ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪ ১০:৫৫ Asia/Dhaka

দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিরুদ্ধে তুরস্কের জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

ইসরাইলের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট এরদোগান সরকারের দ্বৈত নীতির বিরুদ্ধে তুরস্কের জনগণের বিক্ষোভ এটাই প্রথম নয়। গত সপ্তাহেও তুর্কি তরুণদের একটি দল ইসরাইলকে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান 'জোরলো' হোল্ডিংয়ের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। আর এই সপ্তাহে, তুর্কি জনগণ ইসরাইলে তুরস্কের ইস্পাত রপ্তানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইস্পাত রপ্তানিকারক কোম্পানির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

গত সপ্তাহে ইসরাইলে তুরস্কের বিদ্যুৎ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান 'জোরলো' হোল্ডিংয়ের সামনে এমন সময় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যখন গত শনিবার, ইস্তাম্বুলে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের কনস্যুলেটের সামনে ইসরাইলকে তেল সরবরাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বেশ কিছু সংখ্যক তুর্কি, অ-তুর্কি এবং আজেরি ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছিল।

এইসব বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায়, ইসরাইলে তুরস্কের 'ইচডাশ' কোম্পানির ইস্পাত রপ্তানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইস্তাম্বুলে এই কোম্পানির অফিসের সামনে বেশ কিছু তুর্কি নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তারা স্লোগান দেয়, "গণহত্যার অংশীদার হবেন না এবং ইসরাইলের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করুন।"

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে তুর্কি জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং তেলআবিবের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি থেকে বোঝা যায়, ইসরাইলের ব্যাপারে আঙ্কারা সরকার দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, আঙ্কারা সরকারের কর্মকর্তাদের এই পরস্পরবিরোধী নীতি তুরস্কের জনগণ ও বিশ্লেষকদের চোখ এড়াতে পারেনি। যেমন, তুরস্কের অন্যতম খ্যাতনামা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ইব্রাহিম কাহভে চি গত অক্টোবরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে, ইসরাইলে তুরস্কের রপ্তানি পণ্যের স্পষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, 'ইসরাইলে তুরস্কের পণ্য রপ্তানির পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, এরদোগান সরকারের কর্মকর্তারা মুখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর কথাবার্তা বললেও বাস্তবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের সমর্থন ধরে রাখা এবং ইসরাইলের সাথে তুরস্কের বাণিজ্য তো বন্ধ হয়নি বরং উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।'

তুরস্কের এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক রেস্তোরাঁর মেনু থেকে কোকা-কোলা ও নেসক্যাফের মতো ইসরাইলি পণ্যগুলোকে সরিয়ে দেওয়া এবং ‌একইসাথে ইসরাইলে ইস্পাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের রপ্তানিকে এরদোগান সরকারের ভণ্ডামি বলে বর্ণনা করেছেন।

বর্তমানে, ইসরাইলের ইস্পাত শিল্পের চাহিদার ২৫ শতাংশ তুরস্ক সরবরাহ করছে।

প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইলে পণ্য সরবরাহের দিক থেকে তুরস্ক এবং জার্মানির অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। এ কারণে তুর্কি অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ইব্রাহিম কাহভে চিসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা ইসরাইলের সাথে তুরস্কের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা, বিশেষ করে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

যদিও তুরস্কের কর্মকর্তারা ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে কঠোর বক্তব্য দিয়ে গাজায় চলমান গণহত্যার নিন্দা করছেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরাইলের সাথে তুরস্কের অর্থনৈতিক সহযোগিতা পূর্ণদমে বজায় রয়েছে। তুরস্কের জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এটা তাদের একটা কৌশল।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তুরস্কের নেতারা নিজেদেরকে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতির রক্ষক হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু একই সাথে তারা ইসরাইলের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার এবং পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রেখেছেন। 

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ