শিরাজের এরাম গার্ডেন: ইরানের ঐতিহাসিক উদ্যানের এক অনন্য উদাহরণ (সচিত্র)
(last modified Mon, 08 Apr 2024 13:23:15 GMT )
এপ্রিল ০৮, ২০২৪ ১৯:২৩ Asia/Dhaka
  • শিরাজের এরাম গার্ডেনে ইরানি পরিবার
    শিরাজের এরাম গার্ডেনে ইরানি পরিবার

পার্স টুডে- ''এরাম গার্ডেন" ইরানের ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন উদ্যানগুলোর একটি উদাহরণ, শিরাজের গার্ডেনগুলোর রত্ন এই এরাম গার্ডেন। এর আয়তন ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার। একটি আয়তক্ষেত্রাকার জমিতে গড়ে তোলা এখানকার সাইপ্রেস গাছের বাগান পৃথিবী বিখ্যাত।

ইরানের শিরাজ শহরকে সুদূর অতীত থেকেই কেবল যে এখানকার বিশ্ববিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক হাফেজ এবং সাদির জন্যই চেনে, তা নয় বরং সবুজ বাগ-বাগিচার শহর, ফুল আর বুলবুলির শহর, এরাম পার্কের শহর কিংবা শিরাজের বাগিচাগুলোর জন্যও চেনে। এরাম পার্কটি হলো শিরাজের অসংখ্য দর্শনীয় ও বিখ্যাত বাগ-বাগিচার মাঝে একটি রত্নের মতো।

এরাম, শিরাজের বাগিচাগুলোর মাঝে রত্নের মতো

শিরাজের এরাম বাগিচার রহস্যময় ইতিহাস:

এরাম গার্ডেনের প্রকৃত ইতিহাস এবং এর গড়ে ওঠা সম্পর্কে অনেক রহস্য রয়েছে।  বাগানটি নির্মাণের প্রাথমিক ইতিহাস সম্পর্কিত একমাত্র দলিল হল অসংখ্য ভ্রমণকাহিনীতে এই গাগিচার উল্লেখ।

এরাম শব্দটি আরবি শব্দ "ইরাম" থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো সুউচ্চ ও আকাশগুলো। পবিত্র কুরআনে বহুবার এই শব্দটির উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্য-প্রমাণ অনুসারে এই বাগানটি নির্মাণের তারিখ সেলজুক যুগে ফিরে যায়। আতোবাক কারাজের হাতে নির্মিত হয়েছিল এই বাগিচা। তিনি সানজারশাহ সালজুকের (৪৭৯ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ৫৫২ হিজরিতে মারা গিয়েছিলেন) রাজত্বকালে ফার্স শাসনের জন্য নিযুক্ত ছিলেন।

গোপন রহস্যে ঘেরা শিরাজের এরাম গার্ডেন

শিরাজের এরাম গার্ডেনের ভেতরে যে ভবনটি রয়েছে সেটি কাজার যুগেরও প্রায় ২০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। ওই ভবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর দোতলা কেন্দ্রীয় ঝুলবারান্দা। ওই বারান্দার উপরের অংশটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি। তার ওপরে টাইলসের কারুকাজ করা হয়েছে। এইসব কারুকাজ কাজারিদের ঐতিহাসিক এবং সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বের কিংবদন্তীতুল্য উদাহরণ।

শিরাজের এরাম গার্ডেনের ভেতরে নির্মিত ভবনের ছবি

কাজার আমলে এরাম বাগিচা ৭৫ বছর ধরে কাশকায়ি গোত্রের নেতাদের হাতে ছিল। ওই সময়েই তারা সেখানে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিল এবং নাসের উদ্দীন শাহ কাজরের সময় সেখানে আরেকটি প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল। সেই প্রাসাদটির অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে। স্থাপত্য, পেইন্টিং, টাইলসের কারুকাজ এবং প্লাস্টারিংয়ের দিক থেকে এই প্রাসাদটিকে ইরানী স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

শিরাজের এরাম বাগিচা প্রাসাদের দর্শনীয় স্থাপত্য

এই তিনতলা ভবনটি রঙিন টাইলস এবং সুন্দর প্লাস্টারিং কাজে সুসজ্জিত। নীচের তলার কক্ষগুলোকে বেসমেন্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গ্রীষ্মের গরমের সময় বিশ্রামের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হত। উপরের দুই তলায় পার্সেপোলিস থেকে নেওয়া কলামও দেখতে পাওয়া যায়।

রঙিন টাইলস দিয়ে সাজানো জলাধারের দেয়াল এবং মেঝে

যখন বিল্ডিংগুলোতে গরমের সময় শীতল করার কোনো যন্ত্র কিংবা ব্যবস্থা ছিল না, সে সময় ভবনের বাসিন্দারা গ্রীষ্মের উত্তাপ থেকে বাঁচতে জলাধারগুলোতে আশ্রয় নিতো।  গরমের সময় অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে জলাধারের দেয়াল এবং মেঝে রঙিন টাইলস দিয়ে সজ্জিত করা হতো।

এরাম গার্ডেনের দরজা-জানালারও একটি বিশেষ প্যাটার্ন রয়েছে 

বাগিচার দরোজা জানালাগুলোও কোনো অংশেই সৌন্দর্য বিবর্জিত নয়। এই স্থাপনাটির লোহার জালের কয়েকটি জানালা আছে। আলো-বাতাসের সুবিধার্থে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাসাদের দরজাগুলিও সেগুন কাঠের তৈরি। এ কারণেই তারা আজ অবধি দাঁড়িয়ে আছে। এই কাঠের দরজাগুলোতে এমনসব খোদাইকর্ম করা হয়েছে যে সেগুলো এখন সূক্ষ্ম কারুকাজের অনন্য নিদর্শনের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বৃত্তাকার খিলান, প্রাণবন্ত তৈলচিত্র, টাইলসের কাজ, মোকরান্স, বাগানমুখি বড় বড় জানালা, শক্ত পাথরের স্তম্ভগুলো, প্লাস্টারিং, খোদাইকর্ম এবং ভাস্কর্য সবই বাগানের প্রাসাদটিকে একটি বিশেষ আকার এবং কাঠামো দিয়েছে অন্য কোথাও যার তুলনা নেই।

উপর থেকে তোলা শিরাজের এরাম গার্ডেনের দৃশ্য

ইরানের ৯টি বাগানের মধ্যে শিরাজের এরাম গার্ডেন একটি। এই বাগানটি ২০১১ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে নিবন্ধিত হয়েছে। ইউনেস্কোতে নিবন্ধিত ইরানি বাগানগুলোর মধ্যে রয়েছে: শিরাজের এরাম গার্ডেন, ফার্সের মারভদাশতের পাসারগাদ গার্ডেন, ইসফাহানের চেহেলসুতুন গার্ডেন, কাশানের ফিন গার্ডেন, আব্বাস আবাদ বেহশহর গার্ডেন, প্রিন্স কেরমান গার্ডেন, আকবরিয়েহ বিরজান্দ গার্ডেন, ইয়াজদের দৌলত আবাদ গার্ডেন এবং ইয়াজদের মেহরিজ পাহলাভনপুর গার্ডেন।

এরাম বাগান; ইরানি ও বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য

ইরানের ফার্স পর্যটন ও হস্তশিল্প এবং কালচারাল হেরিটেজের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাবিত আকলিদি বলেছেন: গত ৪ মার্চ ২০২৪ থেকে ৩০ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ১৩ লাখ ১১ হাজার ৬২৮ জন পর্যটক ফএর্সর পর্যটন স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন। শিরাজের এরাম গার্ডেন ছিল পর্যটকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য।#

পার্সটুডে/এনএম/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ