মে ০৮, ২০২৪ ১৭:৩০ Asia/Dhaka
  • অবরুদ্ধ গাজায় গণকবরের আবিষ্কার নিয়ে আমরা কী জানি?

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণকবরের আবিষ্কার যেখানে শত শত মানুষের মরদেহ পাওয়া গেছে তা দেখে খোদ জাতিসংঘের কর্মকর্তারা অবাক হয়েছেন।

গণকবরের কোনো আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা নেই। যাইহোক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা গণকবরের ঘটনাটিকে "অনেক মানুষের দেহাবশেষের সমাধিস্থল যেখানে তারা প্রায়ই একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করেন সেই হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

১. গাজায় ১৪০টি গণকবরের সন্ধান

ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক মোহাম্মদ আল-মুগবাত জানিয়েছেন যে গাজায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর হামলার শুরু থেকে যা গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে এই এলাকায়  প্রায় ১৪০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

গাজায় ১৪০ গণকবর আবিষ্কার হয়েছে। 

২. একটি গণকবরে প্রায় ৪০০টি মৃতদেহ আবিষ্কার

চলিত বছরে গত ২৭ এপ্রিল গাজার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নাসের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একক গণকবর আবিষ্কার করেছে যেখানে মৃতদেহের সংখ্যা ৩৯২ বলে তারা ঘোষণা করেছে।

৩. ইহুদিবাদী বাহিনীর নিষিদ্ধ অস্ত্র দিয়ে ফিলিস্তিনি শহীদদের লাশ গলিয়ে ফেলা

ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে  ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় এক বিশেষ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে যার ফলে নিহতদের মৃতদেহগুলো পচন ধরে যায় এবং গলে যায়। এখানে উল্লেখ করা  উচিত যে একটি থার্মোবারিক অস্ত্র হল এক ধরণের বিস্ফোরক যা উচ্চ-তাপমাত্রার বিস্ফোরণ তৈরি করতে পার্শ্ববর্তী বায়ু থেকে এটি অক্সিজেন ব্যবহার করে।

নিহতদের ফিলিস্তিনিদের লাশের পচন ও গলে যাওয়ার ছবি

৪. গাজার গণকবরের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য গুতেরেসের অনুরোধ

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত ৩০ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেন, শত শত ফিলিস্তিনি কিভাবে মারা গেছে এবং তাদের কিভাবে কবর দেওয়া হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের এই গণকবরগুলোর স্থানগুলোতে অবিলম্বে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া অপরিহার্য।

নবজাতক ফিলিস্তিনিদের প্রতিও ইসরাইল কোনো দয়া দেখায় নি। 

৫. গণকবর আবিষ্কারের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভা করা

গত ৫ মে আলজেরিয়া গাজা উপত্যকায় গণকবর আবিষ্কারের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করার আহ্বান জানায়।

৬. ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মিডিয়া অফিস এই গণকবরের জন্য ইহুদিবাদী সরকারকে দায়ী করে এবং গণকবরের আবিষ্কার এবং নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের নাজুক অবস্থাকে একটি "জঘন্য অপরাধ" বলে অভিহিত করেছে।

৭. ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া

এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ দাফনের দাবিকে "ভিত্তিহীন" বলে অভিহিত করে বলেছ, "নাসের হাসপাতালের এলাকায় তাদের অভিযানের সময় তারা নিখোজ ব্যক্তি এবং জিম্মিদের খুঁজে বের করার জন্য ফিলিস্তিনিদের মাধ্যমে দাফন করা মৃতদেহগুলো পরীক্ষা করেছে।

৮. ইহুদিবাদীদের দ্বারা ফিলিস্তিনি শহীদদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুরি করার সম্ভাবনা

গণকবরে নিহতদের মৃতদেহের ডকুমেন্টারি ভিডিও এবং ফটোতে নির্যাতনের চিহ্ন এবং তাদের হাত প্লাস্টিকের স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা, তাদের পেট অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে খোলা এবং সেলাই করা এবং তাদের কাটা হাত ও পা বিশেষ পোষাকে মোড়ানোর মাধ্যমে নির্দেশ করে যে তাদের জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে এবং তাদের দেহের কিছু অংশ চুরির বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

মৃতদেহগুলোর মধ্যে নিজের পরিবারের সদস্যদের খোঁজে পাওয়ায় ক্রন্দনরত এক ফিলিস্তিনি যুবক। 

৯. দাফনকৃত লাশগুলো আহত ও অসুস্থ ছিল

ইউরোপ-ভূমধ্যসাগরীয় হিউম্যান রাইটস মনিটর ঘোষণা করেছে যে গাজা উপত্যকার নাগরিক প্রতিরক্ষা দল গণকবরে দাফন করা নিহতদের মৃতদেহ পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য করেছে যে তাদের অনেককে হাত বাঁধা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে এবং আরো কিছু প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে গণহত্যার শিকার এসব ব্যক্তি আহত এবং অসুস্থ ছিল।

১০. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন

ইউএন হিউম্যান রাইটস অফিসের মুখপাত্র মিসেস রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, "গণকবরে পর্যবেক্ষণ করা কিছু মৃতদেহ পেছন থেকে হাত বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।  এটি এমন একটি বিষয় যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধি এবং আন্তর্জাতিক মানবিক নিয়ম নীতির গুরুতর লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয় এবং এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা উচিত।#

পার্সটুডে/এমবিএ/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ