ইরানকে বিরান করার মার্কিন ষড়যন্ত্রের নানা দিক ও এর ব্যর্থতার রহস্য
(last modified Sat, 29 Oct 2022 13:43:15 GMT )
অক্টোবর ২৯, ২০২২ ১৯:৪৩ Asia/Dhaka
  • ইরানকে বিরান করার মার্কিন ষড়যন্ত্রের নানা দিক ও এর ব্যর্থতার রহস্য

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় ও ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের সহযোগী আরও কয়েকটি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ইরানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিতে উস্কানি দিয়ে ইসলামী এই দেশটির ওপর বৈদেশিক চাপ জোরদারের ষড়যন্ত্র করেছে। 

ঐতিহাসিক নানা তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণেও দেখা গেছে মার্কিন সরকার গত কয়েক দশকে, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ইরানে অস্থিতিশীলতা ও সড়ক-দাঙ্গা সৃষ্টির পেছনে প্রধান মদদদাতার ভূমিকা রেখেছে। যেমন, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ইরানের নানা শহরে যেসব প্রতিবাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছিল তাতে মার্কিন সরকারের ভূমিকা থাকার কথা খোদ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই স্বীকার করেছিল। দাঙ্গাকারীরা ইন্টারনেট মাধ্যমের অপব্যবহার করতে পারছিল না বলে বিকল্প পদ্ধতিতে এই মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা দেয়াসহ নানা ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তি সরবরাহের কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন মার্কিন কর্মকর্তা ব্রায়ান হুক। 

সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তায় ইরানের কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ একদল দাঙ্গাবাজকে নানা ধরনের মদদ দিয়ে ইরানি জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিরও ষড়যন্ত্র করেছে মার্কিন সরকার ও তার লেজুড় শাসক-চক্র। মানবাধিকার ও নারী অধিকারের প্রতি সমর্থনের অজুহাতে এ ধরনের দাঙ্গা উস্কে দেয়ার ভূমিকা যে পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফসল তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গবেষণা-কেন্দ্রের নানা পরিকল্পনা ও মিডিয়ার ভূমিকা বিশ্লেষণ করেও নিশ্চিত হওয়া যায়।  যেমন, মার্কিন সরকারের ইরান নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হিসেবে পরিচিত গণতন্ত্র সমর্থক ফাউন্ডেশন  (FDD) নামের একটি মার্কিন সংস্থা সাম্প্রতিক গোলযোগ শুরুর অনেক আগেই তথা প্রায় চার মাস আগে গত ২৩ মে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ক্ষোভ থাকার বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে এক রিপোর্টে বলেছিল, ইরানে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ চরম রূপ নিচ্ছে যা বাইডেন সরকারকে সহায়তা দিতে পারে! অর্থাৎ বাইডেন সরকার যেন এই পরিস্থিতিকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে সেই পরামর্শ দিয়েছে ওই সংস্থাটি।

দেখা গেছে মার্কিন সরকার ঠিকই এই সংস্থাটির কুমন্ত্রণা গ্রহণ করে ভিয়েনায় পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের আলোচনা বন্ধ করে দেয় এবং ইরান মানবাধিকার না থাকার দাবি প্রচার করাসহ দাঙ্গাবাজদেরকে স্টার-লিংক নামক ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ ও অন্য অনেক ধরনের মদদ দেয়া শুরু করে। 

ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানে তাদের অনুচরদের এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে হাইব্রিড যুদ্ধের প্রশিক্ষক হিসেবে বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যাতে তারা অন্যদেরকেও সংঘবদ্ধ করে এইসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারে! মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে সিআইএ এবং বেশ কয়েকটি বেসরকারি মার্কিন প্রতিষ্ঠান।

ইরানের শত্রুদের গোয়েন্দা চক্রগুলো দেশটির শিক্ষক, শ্রমিক ও ছাত্রসহ নানা শ্রেণীর মধ্যে প্রভাব ফেলতে কৃত্রিম বা ভুয়া নানা গোষ্ঠী ও নেতা তৈরিরও পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর সময়ে টুইটারে কল্পিত নাম ব্যবহার করে ৫০ হাজারেরও বেশি ভুয়া একাউন্ট খোলা হয়েছে ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর লক্ষ্যে। এ ছাড়াও পেন্টাগনের মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ দলকে নিযুক্ত করা হয়েছে ফার্সি ভাষায় নানা ধরনের প্রচারণামূলক প্রবন্ধ ও খবর সম্বলিত নানা ভুয়া মিডিয়া তৈরি করতে এবং সেসবকে গাইড করতে। ইরান বিরোধী এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে টুইটার, ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, ইউটিউব ও টেলিগ্রামের মত সামাজিক নানা মাধ্যম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক ভুয়া ফলোয়ারযুক্ত ভুয়া সাংবাদিক ও ভুয়া বিশেষজ্ঞের নাম এবং এসব ব্যক্তির প্রোফাইল ছবিও তৈরি করা হচ্ছে রোবটের মাধ্যমে! 

কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ও ইহুদিবাদী মহলসহ তাদের আরব অনারব সহযোগী চক্রের এতসব ষড়যন্ত্র  সত্ত্বেও ইরানি জনগণের সচেতন মহল ও তথ্য-অভিজ্ঞ মহলের সতর্কতার কারণে এইসব ষড়যন্ত্র তথা আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়ার স্টাইলে ইরানকে বিরান করার ষড়যন্ত্র এবারও ব্যর্থ হয়েছে।  #

পার্সটুডে/২৯              

ট্যাগ