শ্রোতাদের মতামত
মুসলমানদের আরও একটি ঈদ 'ঈদে গাদির'
আসসালামু আলাইকুম, আশা ও প্রার্থনা করি- রেডিও তেহরান পরিবারের আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ ৭ জুলাই (শুক্রবার) "ঐতিহাসিক ঈদে গাদির" উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করলাম।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-বলেছেন, "মুসলমানদের একটি ঈদ আছে যার মর্যাদা অন্য সব ঈদের চেয়েও বেশি। আর তা হচ্ছে ঐ দিন যেদিন মহানবী (সা.) হযরত আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.)-কে খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন এবং বলেন, 'আমি যার মওলা ও নেতা আলী তাঁর মওলা ও নেতা'।" ( মাফাতীহুল জিনান, পৃষ্ঠা ৫০২)
সত্যি বলতে কী, আমি নিজেও জানতাম না যে, এমন একটি আলাদা ঈদের দিন আছে এবং সেটা ইরানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়! এই অনুষ্ঠানে জানতে পারলাম, এই দিনটির তাৎপর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার কথা।
৬৩২ খ্রিস্টাব্দ বা দশম হিজরির ১৮ জিলহজ মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশে আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.) নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাই এই দিনটি ঐতিহাসিক ভাবে বিশেষ মর্যাদা বহন করে।
বিদায় হজের পর রাসূল (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হজরত আলীকে (আ.) মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০/৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ সমাপনের পর তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিল সোয়া লাখ সাহাবি । পথে ১৮ জিলহজ মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। যেখানে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।"
আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতকে জানিয়ে দেন। ‘যখন রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন, হজরত আলীর (আ.) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, "হে আল্লাহ, আমি যাঁর মাওলা এই আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে তাঁকে বন্ধু বানায় তুমিও তাঁকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাঁকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।"
গাদির দিবসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল ইমামত। আর এই ইমামাত ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার আইন ও নীতি-নির্ধারক এবং নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করে। গাদির দিবসে ইসলামী সমাজের জন্য এই নেতৃত্বই নির্ধারণ করা হয়েছিল। গাদিরের ঘটনার পরই নাজিল হয়েছিল সুরা মায়েদার প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াত, যাতে বলা হয়েছে,
"আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেল, অতএব তাদের ভয় কর না, ভয় কর আমাকে। আজ তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের দ্বীনের ওপর আমি রাজি হয়ে গেলাম।"
এভাবে উম্মতে মুহাম্মদীর ধর্ম পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা এবং তাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত দান করার বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়। তাই গাদির দিবস হল, ইসলামের মহা-ঐক্যের দিবস এবং ইসলাম ও ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার পরিপূর্ণতার দিবস।
ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদার অথচ উপেক্ষিত একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়কে তুলে ধরার জন্যে রেডিও তেহরানকে জানাই আন্তরিক শুকরিয়া।
পবিত্র ঈদে গাদির উপলক্ষে সকলের প্রতি রইলো আন্তরিক মুবারকবাদ ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।
শুভেচ্ছান্তে,
এস এম নাজিম উদ্দিন
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ,
ভারত।
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।