মে ০৮, ২০২৪ ১৫:১২ Asia/Dhaka
  • পশ্চিমা আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতা

 মধ্য এশিয়া থেকে পশ্চিম এশিয়া এবং পারস্য উপসাগর থেকে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলে তেহরান ও মস্কোর ভাগ্য যেন পরস্পরের স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ঘনিষ্ঠভাবে।

ইরান-রাশিয়া কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সর্বাত্মক সহযোগিতার বিশ-সালা চুক্তির খসড়া শিগগিরই চূড়ান্ত করছে এবং উভয় পক্ষই এ চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে অধীর আগ্রহ নিয়ে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে  ইউরেশিয়ান এ দুই শক্তি নানা গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে ইরান সফর করেছিলেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই ছিল সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোর বাইরের কোনো দেশে প্রথম সফর। তার ওই সফর এ ইঙ্গিত তুলে ধরে যে মস্কো আর পাশ্চাত্যে কোনো কৌশলগত সমকক্ষ খুঁজছে না বরং আঞ্চলিক শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে, যেমন, ইরান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে চীনের মত দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। দৃশ্যত ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা অতীতের চেয়ে ভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।   

মস্কো ও তেহরান শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি, প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন, ড্রোন ও জঙ্গি বিমান নির্মাণ, মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ ও করিডোর ব্যবহারসহ কৌশল গত বাণিজ্য সহযোগিতার মত নানা ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতা বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও সার্বিকভাবে এ দুই দেশ পাশ্চাত্য ও পশ্চিমা মতাদর্শের বিরুদ্ধে খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছে। 

ইরানের যে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, বিশেষ করে পারস্য উপসাগর, ওমান উপসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে এর সংযোগ থাকার কারণে দেশটি রাশিয়ার কাছে বেশ আকর্ষণীয়।

ওদিকে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ক্রমেই বাড়ছে এবং এর আর্থিক পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নয়াদিল্লী ও মস্কো তাদের বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণকে ৪০হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায়। কিন্তু এজন্য ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি নিরাপদ করিডোর বা ট্রানজিট থাকা জরুরি। আর এই উভয় দেশই এক্ষেত্রে ইরানকে সবচেয়ে নিরাপদ করিডোর বলে মনে করছে। 

ভৌগলিক বৈচিত্র্যময় সুবিধাদির কারণে ইরান বৈশ্বিক বাজারগুলোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ জংশন বা সংযোগ-কেন্দ্র। ভারত মহাসাগরের সঙ্গে কৃষ্ণ সাগরের যোগাযোগ বা সংযোগ রাশিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার ওপর যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল না তখনও এ বিষয়টি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এখন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জন্য এর গুরুত্ব দ্বিগুণ বেড়েছে। ইরানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সঙ্গে নৌ-সংযোগ অর্জন করার অর্থ হল স্থল-পথের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বাণিজ্যের এক বহুল-ব্যবহৃত রুটের সংযোগ পাওয়া।  

ওদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেহরান-মস্কো সামরিক সহযোগিতা ক্রমেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য এক ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা এই সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করার অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।  

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাশ্চাত্য তেহরান-মস্কো সহযোগিতা জোরদার নিয়ে গভীর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, যদিও ইরান ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিষয়ে নিজেকে বার বার নিরপেক্ষ বলে ঘোষণা করে এসেছে। ইরান এই সংঘাত বন্ধেরও জোর দাবি জানিয়ে আসছে।  ইউরোপীয় নীতি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র সিইপিএ'র রাশিয়া বিষয়ক গবেষক এমিল উদলিয়ানির মতে মুক্ত বাণিজ্য বিষয়ে ইরান ও রাশিয়ার চুক্তিগুলো এ দুই শক্তির জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দুই শক্তিই পাশ্চাত্যের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব-ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চায়। 

সূত্র: ইরানের দৈনিক এ'তেমাদ ('কেন পাশ্চাত্য ইরান ও রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর বিস্তারে আতঙ্কিত?' শীর্ষক প্রবন্ধ)।  

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

  

ট্যাগ