বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-নেপালের পেছনে ভারত, চলছে সমালোচনা
(last modified Fri, 15 Oct 2021 13:15:22 GMT )
অক্টোবর ১৫, ২০২১ ১৯:১৫ Asia/Dhaka
  • বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-নেপালের পেছনে ভারত, চলছে সমালোচনা

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২১ এর তালিকায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং নেপাল থেকেও ভারত পিছিয়ে থাকায় বিভিন্নমহল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০১তম।

২০২০ সালে ভারত ছিল এই তালিকার ৯৪ নম্বরে। কিন্তু ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি নেপালের মতো দেশ।  আরেক প্রতিবেশী দেশ চীন রয়েছে তালিকার একেবারে সবার উপরে। ২০২১ সালের তালিকায় ভারতের স্থান গতবারের চেয়ে ৭ ধাপ নেমে হয়েছে ১০১।   তালিকা প্রস্তুতকারীরা একে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।  

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সমাজকর্মী জান্নাতুন ফিরদৌস আজ (শুক্রবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাজনীতিতে সুশিক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের খুব অভাব রয়েছে। যদি রাজনীতিতে সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের অভাব না থাকত তাহলে যে সমস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী করছেন তা বাস্তবায়িত হতো সঠিকভাবে। ওই পরিকল্পনাগুলো যদি ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতো তাহলে আজকে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় এতটা পিছিয়ে যেতাম না।’ 

জান্নাতুন ফিরদৌস

ওই ইস্যুতে ভারতের সাবেক ‘আইএএস’ কর্মকর্তা সূর্য প্রতাপ সিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে টার্গেট করে বলেছেন, 'ক্ষুধায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। অভিনন্দন, মোদীজি।  কংগ্রেস নেতা শ্রীনিবাস বিবি বলেছেন, ‘ক্ষুধাসুচকে ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারত ১০১ তম স্থানে পৌঁছেছে, নেপাল এবং পাকিস্তানেরও পেছনে! ধন্যবাদ, মোদীজির ব্যানার কবে থেকে থাকবে? '     

সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ বলেন, 'চটকদার সরকারি বিজ্ঞাপন সত্ত্বেও, আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয় অনাহারে আছে। ভারতে ক্ষুধার মাত্রা "উদ্বেগজনক"। আমাদের দেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব প্রতিবেশি দেশের থেকে পিছিয়ে আছে। লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক।’  

কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা কপিল সিব্বাল বলেছেন, ' অভিনন্দন মোদিজী। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, আপনি দেশকে বৈশ্বিক শক্তি বানিয়েছেন, আপনি আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতিও বাড়িয়েছেন। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স -২০২০তে র‍্যাঙ্ক ৯৪, এখন আমরা ২০২১-এ ১০১-এ এসেছি। এমনকি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপালেরও পেছনে! '  

সুরভি নামে এক মহিলা বলেন, 'প্রথমে পেট্রোল তারপর ডিজেল ১০০ ছাড়িয়েছে, এখন গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স র‍্যাঙ্কে ১০১, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মোদীজি।'  সাংবাদিক দীক্ষা নিতিন রাউত কটাক্ষ করে বলেছেন, 'মোদিজী একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা হল- ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।’ খাবোও না কাউকে খেতেও দেবো না। (সরলার্থে, দুর্নীতি করব না। অন্যদেরও করতে দেব না)।   

অনুপ স্বরূপ নামে একজন বলেছেন, 'অবিশ্বাস্য। এটা কী গণমাধ্যমের আরেকটি গুজব যে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারত ৯৪ থেকে ১০১-এ নেমে এসেছে যখন আমাদের বলা হয় যে ‘সব ঠিক আছে’? এটা কী ভারতকে বদনাম করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র?   

ক্ষুধা ও অপুষ্টির নিরিখে তৈরি তালিকাটিতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে চিন, ব্রাজিল, কুয়েতের মতো ১৮টি দেশ। তালিকায় ভারতের অনেক আগে রয়েছে নেপাল (৭৬), বাংলাদেশ (৭৬) ও মিয়ানমার (৭১)। প্রতিবেশি পাকিস্তানও ভারতের থেকে এগিয়ে ৯২ নম্বর স্থানে রয়েছে।

প্রত্যেক বছর আয়ারল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ এবং জার্মান সংস্থা ‘ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ’ যৌথভাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুধার পরিমাণ নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে যে কোনও দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থান, শিশু স্বাস্থ্য এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে অসাম্যের মতো বিষয়। এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে তারা ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’ সূচক নির্ধারণ  করে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শিশুদের অপুষ্টি জনিত সমস্যা এবং শিশুমৃত্যু হারের মতো বিষয় রয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।