মিশরের মুসলিম নারী পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু: মার্কিন-ইসরাইলি ষড়যন্ত্র?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i16510
আজ হতে ৬৪ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে মিশরীয় মুসলিম মহিলা পরমাণু বিজ্ঞানী সামিরা মুসা মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক রহস্যময় সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
আগস্ট ০৬, ২০১৬ ০১:৩২ Asia/Dhaka
  • মিশরীয় মুসলিম মহিলা পরমাণু বিজ্ঞানী সামিরা মুসা
    মিশরীয় মুসলিম মহিলা পরমাণু বিজ্ঞানী সামিরা মুসা

আজ হতে ৬৪ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে মিশরীয় মুসলিম মহিলা পরমাণু বিজ্ঞানী সামিরা মুসা মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক রহস্যময় সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন।

এই উদীয়মান মুসলিম নারী পরমাণু-বিজ্ঞানী মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ষড়যন্ত্রে নিহত হয়েছিলেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।

সামিরা মুসা ছিলেন বিশ্বে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে সর্বপ্রথম ডক্টরেট ডিগ্রিধারী নারী। তিনি চিকিৎসা খাতে পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহারকে এমন পর্যায়ে উন্নত করার জন্য কাজ করছিলেন যাতে তা সবার সাধ্যের আওতায় আসে।

সামিরা পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন এবং 'শান্তির জন্য পরমাণু শক্তি' শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হয়েছিলেন। তিনি বলতেন: 'আমি পরমাণু চিকিৎসাকে অ্যাসপিরিনের মতই সস্তা করব।' সামিরা নানা হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হয়েছিলেন। সামিরাকে মিশরেরর পরমাণু বিদ্যার জনকও বলা হয়।

তিনি পরমাণু প্রকল্পের জন্য ইউরেনিয়ামের তুলনায় ধাতব পদার্থ হতে আরো সাশ্রয়ী জ্বালানী উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন।

ইহুদিবাদী ইসরাইল পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার মজুদ করায় যে কোন সময় মধ্য প্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে, ড. সামীরা এমন আশংকা প্রকাশ করতেন বলে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাঁকে অপছন্দ করতো। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি সামিরাকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (বৃত্তি) দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমেরিকা সফরে এসে তিনি এ ধরনের আরো কয়েকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, এইসব প্রস্তাব গ্রহণের জন্য তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে ও সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হত।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের শেষের দিকে বা মিশরে ফিরে আসার প্রাক্কালে সামিরাকে ক্যালিফোর্নিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে যাওয়ার সময় তাকে বহনকারী গাড়িটি হঠাৎ ৪০ ফুট উঁচু স্থান থেকে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন সামিরা। পরে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে তাকে ক্যালিফোর্নিয়া সফরের যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তা ছিল ভুয়া। সামিরার গাড়ির ড্রাইভার গাড়ীটির পতনের আগ মুহূর্তেই ওই গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে উধাও হন। এটাও প্রমাণিত হয় যে মিশরের ইহুদি অভিনেত্রী রাকিয়া ইব্রাহিম (র‍্যাচেল আব্রাহাম) ক্যালিফোর্নিয়ায় সামিরার রহস্যময় সফরের পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং রাকিয়া ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। 

১৯৬৭ সালে মিশরের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. আমীর নাজীব গুপ্তঘাতকের হাতে ডেট্রয়টে নিহত হন। সামরিক অভিযানে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারে তিনি বেশ কয়েকটি সফল পরীক্ষা পরিচালনা করেন। 

উল্লেখ্য মুসলিম বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী ও বিশেষ করে পরমাণু বিজ্ঞানীরা প্রায়ই ইসরাইল ও আমেরিকার শত্রুতার শিকার হয়েছেন। ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ২০০৩ সাল থেকে ইরাকের সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। মোসাদ ইসলামী ইরানেরও বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে গুপ্ত ঘাতক বা সন্ত্রাসীর মাধ্যমে। জেনারেল মোশাররফের শাসনামলে আমেরিকার নির্দেশে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের জনক ড. আব্দুল কদীর খানকে গৃহবন্দী রাখা হয়। তাঁকে সি.আই.এ-এর কাছে হস্তান্তরের জন্য আমেরিকা জোর দাবী জানায়। জনরোষের ভয়ে মোশাররফ সরকার এ দাবী মানতে পারেনি। 

১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে অজ্ঞাতামা আততায়ী মিশরীয় বিজ্ঞানী সাঈদ আল বুদায়েরকে তাঁর আলেকজান্দ্রিয়াস্থ বাসভবনে গুলি করে হত্যা করে। মাইক্রোওয়েভ ফিল্ডে তিনি বেশ কয়েকটি অগ্রবর্তী থিউরী  উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। অনেকেই মনে করেন এসব হত্যাকান্ড মুসলমানদেরকে পারমাণবিক অস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তিসহ নানা ধরনের উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি হতে বঞ্চিত রাখার ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রের অংশ।  #

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/৫