মহানবীর (সা) প্রতিনিধি আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ)'র পরিচয়;
কেন আহলে বাইতের অনুসারীরা হযরত আলীকে (আ) ইমাম বা নেতা বলেন?
-
মহানবীর (সা) প্রতিনিধি আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর (আ) পরিচয়
পার্স-টুডে- আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ.'র জন্ম হয়েছিল হিজরতের ২৩ বছর আগে। তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন হিজরি ৪০ সনে।
মহানবীর (সা) আহলে বাইতের অনুসারীদের জন্য তিনি তাদের প্রথম ইমাম। তিনি মহানবীর সাহাবি, হাদিস বর্ণনাকারী, মহানবীর চাচাত ভাই ও জামাতা, ওহি লেখক এবং আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিতে খোলাফায়ে রাশিদিনের চতুর্থ খলিফা।
মুমিন বা বিশ্বাসীদের নেতা তথা আমিরুল মুমিনিন উপাধির অধিকারী হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ) বেহেশতি নারীকুলের নেত্রী নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরার স্বামী এবং জগত-বিখ্যাত দুই ইমাম হযরত হাসান ও হযরত ইমাম এবং হযরত যাইনাব কুবরার পিতা।
সুন্নি ও শিয়া ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর মতে পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মহানবীর প্রতি ঈমান এনেছিলেন হযরত আলী। মহানবী-সা.ই তাঁকে আমিরুল মুমিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম প্রধান সদস্য যাদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে নিশ্চয়ই আল্লাহ চান যে, তোমাদের আহলে বাইত থেকে গোনাহ ও অপবিত্রতা দূর করবেন এবং তোমাদেরকে পুরোপুরি পবিত্র করবেন।”-সূরা আহজাব - ৩৩ আর এরই আলোকে হযরত আলী নিষ্পাপ মহামানবদের অন্যতম।
বিদায় হজের পর গাদিরে খুম নামক স্থানে মহানবী (সা) হযরত আলীকে নিজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বের প্রতি জনগণের বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ আদায় করেন। হাজার হাজার সাহাবির সামনে এ সময় মহানবী সা. ঘোষণা করেছিলেন:
আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।” এই বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর বললেন:- “হে আল্লাহ! তাঁকে তুমি ভালবাস যে আলীকে ভালবাসে ও তুমি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে; এবং যে তাঁকে সাহায্য করে তুমিও তাঁকে সাহায্য কর, আর যে তাঁকে পরিত্যাগ করে, তুমিও তাকে পরিত্যাগ কর।”
অবশ্য ১১ হিজরিতে মহানবীর তিরোধানের পর বিভিন্ন কারণে ও ঘটনা-প্রবাহের ধারায় মহানবীর ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি। এর ২৫ বছর পর তৃতীয় খলিফা হিসেবে খ্যাত ওসমান বিন আফফানের নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি খেলাফতের পদে আসীন হন। হযরত আলীর খেলাফত বা নেতৃত্বের প্রশ্ন নিয়েই মুসলমানদের মধ্যে দুটি মাজহাব বা দল সৃষ্টি হয় শিয়া ও সুন্নি নামে।
শিয়া মাজহাবের অনুসারী মুসলমানরা মনে করেন মহানবী (সা) তাঁর জীবিত অবস্থায় এ কথা ঘোষণা করেছিলেন যে হযরত আলী রাসুলের তিরোধানের পরপরই তাঁর স্থলাভিষিক্ত তথা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত। ইসলামী সমাজের রাজনৈতিক বিষয়সহ সব বিষয়ের পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করেছিলেন তিনি এবং এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনের দিক-নির্দেশনার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
অন্যদিকে আহলে সুন্নাত আল জামায়াত বা সুন্নি মাজহাবের অনুসারী মুসলমানরা মনে করেন হযরত আলী চতুর্থ খলিফা ছিলেন এবং যে কোনো মুসলমান কোনো গ্রুপ বা ব্যক্তির সুপারিশের মাধ্যমে কিংবা কারো মনোনয়নের মাধ্যমে অথবা বংশীয় উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা যুদ্ধ ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যদি শাসনকর্তার পদ অধিকার করেন তাহলে তাঁকে মুসলমানদের নেতা হিসেবে মেনে নেয়া যায়।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
হযরত আলী ইবনে আবি তালিব মহানবীর নবুওত লাভের দশ বছর আগে ত্রিশতম হস্তি-বর্ষে ১৩ রজব শুক্রবার পবিত্র কাবা ঘরের ভেতরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা আবু তালিব ছিলেন মহানবী (সা)'র চাচা এবং মায়ের নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ। তাঁরা উভয়ই মক্কার কুরাইশ বংশের বনি হাশিম গোত্রের সদস্য ছিলেন।
মহানবীর জামাতা
হযরত আলী-আ. মহানবীর জামাতা হন ২৪ বছর বয়সে নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমাকে (সা.আ) বিয়ে করার মাধ্যমে। তাঁর প্রথম পুত্র সন্তান ইমাম হাসান-আ. ৫০ হিজরিতে মদিনায় মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের শাসনামলে তার চক্রান্তে শহীদ হন ও ইমাম হুসাইন-আ. ৬১ হিজরিতে কারবালায় ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নির্দেশিত চাপিয়ে দেয়া অসম যুদ্ধে শহীদ হন। হযরত আলী ও নবী-নন্দিনীর দুই কন্যা সন্তানের নাম হযরত যাইনাব ও উম্মে কুলসুম। হযরত ফাতিমা-সা.আ. মহানবীর তিরোধানের ৬ মাস পর ইহলোক ত্যাগ করেন যুব বয়সেই। হযরত আলী এরপর আরও কয়েকটি বিয়ে করেন এবং বেশ কয়েকজন সন্তানের অধিকারী হন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের যুদ্ধগুলোতে হযরত আলীর ভূমিকা
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ও মহানবীর-সা. জীবদ্দশায় কেবল তাবুক যুদ্ধ ছাড়া অন্য সব যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ইমাম আলী এবং এইসব যুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রধান বীর বা মূল সেনাপতি ও আত্মত্যাগের অনন্য মহিমায় ভাস্বর। মুশরিক ও মুনাফিকরা যাতে মদিনায় কোনো ফিতনা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য তিনি তাবুক যুদ্ধের সময় মদিনায় থেকে যান। ওহুদ যুদ্ধের সময় অনেক মুসলমান পালিয়ে গেলে হযরত আলী-আ. মহানবীর-সা. নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। তাই মহানবী-সা. বলেছেন, আলী আমার থেকে ও আমি আলী থেকে (হুয়া মিন্নি ও আনা মিনহু)
হযরত আলীর শানে নাজিল হওয়া পবিত্র কুরআনের আয়াত
লাইলাতুল মাবিত-এর আয়াত
১৩ হিজরিতে মক্কায় মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের চাপ চরমে পৌঁছায় ও মদিনায় আসতে ইয়াসরিব তথা মদিনার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে মহানবীর প্রতি দাওয়াতের প্রেক্ষাপটে এই শহরে মুসলমানদের হিজরত করার সুযোগ আসে। এ অবস্থায় মুশরিকরা মহানবী-সা.কে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হিজরতের রাত তথা লাইলাতুল মাবিত নামে খ্যাত রাতে মুশরিকরা মহানবীকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করে পাহারা দিতে থাকে। এ সময় হযরত আলী মহানবীর বিছানায় শুয়ে থাকেন যাতে মহানবী এখানে শুয়ে আছেন ভেবে তাঁর হিজরতের যাত্রার খবর যেন মুশরিকরা টের না পায়। মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ হযরত আলীর এই আত্মত্যাগের প্রশংসায় সুরা বাকারার ২০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।
মোবাহালার আয়াত
নাজরানের খ্রিস্টান পুরোহিত দল মহানবীর সঙ্গে বিতর্কে পরাজিত হওয়ার পরও সত্যকে স্বীকার না করায় যারা মিথ্যাবাদী তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণের চ্যালেঞ্জ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে মহানবী এই অনুষ্ঠানে যাদের নিয়ে আসার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তাদের মধ্যে হযরত আলী ছিলেন অন্যতম। সুরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।
শিয়া ও সুন্নি সূত্র অনুযায়ী এই ঘটনায় মহানবী নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন 'পুত্রদের' স্থলে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে, 'তোমাদের নারীদের' স্থলে হযরত ফাতিমাকে ও 'নিজেদের' স্থলে নিজের সঙ্গে হযরত আলীকে।
বেলায়েতের আয়াত
তোমাদের নেতা বা বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে এবং রুকুতে থাকা অবস্থায় যাকাত দেয় এবং বিনম্র।– শিয়া ও সুন্নি মুফাসসিরদের বর্ণনা অনুযায়ী সুরা মায়েদার এই আয়াত তথা ৫৫ নম্বর আয়াত নাজিল হয়েছিল হযরত আলীর শানে, তিনি একজন সাহায্যপ্রার্থীকে রুকুতে থাকা অবস্থায় সাহায্য হিসেবে নিজের আংটি দান করায়।
উলিল আমর সংক্রান্ত আয়াত
সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে যে উলিল আমরের কথা বলা হয়েছে তা হযরত আলী ও তাঁর বংশধরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ বা মুফাসসিররা মনে করেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক বা কর্তৃত্বশীল তাদের।
মানজিলাত সংক্রান্ত হাদিস
শিয়া ও সুন্নি সূত্রে বর্ণিত এ হাদিস অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এ হাদিসে মহানবী-সা. বলেছেন, হে আলী! আমার কাছে তোমার মর্যাদা মুসার সঙ্গে হারুনের সমতুল্য, শুধু পার্থক্য হল আমার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। কুরআনের নানা আয়াত অনুযায়ী হযরত হারুন ছিলেন মুসা নবীর ভাই, তাঁর উপদেষ্টা বা মন্ত্রী এবং প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্ত।
তিন খলিফার শাসনামলে তাঁর নানা তৎপরতা:
১.হযরত আলী-আ. প্রথম তিন খলিফার শাসনামলে দুঃস্থ ও দরিদ্রদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন।
২.এ সময় মৌলিক চিন্তা ও বিশ্বাসের বিষয়ে তিনি নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, বিশেষ করে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যেসব প্রশ্ন তুলত সেসব প্রশ্নের জবাব দিতেন তিনি।
৩. ইসলামী আইন ও নতুন করে দেখা দেয়া নানা বিষয়ে ইসলামের বিধান ব্যাখ্যা করতেন।
৪. আধ্যাত্মিক পথ-পরিক্রমা ও আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং সামাজিক উন্নত গুণাবলী অর্জনের বিষয়ে একদল সাহাবি ও তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতেন।
৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে তিনি খলিফাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন যাতে ইসলাম ও মুসলমানরা বিপদমুক্ত থাকে এবং ধর্মে কোনো বিচ্যুতি না আসে ও অন্তত ইসলাম আরও বেশি ক্ষতির শিকার না হয়।
হযরত আলীর রাষ্ট্রীয় সংস্কার নীতি:
হযরত আলী তৃতীয় খলিফা নিহত হওয়ার পর আনসার ও মুহাজিরদের বেশিরভাগ অংশের এবং মিশরিয় ও কুফাবাসীদের সমর্থন নিয়ে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজি হন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করে বংশীয় আভিজাত্যপনাকে বিবেচনায় না এনে যুক্তি ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে এক নতুন প্রশাসন ও প্রশাসক-শ্রেণী গড়ে তোলেন। তিনি সব ক্ষেত্রে কুরআনের ন্যায়নীতি ও মহানবীর সুন্নাত-ভিত্তিক বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রশাসকরা ঠিকমত কাজ করছেন কিনা তা তত্ত্বাবধান বা নজরদারির জন্য একদল পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেন।
হযরত আলীর অর্থনৈতিক সংস্কার:
তিনি শহরগুলোকে আবাদ করার পদক্ষেপ নেন। কৃষিকাজের বিস্তার ও কৃষকদের সহায়তার উদ্যোগ নেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেন। তিনি বাজারগুলোতে সরাসরি নজরদারির ব্যবস্থা করেছিলেন। বায়তুল মাল বা জনগণের সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করেন এবং এসব কাজে বিলম্ব করতে দিতেন না। সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর প্রতি সহায়তার ব্যবস্থা করেন।
সাংস্কৃতিক সংস্কার
হযরত আলী-আ. জনগণের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং এ জন্য শিক্ষক-শ্রেণী গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেন। পছন্দনীয় প্রথা ও রীতিগুলো ধ্বংস করতে দিতেন না, অন্যদিকে কুপ্রথাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। তিনি প্রশাসকদের সমালোচনা করার এবং তাদের প্রতি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের তৎপরতায় অংশ নিতে জনগণকে উৎসাহ দিতেন।
তাঁর খেলাফতের সময়ে সংঘটিত নানা যুদ্ধ
তাঁর চার বছর নয় মাসের খেলাফতকালে তিনটি যুদ্ধ তাঁকে করতে হয়েছে শত্রুদের বিরুদ্ধে।
জামাল বা উটের যুদ্ধ:
হযরত আলীর ন্যায়কামী বিচার ও শাসন-ব্যবস্থায় নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে বিপন্ন হতে দেখে ৩৬ হিজরিতে অনেকেই মুয়াবিয়ার উস্কানিতে তাঁর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধের আয়োজন করে। কিন্তু তারা জামাল-যুদ্ধ নামক এই যুদ্ধে পরাজিত হয়। হযরত আলীর খেলাফতকে মেনে নিয়ে শপথ করা সত্ত্বেও সেই শপথ বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ওই যুদ্ধের আয়োজন করার কারণে এই যুদ্ধকে হযরত আলীর বিরুদ্ধে নাকেসিনদের যুদ্ধও বলা হয়।
সিফফিনের যুদ্ধ:
৩৭ হিজরিতে বিদ্রোহীর দল হযরত আলীর ন্যায়বিচারকামী ও মহানবীর প্রকৃত সুন্নাত-ভিত্তিক শাসন-ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে এক রাজতান্ত্রিক রাসুলের সুন্নাত-বিরোধী নয়া শাসন-ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র করায় এই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
নাহরাওয়ানের যুদ্ধ:
৩৮ হিজরিতে সংঘটিত হয় এই যুদ্ধ। বিভ্রান্ত চিন্তাধারার অধিকারী একদল পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থের বিষয়ে নিজেদের সরল বা মনগড়া ব্যাখ্যার আলোকে মহানবীর সুন্নাত ত্যাগ করে মুসলমানদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নানা নির্যাতন শুরু করলে এই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই বিভ্রান্ত মুসলমানদের বলা হত খারেজি বা ইসলাম-ত্যাগী বা মারেকিন।
হযরত আলীর শাহাদাত
একজন খারিজির তরবারির আঘাতে আহত হয়ে ৪০ হিজরির ২১ রমজান শাহাদাত বরণ করেন ইমাম আলী-আ। উনিশ রমজান বুধবার ভোরবেলায় ইমাম আলী যখন কুফার মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন তখন ইবনে মুলজেম নামের ওই খারিজি বিষ-মাখানো তরবারি দিয়ে মহানবীর প্রিয়তম এই মহামানবের মাথায় আঘাত হানে।
কয়েকটি বিখ্যাত উক্তি
-হযরত আলী-আ. প্রায়ই বলতেন, যে ব্যক্তি নিজের ও আল্লাহর মধ্যকার বিষয় সংশোধন করে আল্লাহ তাঁর ও জনগণের মধ্যকার বিষয় সংশোধন করে দেন, আর যে নিজের পরকালীন বিষয়কে সংশোধন করে আল্লাহ তাঁর দুনিয়ার বিষয়াদি ঠিক করে দেন।
-বড় ধরনের পাপের কাফফারা হল সাহায্যের জন্য ফরিয়াদকারীকে সাহায্য করা ও দুঃখী ব্যক্তির আরাম বা স্বস্তির ব্যবস্থা করে দেয়া।
-অপমানিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু ভালো। এর কাছে ওর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করার চেয়ে নিজের অল্প কিছুতে সন্তুষ্ট থাকা ভালো।
-দুনিয়ার দিনগুলো দুই দিনের। একদিন তোমার অনুকূলের বা লাভের ও অন্যদিন তোমার প্রতিকূলের তথা ক্ষতির! লাভ দেখে আনন্দিত হয়ো না এবং ক্ষতি দেখেও দুঃখিত হয়ো না-তোমাদেরকে এ দুয়ের মাধ্যমেই পরীক্ষা করা হবে।
-বুদ্ধিমত্তা বা বিবেকের চেয়ে বড় সম্পদ আর নেই এবং অজ্ঞতার চেয়ে বড় দারিদ্র আর নেই। আদব বা ভদ্রতার চেয়ে বড় উত্তরাধিকার ও পরামর্শের চেয়ে বড় সাহায্যকারী আর কিছু নেই।
কয়েকটি সূত্র: মাকাতিলুত্তালিবিন, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, তাবাকাতুল কুবরা, আল মুস্তাদরাক আলাস সাহিহহিইন, নাহজুল বালাঘা, তারিখ আতত্বাবারি, তারিখ দিমাশ্ক, তাফসিরে ত্বাবারি, সাহিহ্ বুখারি (কিতাবে ফাজায়েলে সাহাবা) ও আলকামিল ফিত্তারিখ। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/০৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।