জুন ৩০, ২০২৩ ১৯:২৮ Asia/Dhaka

প্রতিশোধ ও প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে গোটা ফ্রান্স। দেশটিতে পুলিশের হাতে ১৭ বছরের এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটানা কয়েক দিনরাত ধরে সহিংস প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

 গত মঙ্গলবার প্যারিসের পশ্চিম দিকে নান্তেরে এলাকায় মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি চালানোর সময় ওই কিশোরকে পুলিশ অস্ত্র দেখিয়ে থামতে বাধ্য করে এবং গুলি করার হুমকি দিলে হতভাগ্য ওই কিশোর গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যায়।

স্থানীয় বিচারালয় ১৭ বছরের ওই কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশই দোষী ও ঘটনাটিকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলে ঘোষণা করেছে। নিহত কিশোরের গাড়িতে কোনো মাদকদ্রব্য ও অ্যালকোহলও পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় বিচারক জানিয়েছেন। 

কিন্তু দেশটির পুলিশ প্রথমে এ ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জানায়, ১৭ বছর বয়সী নায়েল এম নামের আলজেরিয় বংশোদ্ভূত ওই কিশোর পুলিশের এক অফিসারকে লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিল! তাকে থামাতেই গুলি চালানো হয়। তবে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বহু ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়ি থেমে আছে। দুই পুলিশ-কর্মীর একজন রিভলভার তাক করে আছে। আর এ সময় এক আওয়াজ ভেসে আসে, মাথায় গুলি করব। এরপর গাড়ি নিয়ে নায়েল পালাতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। 

এরপর শুরু হয় নান্তেরে অঞ্চলে সহিংস গণ-প্রতিবাদ। ক্রমেই ওই সহিংস গণ-আক্রোশ ছড়িয়ে পড়ে লিওন, মার্সেই, স্ট্র্যাসবুর্গ ও টলিউসসহ ফ্রান্সের বড় বড় শহরগুলোতেও। সহিংস গণ-আক্রোশ ঠেকাতে ফরাসি সরকার সারা দেশে ৪০  হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে। পুলিশ এ পর্যন্ত অন্তত ৩২৭ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদীরা বিভিন্ন পুলিশ স্থাপনা, সরকারি ভবন ও পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত হয়েছে প্রায় দুই ডজন পুলিশ ও বহু সংখ্যক প্রতিবাদী।

ফ্রান্সের সরকারি মহল এইসব প্রতিবাদ নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন ও প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ ব্রাউন জনগণকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যাকরন মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠক ডেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবেলায় বিশেষ সেল বা কমান্ড কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

ফ্রান্সে এমনিতেই বেতন ও চাকরির বয়স সংক্রান্ত সংস্কারসহ সরকারের নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রায়ই গণ-বিক্ষোভ ও গণ-ধর্মঘট চলে আসছে। পুলিশের অতিরিক্ত বল-প্রয়োগসহ নানা সহিংসতা ও অশান্ত পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বলা হচ্ছে ট্রাফিক আইন অমান্যকারী চালকদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর অধিকার সংক্রান্ত আইন পাস হওয়ায় সাম্প্রতিক এই নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের পুলিশও ক্রমেই শ্বেতাঙ্গ মার্কিন পুলিশের মত বর্ণবাদী  ও নৃশংস হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই কৃষ্ণকায় আফ্রিকান নাগরিকরা বিনা অপরাধে যেভাবে পুলিশের হাতে নিহত হচ্ছে ফ্রান্সেও আরব ও কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য একই পরিবেশ দেখা দিচ্ছে। দেখা গেছে ২০২০ সন থেকে ২০২২ সনে ফ্রান্সেও সাম্প্রতিক ঘটনাটির অনুরূপ নানা ঘটনায় ১৮ জন ফরাসি নাগরিক নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব। 

ফ্রান্সের কোনো কোনো খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ নায়েল হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশদের কঠোর শাস্তি বা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। চলমান সংকটের কারণে দৈনিক লা ফিগারোসহ বিখ্যাত কোনো কোনো ফরাসি সংবাদ মাধ্যম এ প্রশ্ন তুলেছে যে ফ্রান্সে কি গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে?

নানা ধরনের বিক্ষোভ ও গণ-অসন্তোষের মুখে বিব্রত ম্যাকরন সরকার আরও বেশি গণ-আক্রোশ সৃষ্টির মত কোনো পদক্ষেপ বা আগুনে ঘি ঢালার মত কোনো পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে হয় না। তাই ম্যাকরন নিহত কিশোরের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এ ঘটনাকে সাফাই দেয়ার অযোগ্য ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। ফরাসী প্রধানমন্ত্রীও উক্ত ঘটনায় পুলিশ আইন মেনে চলেনি বলে স্বীকার করেছেন। 

পুলিশি বর্বরতায় এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরাসি যুব সমাজ যে নজিরবিহীন সহিংস প্রতিবাদ জানাচ্ছে তা থেকে বোঝা যায় যে ইউরোপের এই দেশটিতে  বর্ণবাদ ও বৈষম্যসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার সংকট কত বেশি গভীর। আর ম্যাকরন সরকারের নানা নীতি ও পদক্ষেপ এইসব সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। # 

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।  

ট্যাগ