'পশ্চিমা-ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে মুসলিম-খ্রিস্টান সম্মিলিত প্রতিরোধ বাড়াতে হবে'
(last modified Mon, 19 Aug 2024 11:47:37 GMT )
আগস্ট ১৯, ২০২৪ ১৭:৪৭ Asia/Dhaka
  • 'পশ্চিমা-ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে মুসলিম-খ্রিস্টান সম্মিলিত প্রতিরোধ বাড়াতে হবে'

পার্সটুডে: লেবাননের শিয়া মুসলমানদের সুপ্রিম ইসলামিক অ্যাসেম্বলির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আলি খতিব বলেছেন,পশ্চিমারা সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার স্লোগান দিয়ে এই অঞ্চলটিকে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করতে চায় যাতে তারা এই বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে তাদের ঔপনিবেশিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে।

শেখ আলি খতিব 'আল-আহেদ' ওয়েবসাইটের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বর্তমান স্পর্ষকাতর এবং ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। পার্সটুডের মতে ইসলামি উম্মাহ বর্তমানে যেসব জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে বিশেষ করে যখন ফিলিস্তিনিরা নৃশংস ও পাশবিক হামলার শিকার হচ্ছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আগ্রাসনগুলো মুসলিম উম্মাহকে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে সমর্থন করতে বাধ্য করেছে এবং সবাইকে একই কাতারে শামিল করেছে।

শেখ খতিব জোর দিয়ে বলেন যে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কেবল একটি ধর্মীয় নীতির আওতায় নয় বরং এটি প্রয়োজনের দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন,

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা একটি ধর্মীয় ও অত্যাবশকীয় নীতি। বর্তমানে এই কঠিন ঐতিহাসিক পর্যায়ে উম্মাহর স্বার্থে  তাদের একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধে যার লক্ষ্য হচ্ছে উম্মাহর ইচ্ছাকে পরাজিত করা তাই বর্তমানে উম্মাহ যে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনের বর্তমান যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যুদ্ধ শুধু ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নয় এটা সমগ্র মুসলিম জাতির যুদ্ধ।

তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যে যুদ্ধে লেবানন, ইরান, ইরাক ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ শক্তির সমর্থন ফ্রন্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে তা শুধু ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নয় মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে একটি জাতির যুদ্ধ। এটি উম্মাহর জন্য একটি অস্তিত্বের যুদ্ধ এবং যারা শান্তি দাবি করার ভান করে তাদের এখানে কোন স্থান নেই।

শেখ খতিব ইসলামি উম্মাহতে খ্রিস্টানদের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জোর দেন যে যে আমরা যখন উম্মাহ সম্পর্কে কথা বলি তখন আমরা কেবল মুসলমানদের বোঝাই না।

তিনি বলেন,  আমাদের অঞ্চলটি সেই জায়গা যেখানে নবী এবং ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল, তাই এটি দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় বৈচিত্র্য রয়েছে, ইহুদি ধর্ম থেকে খ্রিস্টান এবং ইসলাম পর্যন্ত। খ্রিস্টানরা বিভিন্ন ইসলামিক যুগে সরকারি নীতিতে মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা হিসাবে সবসময় ভূমিকা পালন করেছে এবং বাগদাদ, কায়রো এবং জেরুজালেমের ইসলামি সভ্যতার কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতি ছিল এবং তারা প্রভাবশালী ছিল।

খ্রিস্টানরা এই জাতির অংশ এবং খ্রিস্টান-ইসলামি সম্পর্ক সবসময়ই চমৎকার। খ্রিস্টানরা জনজীবন গঠনে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে এবং তাদের কখনই উম্মাহ থেকে পৃথক মনে করা উচিত নয়।

শেখ খতিব তার বক্তৃতার অন্য অংশে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিভক্ত করার জন্য পশ্চিমাদের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন,

সংখ্যালঘুদের রক্ষার স্লোগান দিয়ে, পশ্চিমারা তাদের ঔপনিবেশিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই বিভাজনকে ব্যবহার করার জন্য তারা এই অঞ্চলকে বিভিন্ন ধর্ম ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করতে চায়। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি এবং আজ গাজা ও ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে জাতি এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের দেশকে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের দিকে নিয়ে যাওয়া কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয় বরং এটি একটি পরিকল্পিত পরিকল্পনা। বর্তমানে যে সাম্প্রদায়িকতার আশংকা রয়েছে তা ভুয়া এবং এর উদ্দেশ্য হল ধর্মকে বিভক্ত করা এবং অঞ্চলকে বিভক্ত করা। ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদের অস্তিত্বকে ন্যায্যতা ও স্থিতিশীল করার জন্য এই প্রকল্পটি এখনও বিদ্যমান, কারণ উম্মাহর মধ্য বিভেদ তৈরি হলে তার শত্রুকে আরো শক্তিশালী করবে।

পরিশেষে শেখ খতিব এই অঞ্চলকে বিভক্ত করার জন্য পশ্চিমা-ইহুদিবাদী প্রকল্পের মোকাবিলায় প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং জোর দেন যে আজকের প্রতিরোধ শুধুমাত্র ফিলিস্তিনে বসবাসকারী গুটিকয়েক ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়, বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে যেখানে পশ্চিমারা এর নেতৃত্বে রয়েছে। তিনি বলেন,  প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে কারণ এর লক্ষ্য হচ্ছে নিপীড়নের মোকাবিলা করার জন্য জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার সঙ্গে জড়িত থাকা। এটি একটি অবিচ্ছিন্ন আন্দোলন যা কখনই শেষ হবে না।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ