এপ্রিল ১১, ২০২৪ ১৭:৫২ Asia/Dhaka
  • ঔপনিবেশিকতার বিষবাষ্প: আর্জেন্টিনার দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটিশ দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে

ঔপনিবেশিকতার বিষবাষ্প আজও বিশ্বকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। এই বিষ বাষ্প পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বে শান্তি আসবে না। ঔপনিবেশিকতার বিষবাষ্পের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে ফেলতে আন্তর্জাতিক সমাজকে মালভিনাস, দক্ষিণ জর্জিয়া, দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ এবং এর আশেপাশের সমুদ্র অঞ্চলের উপর আর্জেন্টিনার সার্বভৌমত্বের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং জোর দিয়ে বলতে হবে, এসব দীপপুঞ্জ আর্জেন্টিনার ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর আর্জেন্টিনার ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই দ্বীপগুলোও ঔপনিবেশিকতার কবল থেকে মুক্ত হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পর ১৮৩০ সালের দিকে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা আর্জেন্টিনার কয়েকটি দ্বীপে আক্রমণ করে এবং সেখান থেকে আর্জেন্টিনার কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দীপপুঞ্জের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয় ফকল্যান্ড দীপপুঞ্জ।

এরপর থেকে আর্জেন্টিনার সরকার ও জনগণ তাদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু ব্রিটেন দ্বীপগুলো নিয়ে কোনও ধরণের আলোচনা শুরু করতেও রাজি হয়নি। ব্রিটেন অতীতের ঔপনিবেশিক আমলের মতো এখনও আর্জেন্টিনার দ্বীপপুঞ্জ দখলে রেখে উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে।

দক্ষিণ আটলান্টিক সাগরে অবস্থিত এই দীপপুঞ্জকে আর্জেন্টিনার সমুদ্রসীমার অন্তর্ভুক্ত বলে ২০১৬ সালে স্পষ্ট রায় দিয়েছে জাতিসংঘের মহীসোপানের (মহাদেশগুলির প্রসারিত পরিসীমা অঞ্চল) সীমা নির্ধারণকারী কমিশন। ঐ রায়ের ফলে আর্জেন্টিনার সমুদ্রসীমা আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ব্রিটেন জাতিসংঘের এই রায়কে তোয়াক্কা না করে দীপপুঞ্জে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং ঐ অঞ্চলে সামরিক মহড়াসহ উসকানিমূলক নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরকে সামরিকীকরণের অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রকল্প  নিয়ে এগোচ্ছে ব্রিটেন। এর অংশ হিসেবে দেশটি গত বছর থেকে আর্জেন্টিনার ঐ দ্বীপপুঞ্জের জন্য তৃতীয় একটি বাহিনীর অস্তিত্ব ঘোষণা করেছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দীপপুঞ্জের ওপর আর্জেন্টিনার মালিকানা ঘোষিত হওয়ার পরও ঐ দ্বীপপুঞ্জ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের মতো নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে লন্ডন।

আর্জেন্টিনা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে এবং যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্রিটেন আলোচনায় বসতে রাজি নয়।

ব্রিটিশরা দ্বীপপুঞ্জটির নাম দিয়েছে ফকল্যান্ড, কিন্তু ঐ অঞ্চলের মানুষ এই দ্বীপপুঞ্জকে মালভিনাস হিসেবেই চেনে। এই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে যুদ্ধের পর ৪০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার সরকার ও জনগণ তাদের সার্বভৌমত্বের দাবি থেকে সরে আসেনি।

ব্রিটেন দাবি করে, একজন ব্রিটিশ নাবিক এটি প্রথম ১৫৯২ সালে আবিষ্কার করেন এবং এর প্রায় এক শতাব্দী পর ১৬৯০ সালে প্রথম কোনো ব্রিটিশ ঐ দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে পা রাখেন।

মজার বিষয় হলো, ব্রিটেন সার্বভৌমত্বের দাবি প্রমাণ করতে 'ভূখণ্ড আবিষ্কার' শব্দাবলীর ঔপনিবেশিক বচন তুলে ধরছে যেন এর আগে সেখানে যারা ছিলেন তারা কোনো মানুষ নন এবং ব্রিটিশরা তাদেরকে আবিষ্কার করে বিশ্ব ও মানবতার কাছে ফিরিয়ে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মালভিনাস (ফকল্যান্ড) দ্বীপপুঞ্জ দখলের পেছনে ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য সেখানকার ম্যাজেলান প্রণালীকে নিয়ন্ত্রণ করা, যা বিশ্বের পাঁচটি কৌশলগত প্রণালীর একটি হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ঐ দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্বের দাবির ভিত্তিতে ব্রিটেন দক্ষিণ মেরুর একটি বড় অংশ এবং এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদের মালিকানায় ভাগ বসিয়েছে। সেখানে তেল এবং গ্যাস সম্পদও রয়েছে। 

মানচিত্রে ব্রিটিশ দখলে থাকা মালভিনাস (ফকল্যান্ড) দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। এর মাধ্যমে ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাজেলান প্রণালীর ওপর আধিপত্য করতে চায়। এটি মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বাকি অংশের মাঝে অবস্থিত। 

 

মালভিনাস (ফকল্যান্ড) দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে দুই দেশের বিরোধ অন্তত ২০০ বছরের পুরনো। এই দ্বীপপুঞ্জের আয়তন ১২ হাজার ১৭৩ বর্গকিলোমিটার। এতে রয়েছে ছোট ছোট ৭৭৬টি দ্বীপ। আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ড থেকে এটির দূরত্ব মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার। ব্রিটেন থেকে এর দূরত্ব ১৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি হওয়া সত্ত্বেও দ্বীপপুঞ্জটির দাবি করে আসছে লন্ডন।

বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ঔপনিবেশিক আচরণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে। এরই ধারাবাহিকতায় আশা করা যায় একদিন মালভিনাস (ফকল্যান্ড) দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার অবসান ঘটবে এবং দ্বীপগুলো তাদের আসল মালিককে ফিরে পাবে। তবে এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর সহযোগিতা  জরুরি।

ইরানও মালভিনাস (ফকল্যান্ড) দ্বীপপুঞ্জকে ব্রিটিশ আধিপত্য থেকে মুক্ত করার পক্ষে।  কারণ ইরান চায় বিশ্বে ঔপনিবেশিক আধিপত্য বিলীন হোক এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা পাক।#

পার্সটুডে/এসএ/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

 

ট্যাগ