিকে, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুগ বিরোধীদের টার্গেট করে বলেছেন, ‘ভারত বলতে বা লিখতে সমস্যা কেন? আপনাদের লজ্জা লাগছে কেন? আমাদের জাতিকে প্রাচীনকাল থেকেই ভারত বলা হয় এবং আমাদের সংবিধানেও এর উল্লেখ রয়েছে। ওরা কোনো কারণ ছাড়াই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’   এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের শাসকদল বিজেপি এবং বিরোধীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/৫ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ