ইরানের ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার কতখানি পূরণ করতে পারবে ইনসটেক্স?
(last modified Thu, 07 Feb 2019 08:31:45 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯ ১৪:৩১ Asia/Dhaka
  • বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি
    বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, তার দেশের পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ইউরোপ নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তেহরানে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে এবং ইউরোপ এই সমঝোতায় নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ওই সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে প্রমাণ করেছে, ইরান যেকোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নকে নিজের নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করে।

২০১৮ সালের মে মাসে মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

প্রেসিডেন্ট রুহানির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়া বিদেশি কূটনীতিকরা তার বক্তব্য শুনছেন (বুধবারের ছবি)

কিন্তু আমেরিকার হুমকি এবং ইউরোপের স্বাধীনভাবে কাজ করার সাহস না থাকার কারণে তাদের সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে নয় মাস সময় লেগে যায়। অবশেষে গত ৩১ জানুয়ারি পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী তিন ইউরোপীয় দেশ ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ইনসটেক্স চালু করার কথা ঘোষণা করে। পরমাণু সমঝোতায় ইউরোপের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন চালু থাকার যে কথা বলা হয়েছিল আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে তা চালু রাখার লক্ষ্যে ইনসটেক্স চালু করার কথা বলা হয়েছে।

অবশ্য প্রাথমিক অবস্থায় এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ইরান ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে কেবল খাদ্য ও ওষুধ ক্রয় করতে পারবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনেক দেরিতে ইউরোপ এই যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা ইরানের ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার ক্ষুদ্র একটি অংশও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরান যেখানে পরমাণু সমঝোতায় নিজের দেয়া সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে সেখানে ইউরোপের উচিত ছিল এমন একটি ব্যবস্থা চালু করা যার মাধ্যমে ইরান স্বাধীনভাবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আর্থিক ও বাণিজ্যিক লেনদেন চালিয়ে যেতে পারে।

ইউরোপের এই দুর্বল অবস্থান আবারো প্রমাণ করেছে, তারা সবক্ষেত্রে আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল এবং মার্কিন সরকারকে ক্ষুব্ধ করে কোনোকিছু করার সাধ্য তাদের নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সোমবার এক বিবৃতিতে আমেরিকার ইরান-বিদ্বেষী অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি করে নিজের সেই অক্ষমতা আরেকবার ফুটিয়ে তুলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, আমেরিকার পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলো এই সমঝোতা বাস্তবায়নের গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নামে তারা ইনসটেক্স নামক যে ব্যবস্থা চালু করার কথা বলছে তার ভিত্তিতে ইউরোপের সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার ভবিষ্যত নির্ধারিত হতে পারে না। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ে যেতে হলে ইনসটেক্স-এর পরিধি ও কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে আমেরিকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইউরোপীয়রা পরমাণু সমঝোতার বাইরে ইরানের কাছ থেকে যেসব ছাড় আদায় করার চেষ্টা করছে তা তারা আদায় করতে পারবে না। আর শেষ পর্যন্ত পরমাণু সমঝোতা যদি ব্যর্থ হয় তাহলে ইরানের হাতে বহু বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে যা সময়মতো বাস্তবায়ন করবে তেহরান।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৭     

ট্যাগ