ইয়েমেনে একই সময়ে সৌদি জোট ও করোনার গণহত্যা অভিযান !
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i81902-ইয়েমেনে_একই_সময়ে_সৌদি_জোট_ও_করোনার_গণহত্যা_অভিযান_!
ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ত্বাহা আল মুতাওয়াক্কিল বলেছেন, তার দেশে সৌদি জোটের আগ্রাসন চলতে থাকায় এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমেই বাড়ছে প্রাণহানি। 
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
জুলাই ৩১, ২০২০ ১৯:০৬ Asia/Dhaka
  • ইয়েমেনে সৌদি ধ্বংসযজ্ঞ
    ইয়েমেনে সৌদি ধ্বংসযজ্ঞ

ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ত্বাহা আল মুতাওয়াক্কিল বলেছেন, তার দেশে সৌদি জোটের আগ্রাসন চলতে থাকায় এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমেই বাড়ছে প্রাণহানি। 

ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ। সেই থেকে ৬৫ মাস পর এখনও থামেনি যুদ্ধ। আগ্রাসী জোটের সহযোগী বিশ্বের কয়েকটি পশ্চিমা পরাশক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর কোনো দেশ যুদ্ধের কারণে মানবিক দিক থেকে এত বেশি বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত হয়নি।

সৌদি জোট ইয়েমেনের ওপর নির্বিচার বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে এবং দেশটির ওপর আরোপ করে রেখেছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। সৌদি জোটের নির্বিচার বোমা বর্ষণে প্রাণ হারিয়েছে এক লাখেরও বেশি ইয়েমেনি এবং আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ-লক্ষ। ইয়েমেনের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থাপনাগুলোসহ ৮০ শতাংশেরও বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। 

দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ত্বাহা আল মুতাওয়াক্কিল জানিয়েছেন, চার হাজারেরও বেশি কিডনির রোগী ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না এ সংক্রান্ত ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অথবা এসব কেন্দ্রে আসার সুযোগ না থাকায়। ইয়েমেনে জ্বালানী সংকট থাকায় ও জ্বালানী পৌঁছানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এইসব চিকিৎসা কেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ইয়েমেনে চিকিৎসা সামগ্রী মেরামত করা যাচ্ছে না এবং ৬৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে ৯৩ শতাংশ চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহার-অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

পশ্চিমা শক্তিগুলোও ইয়েমেনের সংকটে নেতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের হামলা থেকেও নিরাপদ নয় ইয়েমেন। ইয়েমেনে এ পর্যন্ত ৭২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ ভাইরাসের প্রকোপে মারা গেছেন ৪৮৭ জন। স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান ইয়েমেনে তৎপর ছিল সেসবও করোনার অজুহাত দেখিয়ে ইয়েমেনে তাদের তৎপরতা বন্ধ রেখেছে। এ ধরনের ১৬২ টি প্রতিষ্ঠান ইয়েমেনে তাদের তৎপরতা বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। আর এ অবস্থায় দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারও বেড়ে গেছে। অথচ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে এইসব প্রতিষ্ঠান সৌদি জোটের অপরাধযজ্ঞের মোকাবেলায় ইয়েমেনে মানবিক ও স্বাস্থ্য সেবা তৎপরতা চালাচ্ছিল। 

উল্লেখ্য ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসনে অন্তত বিশ হাজার বেসামরিক ইয়েমেনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার শিশু ও তিন হাজার জন নারী। 

সৌদি জোটের নির্বিচার বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে ইয়েমেনের প্রায় ৮০ শতাংশ জরুরি বেসামরিক অবকাঠামো যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, কোনো কোনো বিমানবন্দর, আবাসিক বাড়ী-ঘর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কল-কারখানা, খাদ্য-গুদাম, বাজার, মসজিদ, বিদ্যুৎ ও পানি-সরবরাহ কেন্দ্রের মত জরুরি নানা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা।  আগ্রাসন ও অবরোধের শিকার ইয়েমেনে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ক্ষুধা ও অপুষ্টির মত নানা প্রাণঘাতী সংকট। 

ত্রিশ লাখেরও বেশি ইয়েমেনি শিশু স্কুল ও পড়াশুনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে অব্যাহত সৌদি আগ্রাসনের কারণে।  

জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার হিসাবমতে ইয়েমেনে প্রায় প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে অপুষ্টি ও কলেরা রোগসহ নানা রোগের শিকার একটি করে শিশু।বাড়ি-ঘরহারা আশ্রয়হীন শরণার্থীর সংখ্যাও হবে অন্তত অর্ধ-কোটি।  অন্যায়-অবরোধের শিকার দরিদ্র এই দেশটির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ নিয়মিত খাদ্য ও জরুরি ওষুধ পাচ্ছে না। 

ইয়েমেনিদের প্রতিরোধ হামলায় নিহত হয়েছে সৌদি জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা-কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার সেনা ও তাদের ভাড়াটে অনুচর। ইয়েমেনিদের  ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও  ড্রোন হামলা সৌদি জোটের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে দেখা দিয়েছে। সৌদি জোট চূড়ান্ত পরাজয় ও চরম অসম্মান এড়াতে চাইলে এখনই ইয়েমেনের চোরাবালি থেকে তার বেরিয়ে যাওয়া উচিত বলে সামরিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর আগে গত শতকের ৭০,৮০ও ৯০’র দশকেও ইয়েমেনের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে পরাজিত হয়েছিল সৌদি আরব ও মিশরসহ বাইরের শক্তিগুলো।

ইয়েমেনে সৌদি আরবের আগ্রাসনে সর্বাত্মক মদদ যোগাচ্ছে দখলদার  ইহুদিবাদী ইসরাইল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। সৌদি আরবকে সামরিক,লজিস্টিক, রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা তথ্যসহ সর্বাত্মক সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা করছে নব্য-উপনিবেশবাদী এই সরকারগুলো।  #

পার্সটুডে/৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।