মার্চ ০৪, ২০২৪ ১৮:৪৪ Asia/Dhaka
  • ইরানি নারী ক্রীড়াবিদদের সাফল্য কে না দেখতে চায়?
    ইরানি নারী ক্রীড়াবিদদের সাফল্য কে না দেখতে চায়?

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকে নারীরা এদেশে একটি ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মানজনক স্থান অর্জন করেছে। আর তা হল ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানি নারীদের সাফল্য।

যেমন  গত বছর চীনের হ্যাংজুতে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত  এশিয়ান গেমস প্রতিযোগিতায় ইরানি মহিলা ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য অনেক পদক ছিনিয়ে এনেছে। এই প্রতিযোগিতায় ইরানের অর্জন করা মোট ৫৪টি পদকের মধ্যে নারীরাই ১৬টি পদক অর্জন করেছে  যা মোট পদকের প্রায় এক তৃতীয়াংশ।

গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে ইরানের কাফেলা

কিছু ইরানী মহিলা ক্রীড়াবিদ প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পদক জিতেছেন। ফারোনাক পারতু অজারের কথা উল্লেখ করা যায় যিনি প্রথম ইরানি নারী সাইক্লিং হিসেবে এশিয়ার মতো কোনো বড় প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছেন, অথবা তানেহ আহমাদির রৌপ্য পদক অর্জন যেটিকে স্কেটিংয়ে ইরানি মহিলাদের জন্য সেরা পদক হিসেবে গণ্য করা যায়। এই সাফল্যের তালিকায় ইরানের নারী ভারোত্তোলনের রেকর্ড ভাঙা এলাহা রাজাঘির কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।   

ফারোনাক পারতু অজার

কিন্তু একই সময়ে এই সাফল্যগুলো যেখানে ক্রীড়া সমাজকে একটি বিশেষ স্থানে দাঁড় করিয়েছে সেখানে একটি চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করা যায়। যদিও এটি নির্মাণের সময় মুক্তি পায়নি তবে তা সাইবারস্পেস থেকে পাচার করা হয়েছিল। হাস্যকরভাবে এই চলচ্চিত্রটি একজন ইরানি মহিলার গল্প যিনি সাঁতারে রেকর্ড গড়ার দাবি করেন, কিন্তু ইরানি কর্তৃপক্ষ অনুপযুক্ত পোশাকের অজুহাতে তার রেকর্ডগুলো মেনে নিতে  অস্বীকার করে।

এলাহে রাজকি

এটা কিভাবে সম্ভব যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতাকা তলে আন্তর্জাতিক খেলাধুলায়  অংশ নিয়ে ইরানি নারীদের সাফল্যের ধারা কিংবা নারী অধিকারকে সমর্থন করে এমন বিষয়ের সিনেমা নির্মাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না ? কিন্তু অনেক সংশয়ের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া একটি বিতর্কিত এবং পরস্পর বিরোধী গল্প কিভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়?

ইরানের সারা জাবনমার্দি তার তিন মাস বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হাংজু এশিয়ান গেমসের ১০ মিটার পিস্তলে রৌপ্য পদক নিতে মঞ্চে গিয়েছিলেন।

প্রশ্ন জাগে চলচ্চিত্রের নির্মাতা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রিরা যারা তাদের চলচ্চিত্রের বিষয় হিসাবে মহিলাদের ক্রীড়াঙ্গন থেকে একটি বাস্তব গল্প বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা কেন কোরাশে জাহরা বাগেরির রৌপ্য পদক (প্রাচীন কুস্তির একটি প্রকার) বা স্কেটিংয়ে তারানেহ আহমাদির রৌপ্য পদক ইরানি নারীদের ক্রীড়ার সাফল্য নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেন না?

জাহরা বাকেরি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মহিলাদের কুস্তি, ভারোত্তোলন এবং স্কেটিং এর বিরুদ্ধে নয়। এমনকি সাঁতারে ইরানি মহিলাদের প্রতিযোগিতা দেশটির অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হয়, কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরুষদের উপস্থিতির কারণে এবং ইরানি মহিলা সাঁতারুদের ধর্মীয় পোশাকের ব্যবহারে আন্তর্জাতিক বিরোধিতার কারণে ইরানি মহিলাদের এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনুমতি দেওয়া হয় না। 

ইরানি নারী কাবাডি দল

এসব পরিস্থিতিতে ইরানি নারীদের সাফল্য কে না দেখে? যারা একজন মুসলিম নারীর জন্য প্রয়োজনীয় সকল শরীয়াহ নীতিমালা মেনে সকল প্রকার খেলাধুলায় পদক জয়ের পথ প্রস্তুত করেন এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় তাদের পদক বিজয়ের বিলবোর্ড স্থাপন করেন, অথবা যারা এই সমস্ত সাফল্যের মধ্যে  সন্দেহজনক এবং বিতর্কিত গল্প রচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন এবং যারা ক্রীড়া ক্ষেত্রে ইরান নারীদের চ্যাম্পিয়নশিপ উপেক্ষা করেন তার মাধ্যমে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে  ইরানী নারীদের আসল শত্রু কারা?

পার্সটুডে/এমবিএ/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ