কুরানের হাফেজ শহীদ জেনারেল সালামি সম্পর্কে আমরা কী জানি?
(last modified Wed, 25 Jun 2025 13:59:14 GMT )
জুন ২৫, ২০২৫ ১৯:৫৯ Asia/Dhaka
  • ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেইন সালামি
    ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেইন সালামি

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেইন সালামি বিশ্বের তিনটি জীবন্ত ভাষা আয়ত্ত করার পাশাপাশি কুরআন এবং নাহজুল-বালাগার একজন হাফেজ ছিলেন।

ফার্সি ১৪০৪ সালের ২৩ খোরদদ ( ১৩ জুন) তেহরানে ইরানের কিছু সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকারের আক্রমণে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী আইআরজিসির সর্বাধিনায়ক জেনারেল হোসেইন সালামি শহীদ হন। পার্সটুডের আজকের নিবন্ধে জেনারেল সালামির জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

জন্ম ও শিক্ষা

জেনারেল হোসেন সালামি ১৯৬৮ সালে ইরানের ইসফাহান প্রদেশের গোলপায়েগান কাউন্টির উপকণ্ঠ ভানশান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গোলপায়েগানে তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৮ সালে তেহরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

শহীদ হোসেইন সালামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে ইসলামি বিপ্লবী আন্দোলনের উত্থানের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেন এবং এই পরিবেশে তিনি ছাত্রদের আন্দোলনের সাথেও যোগ দেন। ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর তিনি কিছু সময়ের জন্য জনপ্রিয় কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের উপর বাথ সরকারের আক্রমণের আগ পর্যন্ত তিনি সেই বছরের নভেম্বরে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসিতে যোগদান করেন এবং তৎক্ষণাৎ ইরানের কুর্দিস্তান এবং তারপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ফ্রন্টে যান। আট বছরের ইরান-ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তির পর জেনারেল সালামি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করেন এবং ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আইআরজিসি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে শিক্ষকতা করার সময় জেনারেল হোসেইন সালামি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইরানের উচ্চতর জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অনুষদ সদস্য ছিলেন। সালামি কুরআন এবং নাহজুল-বালাগার একজন হাফেজ ছিলেন এবং আরবি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় তিনি সাবলীল ছিলেন।

বিভিন্ন দায়িত্বপালন

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় জেনারেল সালামি ২৫তম কারবালা ডিভিশন, ১৪তম ইমাম হুসেন ডিভিশন এবং নৌ ঘাঁটিতে বিভিন্ন যুদ্ধের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত উচ্চ যুদ্ধের সময়কালের প্রতিষ্ঠাতা ও কমান্ডার সালামি আইআরজিসি জয়েন্ট স্টাফের ডেপুটি চিফ অফ অপারেশনস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি অন্যান্য যেসব দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার মধ্যে ছিল ২০০৫ সালের ১ অক্টোব থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আইআরজিসি বিমান বাহিনীর কমান্ডার, ইরানের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের সদস্য, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর এবং  ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এই বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ ছিলেন।

প্রতিরোধ ফ্রন্টকে সমর্থন

জেনারেল সালামি ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার অস্তিত্বকে অবৈধ বলে মনে করতেন এবং হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করতেন। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের বিরুদ্ধে বিজয় এবং ইরানের মাটি থেকে ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার উপর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তার আইআরজিসি কমান্ডের সময় ঘটেছিল।

জেনারেল সালামির ওপর নিষেধাজ্ঞা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল জেনারেল হোসেইন সালামিকে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জেনারেল সালামি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত আইআরজিসি কমান্ডারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,  'কোন সন্দেহ নেই যে শত্রুরা ভবিষ্যতে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের মন্দ এবং ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের পরিণতি আরও ভালভাবে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে।'

শাহাদাত

ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল হোসেইন সালামি ১৩ জুন তেহরানে ইরানের কিছু সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইহুদিবাদী সরকারের আক্রমণে শহীদ হন এবং তার মরদেহ আগামী ২৭ জুন রোজ শনিবার দাফন করা হবে। 

পার্সটুডে/এমবিএ/২৫  

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।