এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১৯:৩৯ Asia/Dhaka
  • কুরআনের একটি আয়াত যা এই পৃথিবীর জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে

ইতিহাস জুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অভাব নিয়েই এই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে বা বিপদে পড়ছে। এক, মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিক মতো চিহ্নিত না করা। দুই, ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপজ্জনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কুরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যে কোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে। এখন আমরা জীবন সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর লেখা গ্রন্থ থেকে কিছু মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবো।

পবিত্র কুরআনের সূরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।'

এই আলোকিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এ ভাবে:

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এইঃ প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ। لَعِبٌ শব্দের অর্থ এমন খেলা, لَهْوٌ এমন খেলাধুলা, যার আসল লক্ষ্য চিত্তবিনোদন زِينَةٌ বা অঙ্গ-সজ্জা, পোশাক ইত্যাদির মোহ সর্বজনবিদিত। প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রথম অংশ ক্রীড়া অর্থাৎ لَعِبٌ এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এরপর لَهْوٌ শুরু হয়। এরপর সে অঙ্গসজ্জায় ব্যাপৃত হয় এবং শেষ বয়সে সমসাময়িক ও সমবয়সীদের সাথে وَتَفَاخُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ বা প্রতিযোগিতার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কুরআন পাক বলে যে, এই সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কুরআনের এই আয়াতে বলা হচ্ছে,

'মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং  তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়! '

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা, খেয়াল রাখবেন যেন ধোকায় না পাড়েন। আমরা যদি উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে  গর্বিত ও অহংকারী হয়ো না এবং যদি আমাদের পতন ঘটে বা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায় তবে তবে নিরাশ হইও না।

কোরান বিশ্বকে একটি খেলার জায়গা হিসাবে দেখে।  » ٱعقلموٓاْ انَّمَا الحَيَوٰةُ ٱلدُّنيَا لعبِ «। অবশ্য, দুনিয়ায় আরেকটি  ফাঁদ রয়েছে «وَلَهۡوٞ»  যার অর্থ দৈনন্দিন বিনোদন বা কৌতুক। আরেকটি ফাঁদ হচ্ছে সাজসজ্জা «وَزِینَةٞ»। এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

কুরআন এই পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে পৃথিবীর মানব জাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরেছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ