জুলাই ০৬, ২০২৩ ১৪:১০ Asia/Dhaka

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-বলেছেন, মুসলমানদের একটি ঈদ আছে যার মর্যাদা অন্য সব ঈদের চেয়েও বেশি। আর তা হচ্ছে ঐ দিন যে দিন মহানবী (সা) হযরত আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ)-কে খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন।

 বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-বলেছেন,  মুসলমানদের একটি ঈদ আছে যার মর্যাদা অন্য সব ঈদের চেয়েও বেশি। আর তা হচ্ছে ঐ দিন যে দিন মহানবী (সা) হযরত আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ)-কে খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন এবং বলেন, আমি যার মওলা ও নেতা আলী তাঁর মওলা ও নেতা (দ্র: মাফাতীহুল জিনান, পৃঃ ৫০২)।

এখন থেকে ১৪৩৪ চন্দ্র-বছর আগে বিদায় হজের কয়েক দিন পর  মহানবী (সা) মহান আল্লাহর নির্দেশে আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ) নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করেছিলেন। দিনটি ছিল ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ বা দশম হিজরির ১৮ জিলহজ।বিদায় হজের পর রাসূল (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হজরত আলীকে (আ) মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০ কিংবা ৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ সমাপনের পর তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিল হাজার হাজার বা কোনো কোনো বর্ণনামতে সোয়া লাখ সাহাবি । পথে ১৮ জিলহজ মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।

সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।" আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতকে জানিয়ে দেন অভিষেক উৎসবের আয়োজন করে। ‘যখন রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন, হজরত আলীর (আ) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি মুমিনদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আওলা বা প্রিয়?’ লোকেরা বললেন, ‘হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)’। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি যাঁর মাওলা এই আলীও তাঁর মাওলা। হে আল্লাহ যে তাঁকে বন্ধু বানায় তুমিও তাঁকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাঁকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
 

 

এরপর ওমর ইবনে খাত্তাব হজরত আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ‘ওহে আবু তালিবের সন্তান! প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মাওলা হিসেবে তুমি (রাত কাটিয়ে) সকাল করবে ও (দিন কাটিয়ে) সন্ধ্যা করবে। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৬১৬, ই.ফা.বা (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। গাদির সংক্রান্ত এই হাদিসটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন, ২৫৫ জন ওলামা, ২৭ জন হাদিস সংগ্রাহক, ১৮ জন ধর্মতত্ত্ববিদ, ১১ জন ফিকাহবিদ, ইমাম ও ওলামার সূত্রে মুসনদে ইবনে হাম্বল, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাযা, আবু দাউদ, তফসিরে কাশশাফ ইত্যাদি বিখ্যাত কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে। ইমাম বোখারীসহ ৩৬০ জন সুন্নি মনীষী এ সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলবীর ‘ইজালাতুল খাফা’ কিতাবও এ হাদিসের জন্য বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।

পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ হজরত আলীকে (আ) মুমিনদের মাওলা হিসেবে ঘোষণা করছেন।  যেমন সুরা মায়েদার ৫৫ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের মাওলা (অভিভাবক), তাঁর রাসূল (সা.) তোমাদের মাওলা এবং যে ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয় রুকুকালীন অবস্থায়’। তফসিরকারকরা সবাই একমত যে, এই আয়াত হজরত আলীর (আ) শানে নাজিল হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে এসেছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে মানো এবং রাসূলকে (সা.) মানো এবং উলিল আমরকে মানো। ‘উলিল আমর’ অর্থ এখানে আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে উম্মতকে পরিচালনা বা হুকুম প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি। আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ মানা সব মুমিন নর-নারীর জন্য ফরজ।

 

 

আল্লাহর নির্দেশে রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম এলাকায় হজরত আলীকে(আ) ‘অসি’ (oc) তথা নিজের অবর্তমানে নিজের কাজ সমাধানের জন্য প্রতিনিধি বা  পবিত্র কুরআনের ভাষায় উম্মতের ‘উলিল আমর’ বা ‘মাওলা’রূপে নিযুক্তি দিয়ে যান। ইমাম ওয়াকেদির সূত্রে মহানবীর (সা) সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরাইরার বর্ণনা-ভিত্তিক হাদিসে এসেছে, সূরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতটি হজরত আলী (আ)-এর শানে নাজিল হয়েছিল। ইবনে কাসিরের বিদায়া ওয়ান নিহায়া বইয়ে বলা হয়েছে এভাবে হজরত আলীর (আ) প্রতিনিধিত্ব বা মওলাইয়্যাতের বাইয়াত শেষ হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয় যাতে বলা হয়েছে, ‘আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেল, অতএব তাদের ভয় কর না, ভয় কর আমাকে। আজ তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের দ্বীনের ওপর আমি রাজি হয়ে গেলাম। ’ এভাবে উম্মতে মুহাম্মদীর ধর্ম পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা এবং তাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত দান করার বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়। তাই প্রিয়নবী (সা.) আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করলেন,

 'আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব দ্বীনকে কামেল করে দেয়ার কারণে এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার কারণে ও আবু তালেব নন্দন আলীর বেলায়েতের জন্য সব প্রশংসা আল্লাহর।'প্রিয়নবী (সা.) একদিন মসজিদে নববীতে সবার উদ্দেশে বললেন, ‘নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি হচ্ছে তোমাদের জন্য সিরাতুল মুস্তাকিম। সাহাবারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) ইনি কে’? প্রিয়নবী (সা.) বললেন ‘একটু অপেক্ষা কর’। এ সময় হজরত আলী (আ) রাসূল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হলেন। প্রিয়নবী (সা.) আলীর কপালে চুমু খেয়ে লোকদের উদ্দেশে বললেন ‘ইন্না হাজা সিরাতি ’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই সে আমার সিরাত বা পথ নির্দেশক। (সূত্র : দুররুল মনসুর, আল্লামা সিয়ুতি)।

প্রিয়নবী (সা.) হজরত আলীর শানে আরও বলেন, আমি জ্ঞানের নগর এবং আলী এই নগরের দরজা। বিশ্বনবী (সা) আরও বলেছেন,  'আমি হলাম হিকমতের ঘর আর আলী হলেন তার দুয়ার। আমার পর আলী সব মুমিনদের অভিভাবক'।উল্লেখ্য, গাদিরে খুমের ওই ঘটনার ২৫ বছর পর তৃতীয় খলিফা হিসেবে পরিচিত তৎকালীন সরকার-প্রধান ওসমান ইবনে আফফান নিহত হলে মুসলমানদের ব্যাপক অনুরোধ ও পীড়াপীড়ির মুখে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ১৮ই জিলহজ একান্ত অনীহা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বা খলিফা হন। সামাজিক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হিসেবে প্রায় ৫ বছর শাসন করার পর এক ধর্মান্ধ খারেজির সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে একুশে রমজান তিনি শহীদ হন। হামলার সময় তিনি কুফার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন।

গাদির দিবসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল ইমামত। আর এই ইমামাত ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার আইন ও নীতি-নির্ধারক এবং নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করে।  গাদির দিবসে ইসলামী সমাজের জন্য এই নেতৃত্বই নির্ধারণ করা হয়েছিল যা মেনে নেয়া ছিল সবার জন্যই ফরজ। গাদিরের ঘটনার পরই নাজিল হয়েছিল সুরা মায়েদার প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াত। যেমন, এ সুরার তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, ‘যারা কাফির তারা আজ তোমাদের ধর্মের পথে বাধা সৃষ্টির ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে।’ –তাহলে এই দিনে কী এমন বিষয় ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যা শত্রুকে নিরাশ করেছে?  ইসলামের ব্যাপারে কাফিরদের নিরাশ হওয়ার বিষয়টি নামাজ সম্পর্কে বলা হয়নি, জাকাত ও জিহাদ এবং এমনকি হজ সম্পর্কেও বলা হয়নি। বরং এখানে ইসলামী সমাজের নেতৃত্ব তথা ইমামতের দিকেই ইশারা করা হয়েছে।

 সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আল্লাহর রাসূল (স.) তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি না?” তখন উপস্থিত সব মুসলমান দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) এর এ কথার প্রতি সম্মতি জানান। অতএব, বিষয়টি হতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদিসে 'মাওলা' বলতে মু’মিনদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও তাদের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল (স.) যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন উম্মতের ক্ষেত্রে তা তিনি আলী(আ.) এর জন্যও নিশ্চিত করে যান। এরই পরিপূরক অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে মুসার সঙ্গে হারুনের যে সম্পর্ক আমার সঙ্গে আলীরও সেই সম্পর্ক শুধু পার্থক্য হল হারুন নবী ছিলেন কিন্তু আমার পরে আর নবী আসবেন না।

গাদিরের ঘটনা ছিল রাসূল-পরবর্তী মুসলিম সমাজে ইসলামী শাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আইনি-ভিত্তি। আর এ থেকে বোঝা যায় বিশ্বনবীর (সা) পর ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থার মডেল হল ইমামত ও বেলায়াত বা অভিভাবকত্ব যা নবুওতেরই ধারাবাহিকতা। রাজতান্ত্রিক, ব্যক্তি-তান্ত্রিক ও অভিজাততন্ত্র-ভিত্তিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে ইসলাম অনুমোদন দেয় না।  ঈদে গাদির দিবসে শাসন-ব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের পাশাপাশি হযরত আলী (আ)-কে ইমামতের মডেল হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছে। আলী (আ)’র নজিরবিহীন আধ্যাত্মিক নানা বৈশিষ্ট্য, গভীর ঈমান ও আন্তরিকতাকে পুরোপুরি বা ভালোভাবে উপলব্ধি করা খুবই কঠিন, কিন্তু এ মহাপুরুষের উচ্চতর মানবীয় গুণগুলোকে বোঝা ও অনুসরণ করা সম্ভব।

সাহসিকতা, দয়া, আত্মত্যাগ ও ক্ষমাশীলতা ছিল আলী (আ)’র কয়েকটি মানবীয় গুণ। মানুষের প্রিয় ও সম্মানসূচক সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল হযরত আলীর মধ্যে।  তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যাকে শিয়া ও সুন্নি সবাইই সম্মান করে এবং এমনকি কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না- এমন ব্যক্তিরাও  হযরত আলীর (আ) মহত গুণগুলোর বিষয়ে জানার পর বিনয়াবনত চিত্তে তাঁর প্রশংসা করতে বাধ্য হন।ইসলামে ঐশী ইমামত বা খোদায়ী নেতৃত্ব ঠিক করে দেন মহান আল্লাহ। আর সেটা বংশ পরম্পরায়ও চলতে পারে। যেমন, নবী হয়েছিলেন ইব্রাহিম (আ.)'র বংশধরগণ এবং হযরত দাউদ (আ.)'র পুত্র সোলায়মান ও হযরত মুসা (আ.)'র ভাই হারুন (আ.)।ইমামত বা নবুওতের মত ঐশী বা খোদায়ী পদগুলোতে কারা আসীন হবেন মানুষ তা ঠিক করার অধিকার রাখে না। কারণ, মানুষের মনোনয়ন বা নির্বাচন ভুলও হতে পারে। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই তা ঠিক করে দেন।

 

বিশ্বনবী (সা.) বিভিন্ন সময় আলী(আ.) কে নিজ খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন, রাসূল হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর যখন নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে   নির্দেশ দেয়া হয় তখন তিনি সবার উদ্দেশে বললেন:“যে ব্যক্তি এই পথে আমাকে সাহায্য করবে, সেই হবে  আমার ওয়াসি তথা কর্তৃত্বের অধিকারী, উজির বা পৃষ্ঠপোষক এবং স্থলাভিষিক্ত ।” রাসূল (স.) এভাবে বলেন-“তোমাদের মাঝে কে এমন আছে যে এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করবে যাতে সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, উজির (পৃষ্ঠপোষক), খলিফা এবং স্থলাভিষিক্ত হতে পারে?” কেবল আবু তালিবের সন্তান আলী (আ.) রাসূল (স.) এর কথায় হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। আর তখন আল্লাহর রাসূল (স.) নিজ আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশে বলেন-“এই আলী তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসি এবং খলিফা। অতএব, তোমরা তাঁর কথা শোন এবং তাঁকে অনুসরণ কর।”

গাদির দিবসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল ইমামত। আর এই ইমামাত ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার আইন ও নীতি-নির্ধারক এবং নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকা পালন করে।  গাদির দিবসে ইসলামী সমাজের জন্য এই নেতৃত্বই নির্ধারণ করা হয়েছিল যা মেনে নেয়া ছিল সবার জন্যই ফরজ। গাদিরের ঘটনার পরই নাজিল হয়েছিল সুরা মায়েদার প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াত। যেমন, এ সুরার তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, ‘যারা কাফির তারা আজ তোমাদের ধর্মের পথে বাধা সৃষ্টির ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে।’ –তাহলে এই দিনে কী এমন বিষয় ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যা শত্রুকে নিরাশ করেছে?  ইসলামের ব্যাপারে কাফিরদের নিরাশ হওয়ার বিষয়টি নামাজ সম্পর্কে বলা হয়নি, জাকাত ও জিহাদ এবং এমনকি হজ সম্পর্কেও বলা হয়নি। বরং এখানে ইসলামী সমাজের নেতৃত্ব তথা ইমামতের দিকেই ইশারা করা হয়েছে।

 হযরত আলীর নানা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর আদর্শকে জীবনের সব ক্ষেত্রে অনুসরণ করার মধ্যেই রয়েছে মুসলিম উম্মাহর সার্বিক মুক্তি ও সৌভাগ্যের দিশা। ঈদে গাদির পালন করা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা জীবনের সব ক্ষেত্রে আলী (আ)-কে অনুসরণের মাধ্যমে বিশ্বনবীর (সা) আদর্শকেই অনুসরণ করতে পারব। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্বনবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের আদর্শ অনুসরণ করা ছাড়া প্রকৃত মুসলমান হওয়া ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়।আসলে গাদির দিবস বিশ্বের সব মুক্তিকামীদের দিবস, মজলুম ও বঞ্চিতদের দিবস, ন্যায়বিচারকামীদের দিবস, ইসলামের মহা-ঐক্যের দিবস এবং ইসলাম ও ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার পরিপূর্ণতার দিবস।পবিত্র ঈদে গাদির উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি আবারও ঈদ মুবারক ও প্রাণঢালা অজস্র অভিনন্দন।#

পার্সটুডে/ এমএএইচ/১৭

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন 

ট্যাগ