অক্টোবর ১৬, ২০২২ ১৯:০৬ Asia/Dhaka

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়েরে ইরানে সহিংসতা এবং দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা ঘোষণা করে বলেছেন, "যদিও বাইডেন প্রশাসন কূটনীতিকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন রোধ করার সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করে তবে ইরানে বর্তমান অস্থিরতার প্রতি সমর্থন দেয়ার বিষয়েই ওয়াশিংটন প্রধান্য দিচ্ছে।

গত মাস থেকে ইরানের কিছু প্রদেশে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছে। এসব দাঙ্গা এবং সহিংসতাকে উসকে দেয়ার জন্য বা আরো তীব্রতর করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।  ইরানের অস্থিরতা এবং সহিংস কর্মকাণ্ড শুুরু হওয়ার পরপরই মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যভাবেই তাদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইসও স্বীকার করেছেন যে বাইডেন প্রশাসনের মনোযোগ এখন ইরানে চলমান সহিংসাতর দিকে এবং একটি চুক্তির জন্য প্রস্তুত না হওয়ার জন্য উল্টো তেহরানকে অভিযুক্ত করেছেন তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইরানে অস্থিরতা অব্যাহত রাখাকে সমর্থন করেছেন এবং দাবি করেছেন: আমরা সাহসী ইরানি নাগরিক ও নারীদের পাশে আছি।"  এখন প্রশ্ন হচ্ছে ,  মার্কিনীরা কেন ইরানে চলমান অশান্তি ও অস্থিরতার প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে?

ধারনা করা হচ্ছে যে ইরানের অস্থিরতার প্রতি ওয়াশিংটনের প্রকাশ্য সমর্থনের প্রথম কারণ হল আমেরিকা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উৎখাত করার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তেহরানের বিরুদ্ধে সাবেক মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতিটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার লক্ষ্যেই অনুসরণ করা হয়েছিল। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনও বলেছিলেন যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার ৪০ তম বিপ্লব বার্ষিকী উদযাপন করতে সক্ষম হবে না। সর্বোচ্চ চাপের নীতির ব্যর্থতার ফলে মার্কিনীদের মধ্যে অসন্তোষের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য সব সময় সুযোগের অপেক্ষা করে আসছিল। এখন যদিও মার্কিনীরা খুব ভালো করেই জানে যে এসব দাঙ্গা এবং সহিংসতা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে মোটেও পতনের দিকে নিয়ে যাবে না এবং ইরান এর আগে যেসব দাঙ্গা ও সহিংসতার  মধ্য দিয়ে গিয়েছিল তার সাথে তুলনা করা যায় না, তবুও তারা দাঙ্গার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ওয়াশিংটনের উপলব্ধি যে বিশৃঙ্খলা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে দুর্বল করা যাবে । যেমন বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা সম্প্রতি তার বক্তৃতায় বলেছেন, শত্রুর লক্ষ্য হচ্ছে ইরানি সরকার ও কর্মকর্তাদেরকে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও সহিংসতার দিকে ব্যস্ত রাখা।

ইরানে অশান্তির জন্য আমেরিকার সমর্থনের দ্বিতীয় কারণ হল ইহুদিবাদী এবং সৌদি শাসক গোষ্ঠীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তেল আবিব এবং রিয়াদ বিশ্বাস করে যে নতুন মার্কিন সরকার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সাবেক প্রশাসনের মতো ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপর চাপ দেয়নি। ওয়াশিংটন এবং রিয়াদ ও তেল আবিবের মধ্যে দূরত্বের আরও অনেক কারণ থাকলেও মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রশাসন এখন ইরানের অস্থিরতাকে সমর্থন করে ডেমোক্র্যাটদের জন্য বিদেশী সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যার সঙ্গে রিয়াদ ও তেল আবিব যোগ দিয়েছে।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি পারমাণবিক আলোচনার সাথে সম্পর্কিত। পরমাণু সমঝোতার প্রতি স্থায়ী গ্যারান্টি এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ'র পক্ষ থেকে সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে ইরানের দাবির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে পারমাণবিক আলোচনা বন্ধ হয়ে আছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরানের দাবি পূরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়ার পর সব পক্ষ একটি চুক্তির কাছাকাছি  অবস্থানে আসার লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল। হোয়াইট হাউসেের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল যে চলমান সহিংস বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেখান থেকে তারা ফায়দা লুটতে পারবে। #

পার্সটুডে/এমবিএ/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ